বিধ্বংসী গাপ্টিল। শনিবার ওয়েলিংটনে। এএফপি-র ছবি।
বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ঢুকে পড়ল। আর তা নিয়ে প্রথমেই যেটা আমার মাথায় আসছে— এ বার কিছু ভাল স্ট্যান্ডার্ডের খেলা হোক এত বড় টুর্নামেন্টে।
কোয়ার্টার ফাইনালগুলোয় ক্রিকেটের মান বলা যায় পাঁচমিশেলি ছিল। কয়েকটা ক্ষেত্রে খুব হতাশজনকও। চারটে কোয়ার্টার ফাইনালেই জয়ের ব্যবধান যথেষ্ট বেশি। অস্ট্রেলিয়াকে জিততে অনেক লড়তে হয়েছে বলে চারদিকে শোনা যাচ্ছে, কিন্তু ওরাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছয় উইকেটে জিতেছে।
শনিবার ঘরের মাঠে আমার দেশও ফেভারিট ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। ভিভিয়ান রিচার্ডস, ব্রায়ান লারার মতো অতীতের ক্যারিবিয়ান গ্রেটরা তাদের দেশকে সমর্থনের পাশাপাশি জেতার ব্যাপারে আশাবাদী থাকলেও টিমটার বোলিং কোচ কার্টলে অ্যামব্রোজের মন্তব্য ছিল, ওদের ছেলেদের স্কিল থাকলেও পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব গত কয়েক বছর ধরে ডুবিয়ে চলেছে।
কথাটা কী সত্যি হয়েই না দেখা দিল ওয়েলিংটনে! ব্ল্যাক ক্যাপসের মানসিক কাঠিন্য এবং এই ক্যারিবিয়ান দলের ধারাবাহিকতার তীব্র অভাব গোটা ম্যাচে প্রকট হয়ে পড়ল। আর সেটাকে আরও স্পষ্ট করে তুলল যে কিউয়ি ব্যাটসম্যান, সেই মার্টিন গাপ্টিল তো এই মুহূর্তে বিশ্বকাপের নায়ক। ওর অনবদ্য ২৩৭ নট আউটের দাপটে নিউজিল্যান্ড চারশোর কাছাকাছি (৩৯৩-৬) পৌঁছে যাওয়ার পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আট রানের উপর স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করলেও ২৫০-র বেশি এগোতে পারেনি।
গাপ্টিলের প্রচুর বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি হিটের বাইরে ওর ব্যাটিংয়ে যে দুটো জিনিস আমার ভাল লেগেছে— এক) ওর ইস্পাত কঠিন মানসিকতা। যেটা এই পর্যায়ের নির্মম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্চের পক্ষে আদর্শ। দুই) একেবারে ঠিক সময়ে নিজের ব্যাটিং টেকনিকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে আবির্ভূত হওয়াটা। গাপ্টিল এখন আর আগের মতো ঝুঁকি নিয়ে পুল মারে না। যে রকম ঝুঁকিপূর্ণ শট ওর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের গোড়ার দিকে মারত গাপ্টিল।
বিশ্বকাপে একেবারে ঠিক সময়ে গাপ্টিলকে সেরা ফর্মে পাওয়া গেল। সেঞ্চুরির পরের ম্যাচেই ডাবল সেঞ্চুরি করল। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে ওর সেঞ্চুরিটা ছিল সতর্ক ভঙ্গিতে গুছিয়ে করা। যেটা নিউজিল্যান্ড রান তাড়া করার সময় ওর ব্যাটে এসেছিল। কিন্তু এ দিন অসহায় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলারদের বিরুদ্ধে হাত খুলে খেলেছে। ম্যাচের প্রথম ওভারে স্যামুয়েলসের ওকে ফেলে দেওয়ার পাপই যেন ক্যারিবিয়ান বোলাররা ভোগ করে গেল পরের ৪৯টা ওভার! গাপ্টিল আজ ওর প্রথম সেঞ্চুরি করা পর্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাটিংই করেছে। কিন্তু তার পর বিপক্ষ বোলিং আক্রমণকে একেবারে ছিঁড়ে ফেলেছে। আর পঁয়ত্রিশ ওভারের পর থেকে তো ও একেবারে অপ্রতিরোধ্য ছিল!
ইচ্ছে মতো বল মাঠের বাইরে উড়িয়েছে। ছক্কাগুলো যেন গাপ্টিল যখন ইচ্ছে তখন মেরেছে। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেসারদের ফুল পিচড্ ডেলিভারিতে। গাপ্টিলের ড্রাইভ মারার ক্ষমতা সবার খুব ভালই জানা আছে। এ দিনও ও বলের লাইনে এসে ওই রকম প্রচুর শট খেলেছে। যে শটগুলোর পিছনে নিখাদ পাওয়ারের চেয়ে অনেক বেশি ছিল নিখুঁত টেকনিক আর টাইমিং।
অথচ বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড দলে গাপ্টিলের ফর্ম নিয়েই দুশ্চিন্তা ছিল বেশি। এর আগেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সাত ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজে গাপ্টিল হোঁচট খেতে খেতে গিয়েছে। দুর্বল শ্রীলঙ্কান বোলিংয়ের বিরুদ্ধে মাত্র একটা হাফসেঞ্চুরি ছিল ওর। তার চেয়েও আতঙ্কের ছিল ওই সিরিজে ওর তিনটে শূন্য।
সে-ই এখন নিজের ব্যাটিং টেকনিক পাল্টে ফেলে এই মুহূর্তে ম্যান অব ওয়ার্ল্ড কাপ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভারে ৩৯৩-৬ (গাপ্টিল ২৩৭ ন.আ., রস টেলর ৪২; জেরোম টেলর ৩-৭১)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩০.৩ ওভারে ২৫০ (গেইল ৬১, বোল্ট ৪-৪৪)।