সফল: কমনওয়েলথ গেমসে অভিষেকেই রুপো মেহুলির। ছবি: পিটিআই
দূর্ভাগ্য অথবা ক্ষণিকের ভুল। যে ঘটনাই ঘটুক, জীবনের প্রথম কমনওয়েলথ গেমসে নেমে অল্পের জন্য সোনা জেতা হল না বাংলার মেহুলি ঘোষের। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে রুপো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল সপ্তদশী বঙ্গ কন্যাকে।
সিঙ্গাপুরের মার্টিনা লিন্ডসে ভেলোসোর সঙ্গে ফাইনালে সমান তালে লড়ছিলেন বৈদ্যবাটির মেয়ে বর্তমানে নিউ টাউনের বাসিন্দা মেহুলি। দুজনেরই তখন স্কোর ২৪৭.২। বোর্ডে তাঁর নাম যখন জ্বলজ্বল করছে এক নম্বরে, তখন সোনা জিতছেন ধরে নিয়ে মেহুলি রাইফেল নামিয়ে রেখেছিলেন পাশে। আর তাতেই মনঃসংযোগ নড়ে গিয়েছিল তাঁর। চ্যাম্পিয়ন বাছতে পরীক্ষকরা নিয়ম মেনে শুটআউটের নির্দেশ দেন। উত্তেজক লড়াইয়ের পর শেষ পর্বে এসে হেরে যান মেহুলি। শুটআউটে ভেলোসো মারেন ১০.৩। মেহুলি ৯.৯। বিজয়স্তম্ভ থেকে নামার পর সংবাদমাধ্যমের কাছে হতাশা গোপন করেননি বাংলা ও ভারতের অন্যতম সেরা শুটার মেহুলি। বলে দেন, ‘‘এটা আমার কাছে বড় শিক্ষা। বড় ভুল। স্কোরবোর্ডে আমার নাম এক নম্বরে ছিল। সোনা জেতা নিশ্চিত ভেবে রাইফেল নামিয়ে রেখেছিলাম। আমি প্রতিযোগিতায় এতটাই ডুবে ছিলাম যে, মনে রাখিনি শুটআউট আছে। তাতেই হয়তো মনঃসংযোগটা নড়ে গিয়েছিল। ভবিষ্যতে এটা মনে রাখব।’’ পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘‘পরের বার আরও তৈরি হয়ে আসব। আমি জানি এর চেয়ে ভাল ফল করতে পারি।’’
মেহুলির শুটার হিসেবে জীবনটাই আলো আঁধারিতে ভরা। ছোটবেলায় শ্রীরামপুরের একটি ক্লাবে অনুশীলন করতে গিয়ে তাঁর ছোড়া গুলি লেগেছিল এক জন লোকের গায়ে। তাঁকে পাঠাতে হয়েছিল হাসপাতালে। চার বছর আগে সেই ভুলের পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। ভেবেছিলেন, আর শুটিং-ই করা হবে না হয়তো। চার মাস পরে মানসিকভাবে তৈরি হয়ে ক্লাব বদল করে মেহুলি অনুশীলন শুরু করেন কলকাতার একটি অ্যাকাডেমিতে। যেখানে কোচিং করেন অলিম্পিয়ান জয়দীপ কর্মকার। জাতীয় প্রতিযোগিতায় নয়টি পদক পাওয়া মেহুলির পরের লক্ষ্য এশিয়াড। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের অপূর্বী চাণ্ডিলা ব্রোঞ্জ জেতেন।
মৌমা দাস-সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়ের মতো মেহুলি বাংলার সোনার মেয়ে হতে পারেননি। তবে রিও অলিম্পিক্সে ব্যর্থ হলেও সোনা জিতলেন জিতু রাই। ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে সোনা জিতে জিতুর মন্তব্য, ‘‘সত্যি কথা বলতে কী যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে আমার স্কোর খুব ভাল হয়নি। তবে নিজের উপর বিশ্বাস ছিল লড়াইতে ফিরবই। এর আগে এ রকম অবস্থায় আমি বহু ফাইনাল জিতেছি, অসংখ্য পদক পেয়েছি।’’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জয়ী জিতু উচ্ছ্বাসে ভাসতে ভাসতে যখন এসব বলছেন তখন তাঁকে ঘিরে ভিড়। কমনওয়েলথ গেমসের রেকর্ড (২৩৫.১ স্কোর) করে এর পর চ্যাম্পিয়নের মতোই জিতুর মন্তব্য, ‘‘দু’তিনটে খারাপ স্কোর হলে সেটা আমাকে নতুন করে উজ্জীবিত করে।’’
রয়েছে আরও কিছু সাফল্য। ভারতের হয়ে রুপো জেতেন ভারোত্তোলোক প্রদীপ সিংহ। তিনি তোলেন ৩৫২ কেজি। হাই জাম্পে ফাইনালে উঠলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন তেজস্বীন শঙ্কর। পাশাপাশি, বক্সিংয়েও শেষ আটে উঠলেন গৌরব সোলাঙ্কি ও মনীশ কৌশিক।