নেতা: বিরাট কোহালির অনুপস্থিতিতে পয়মন্ত ইডেনে আজ আকর্ষণ রোহিত শর্মা। নিজস্ব চিত্র
ইডেন আছে ইডেনেই, রবিবার সন্ধ্যায় এ কথা বোধহয় বলা যাবে না।
শনিবার দেখা গেল, আলো ঝলমলে ইডেনে ক্রিকেট আছে, পিচ নিয়ে জল্পনা আছে, দুই দলের মগ্ন অনুশীলন আছে, কর্তা-কর্মীদের ব্যস্ততাও আছে। নেই শুধু হইচই, আর টিকিটের হাহাকার। রবিবার সন্ধ্যায় বিরাট কোহালি বা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, কাউকেই দেখা যাবে না যে!
ভারতীয় ক্রিকেটের দুই জাদুকর, গ্যালারিতে ক্রিকেটপ্রেমীদের ঢল নামে যাঁদের টানে, তাঁরাই যখন মাঠে নামবেন না টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে, তখন আর মানুষ মাঠে আসবে কীসের টানে? ব্যাপারটা আন্দাজ করেই সিএবি-র এক শীর্ষকর্তা বললেন, ‘‘মেরেকেটে হাজার চল্লিশ দর্শক হবে বোধ হয়।’’
দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর মধ্যে ‘স্যান্ডুইচ’ হয়ে ইডেনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দফারফা হওয়ার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। ভারতের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের বছরে (২০১১) অক্টোবরের ভরা উৎসবের মরসুমে ভারত-ইংল্যান্ড ওয়ান ডে ম্যাচে ২৭ হাজার দর্শক হয়েছিল। এ বার সেই নজির ভেঙে যেতে পারে, এমন আশঙ্কাতেও আছেন অনেকে। সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বরাবরের মতোই আশাবাদী। ‘‘অন্তত ৫০ হাজার দর্শক আশা করছি। ধোনি, কোহালি নেই তো কী? অন্যরা তো আছে। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভাল দল। ভাল ম্যাচ হবে,’’ ক্লাব হাউসে দাঁড়িয়ে বললেন তিনি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে কার্লোস ব্রাথওয়েটের শেষ ওভারে চারটি ছয় হাঁকিয়ে চ্যাম্পিয়ন করার ঘটনার কথা ভেবে সৌরভ হয়তো এ কথা বললেন। কিন্তু বিশ্বসেরা হয়েও ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিং এখন সাত। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছিল জুলাই-অগস্টে। এপ্রিলে পাকিস্তানে গিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারে ০-৩। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে যায় ক্যারিবিয়ানরা। সেখানে ভারত এখন টি-টোয়েন্টিতে দু’নম্বরে।
এ দিকে যেমন ধোনি-কোহালি নেই, ও দিকেও তেমন ক্রিস গেল, ডোয়েন ব্র্যাভো, আন্দ্রে রাসেলরাও অনুপস্থিত। কলকাতা নাইট রাইডার্সের সমর্থকদের কাছে অন্যতম সেরা তারকা আন্দ্রে রাসেলের আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সিরিজ থেকে ছিটকে গেলেন। ক্রিকেট ভক্তদের আগ্রহ হয়তো আরও কম সে জন্যই। রবিবার সন্ধ্যায় ইডেন-গ্যালারির চেয়ে শহরের বাজি-বাজারে বেশি ভিড় থাকবে কিনা জানা নেই। তবে গ্যালারি ভর্তি না হলেও মাঠের লড়াইয়ে যে বারুদ ঠাসা থাকবে, তার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বললেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিপজ্জনক দল। এখনও টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এই ধরনের ক্রিকেটে সবচেয়ে শক্তিশালী দল। এগুলো আমাদের ভুললে চলবে না। ওদের হারাতে গেলে আমাদের সেরা খেলাটাই খেলতে হবে। তবে আমরাও একই রকম শক্তিশালী। তাই ব্যাটে-বলে লড়াইটা ভালই হবে।’’
আইপিএলের দৌলতে ভারতীয় তরুণ ক্রিকেটাররা এখন তীব্রতা ও চাপ সামলানোর তালিম পেয়ে যান। তা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁদের সত্যিই সাহায্য করে কি না, সেটা পরখ করে নেওয়া যাবে এই সিরিজে, মনে করেন অধিনায়ক রোহিত। শনিবার অনুশীলনে নামার আগে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চে যারা আছে, তারা কতটা কী করতে পারবে, তা পরখ করে নেওয়ার এটাই সময়। বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে অনেককে যেমন বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে, তেমনই অনেককে পরখ করার সুযোগও পাওয়া যাচ্ছে। যেমন শাহবাজ নাদিম এই প্রথম (সিনিয়র) দলে সুযোগ পেয়েছে। ক্রুণাল পাণ্ড্য দলে থাকলেও ম্যাচ পায়নি। ওদের দেখে নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে।’’
রবিবারের ম্যাচের জন্য ১২ জনের তালিকায় ক্রুণালকে রাখা হলেও নাদিম অবশ্য নেই। ইডেনের উইকেটে হাল্কা ঘাস দেখে দলে ভুবনেশ্বর কুমার ও যশপ্রীত বুমরা ছাড়াও রাখা হয়েছে বাঁ হাতি পেসার খলিল আহমেদকে। দুই স্পিনার কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চহালও আছেন। রোহিত ও শিখর ধওয়ন ওপেন করলে কেএল রাহুল নামবেন তিন নম্বরে। দীনেশ কার্তিক দলে থাকলেও কিপিং করতে দেখা যাবে হয়তো ঋষভ পন্থকেই। বাঁ হাতি অলরাউন্ডার ক্রুণাল প্রথম এগারোয় থাকলে পাঁচ বোলারে না-ও খেলতে পারে ভারত। সেক্ষেত্রে খলিল বা যুজবেন্দ্র চহালের মধ্যে যে কোনও একজনকে বসতে হতে পারে।
কোহালি নেই, ধোনি নেই। রোহিত বললেন, ‘‘এমএসের অভিজ্ঞতার অভাব তো অনুভব করবই। বছরের পর বছর দলকে অনেক কিছু দিয়েছে ও। এখন বিশ্রাম দেওয়ায় ঋষভ পন্থের মতো নতুনরা নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পাবে। ওরা সবাই ভাল খেলছে। বিশ্বকাপের আগে আমরা সব রকম রাস্তায় হেঁটে দেখে নিচ্ছি। ঋষভ, দীনেশরা কতটা কী করতে পারে দেখা যাক।’’