জল্পনা: রবিবার অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এমএস ধোনির মন্থর ব্যাটিং নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। চতুর্থ ওয়ান ডে তে হারল ভারত। ছবি: এএফপি
অ্যান্টিগায় রবিবার রাতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ব্যাটিং এবং ভারতের হার দেখার পরে একটা প্রশ্ন দেখছি খুব উঠছে। এই ধোনিকে কি ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ভারতীয় টিমে রেখে দেওয়া উচিত?
আমি একটা কথা পরিষ্কার বলে দিতে চাই। ধোনির ভূমিকা কিন্তু ভারতীয় দলে বদলে গিয়েছে। ধোনি এখন আর ফিনিশার নেই। দেখে মনে হচ্ছে, ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট এখন ওকে অন্য ভূমিকায় খেলাতে চায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে দেখছি, ধোনি মোটামুটি পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামছে। অর্থাৎ ওর ওপরে দায়িত্ব পড়ছে ইনিংসটাকে তৈরি করার।
রবিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অ্যান্টিগার ম্যাচটা দেখতে দেখতে বছর চারেক আগের একটা ম্যাচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। পোর্ট অব স্পেনের এ রকমই একটা স্লো পিচে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ভারতকে শেষ ওভারে তুলতে হতো ১৫ রান। হাতে এক উইকেট। সে দিন শেষ ওভারে ম্যাচ জিতিয়েছিল ধোনি। এ বার দু’ওভারে ১৬। শেষ সাত বলে ১৪। কিন্তু ৪৯তম ওভারের শেষ বলে একটা রান নিয়ে স্ট্রাইক রাখার চেষ্টায় গেল না গিয়ে ছয় মারার চেষ্টায় ধোনি আউট। ধোনির এ রকম স্ট্রাইক রেটও আগে দেখিনি। ৪৭.৩৬। ১১৪ বলে ৫৪ করল। মাত্র একটা বাউন্ডারি। ভারত ৫০ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করেও যে ১৯০ রান তুলতে পারবে না, এটা ভাবা যায় না।
সে জন্যই বলছি, এই ধোনিকে ফিনিশার হিসেবে দেখলে আর চলবে না। বছর দুই-তিন ধরে ধোনি আর ধারাবাহিক ভাবে ম্যাচ শেষ করতে পারছে না। খুচরো দু’একটা ম্যাচ হয়তো জেতাবে। কিন্তু একা ম্যাচ শেষ করার মানসিকতা আর দক্ষতা, দু’টোই ও ক্রমে হারিয়ে ফেলছে।
তা হলে কি ধোনিকে ছেঁটে ফেলার সময় এসেছে? আমি বলব, না। কারণ ফিনিশার না হয়েও এই ধোনির এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে ভারতকে। এমনিতে সব মিলিয়ে ও খারাপ খেলছে না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমরা দেখেছি, বিরাট কোহালি সমস্যায় পড়লেই কী ভাবে ধোনির কাছে ছুটে যেত। কোহালি তো এও বলেছিল, কেদার যাদবকে দিয়ে বল করানোর পরামর্শটা ধোনিই দিয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজেও একই কাজ করছে। কুলদীপ যাদবের মতো তরুণ স্পিনারদের প্রত্যেক ডেলিভারির আগে হিন্দিতে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে দিচ্ছে কোথায় বল ফেলতে হবে। ধোনির ক্রিকেট মস্তিষ্ককে কিন্তু দরকার কোহালির। তা ছাড়া ধোনি এখনও দারুণ ফিট।
আরও পড়ুন: রেকর্ড গড়ে বিপাকে ধোনি
আমার মনে হয়, নির্বাচকদের একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ওরা যদি মনে করে দু’বছর বাদে ধোনিকে (তখন বয়স হবে প্রায় ৩৮) দিয়ে আর চলবে না, তা হলে এখনই ওকে বসিয়ে দেওয়া হোক। যাতে নতুন প্রজন্মের ঋষভ পন্থ বা সঞ্জু স্যামসনরা সময় পায় তৈরি হওয়ার। তবে আমি যদি এখন নির্বাচক কমিটিতে থাকতাম, তা হলে কখনওই ধোনিকে বসিয়ে দেওয়ার পক্ষে ভোট দিতাম না। বরং, ওকে কয়েকটা ম্যাচে বিশ্রাম দিয়ে ঋষভদের খেলার সুযোগ দিতাম। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল করা আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল হওয়ার মধ্যে তফাত আছে। ঋষভরা আদৌ সেই চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি কি না, তার পরীক্ষাটাও হয়ে যেত।
আর একটা কথা বলব। নির্বাচক ছিলাম বলে জানি, সুপারস্টার ক্রিকেটারদের বিদায় জানানোর ক্ষেত্রে বোর্ড প্রেসিডেন্টের ভূমিকা খুব বেশি থাকে। ওপর থেকে সঙ্কেত না এলে নির্বাচকেরা কিছু করতে পারে না। আমি জানি না, এই মুহূর্তে ভারতীয় বোর্ডে সে রকম সঙ্কেত দেওয়র মতো কেউ আছে কি না। আমাদের সময় ছিল। একটা উদাহরণ দিই। আমরা মহম্মদ আজহারউদ্দিনকে ছেঁটে ফেলেছিলাম। কিন্তু নির্দেশটা এসেছিল একেবারে বোর্ডের ওপর মহল থেকে!