যুগলবন্দি। নয়াদিল্লিতে ধোনি-গেইল এক অনুষ্ঠানে। ছবি: পিটিআই
আইনি ফতোয়ায় এ বারের আইপিএলে তাঁর দল থাকছে না। আপাতত দু’বছরই নেই। কিন্তু সেই আইপিএল নিয়েই বলতে গিয়ে চেন্নাই সুপার কিঙ্গস অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি শোনালেন তাঁর ‘ক্রিকেটের মাধ্যমে একতা’র কথা!
ধোনির কথা বিশ্বাস করলে— যে কোনও দলগত খেলায় একতাই হল সাফল্যের চাবিকাঠি। ক্রিকেটে তো আরওই। এবং আরও বেশি ভারতীয় ক্রিকেটে। যে-হেতু এত বড় দেশের নানা প্রান্ত থেকে পনেরো জন ক্রিকেটার নিয়ে দল গড়া হয়। ফলে একতা আর বন্ধুত্ব বিশেষ-বিশেষ পরিস্থিতিতে আরওই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
‘‘যদি আপনি প্লেয়ারদের ঘনিষ্ঠ ভাবে চেনেন, তা হলে সেটা অবশ্যই সাহায্যের হয়। যেমন ধরা যাক, আপনি ব্যাট করছেন আর অন্য দিকে উইকেট পড়ল। তখন আপনি চাইলেন পরের ছ’টা বল নিজেই খেলবেন। যাতে নতুন ব্যাটসম্যান ক্রিজে এসেই অসুবিধেতে না পড়ে। থিতু হওয়ার সামান্য সময় পায়,’’ রাজধানীতে এক প্রচারমূলক অনুষ্ঠানে এ দিন বলছিলেন ধোনি। যেখানে ধোনির সঙ্গে মঞ্চ ‘শেয়ার’ করেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং ধামাকা ক্রিস গেইল।
ধোনি অবশ্য নিজের আগের বক্তব্যের রেশ ধরেই বলে চললেন, ‘‘তবে আপনি যে নিজেই পরের ছ’টা বল খেলবেন সেটা আপনার পার্টনারকে বলে বিশেষ লাভ নেই। তাই বলবেনও না। কেননা, সে তখন পাল্টা বলবেই, আরে ভয়ের কী? আমাকে নিয়ে ভয় পেও না। তবে সেটা তার বলার জন্যই বলা। কারণ, আপনি পার্টনারের চোখমুখ যদি সেই সময় দেখেন, অবশ্যই বুঝতে পারবেন, সে আপনার সিদ্ধান্তকে মনে মনে তারিফই করছে! এটাই খেলার মাঠে একতা। বন্ধুত্ব।’’
গেইল আবার তাঁর কিংবদন্তি জামাইকান বন্ধু, সর্বকালের সেরা স্প্রিন্টার উসেইন বোল্টের সঙ্গে ফোনে তাঁদের নানা চুটকির কথা শোনালেন। যা শুনে ধোনির মুচকি হেসে মন্তব্য, ‘‘আমি আবার ফোনালাপে খুব ভাল নই। আমার সত্যিকারের বন্ধুরা যেটা খুব ভাল জানে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, গেইল-ধোনির এ দিনের বেশির ভাগ গল্পই ছিল আইপিএলের! এবং তার সঙ্গত কারণও বোধহয় আছে। আইপিএলে শুধু ভারতের নানা প্রান্ত থেকেই নয়, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ক্রিকেটাররা ড্রেসিংরুম ‘শেয়ার’ করে থাকেন। বন্ধুত্বের সীমানা দেশজ থেকে আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠে।
এতটাই যে, ধোনি এ দিন স্বীকার করলেন, আইপিএলে তিনি অন্য দলের ভারতীয় প্লেয়ারদের সঙ্গেও খুব বেশি কথা বলেন না। ‘‘দেখুন, প্রথমত আমি একটু লাজুক ধরনের লোক। মাঠে আমি খুব বেশি কথা-টথা বলি না। এক-এক সময় তো অন্য টিমের ভারতীয় প্লেয়ারদের সঙ্গেও বেশি মাখামাখি করি না। জানি না বাবা, কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি টিমের কী গাইডলাইন আছে এ ব্যাপারে! আমি বল সীমানার বাইরে পাঠাতে পছন্দ করলেও নিজেকে সব সময় সীমার মধ্যেই বেঁধে রাখতে ভালবাসি।’’
গেইল আবার শোনালেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সে তাঁর মেজাজি অধিনায়কের সঙ্গে একটা ম্যাচে ক্রিজে কাটানোর কথা। ‘‘সেই ম্যাচটায় বিরাট ক্রিজে এসে আমাকে বারবার বলছিল, প্লিজ ধরে খেলো। কিন্তু আমি একটু পরেই মারতে গিয়ে আউট হয়ে যেতে কী বলব, নিজে এত বিরাট চেহারার এতটা লোক হয়েও কোহলির পাশ দিয়ে হেঁটে ডাগ আউটের ফেরার সময় ভয়-ভয় আমার ক্যাপ্টেনের দিকে তাকাইনি সে দিন! কোহলি তখন রাগে গরগর করছে। কিন্তু পরে দেখলাম, একদম শান্ত হয়ে গিয়েছে। উল্টে আমাকেই বলে দিল, খেলায় ভুলভ্রান্তি তো হতেই পারে!’’
গেইলও বললেন, আইপিএলই বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে বন্ধুত্ব বাড়িয়েছে। ‘‘যেমন মিচেল স্টার্ককে আমি আইপিএলেই চিনেছি। ড্রেসিংরুমে ও সম্পূর্ণ আলাদা প্লেয়ার। মাঠের মতো মোটেই গনগনে নয়। বরং একদম শান্ত। চুপচাপ।’’ তবে বেশির ভাগ অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার যে তাঁর পছন্দের নয়, সাফ বলে দিচ্ছেন গেইল। অ্যারন ফিঞ্চের সঙ্গে তাঁর ঝামেলার কথা উঠতে গেইলের শীতল গলায় জবাব, ‘‘ওকে একেবারে হাওয়া করে দেব!’’