পুরস্কার পাল্টেছে। ছবি পাল্টায়নি। পরিবার ও বান্ধবীকে নিয়ে রোনাল্ডো। সোমবার জুরিখে। ছবি: রয়টার্স
বছর শেষ করেছিলেন ব্যালন ডি’অরে।
নতুন বছর শুরু করলেন ‘দ্য বেস্ট’ হয়ে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো মানেই এখন যেন ট্রফি আর গ্ল্যামারের প্যাকেজ। চতুর্থ ব্যালন ডি’অরের হ্যাংওভার পুরোপুরি কাটেওনি। তার মধ্যেই আবার পর্তুগিজ কিংবদন্তির বাড়তে থাকা ট্রফি ক্যাবিনেটের নতুন সংযোজন হল ফিফার ‘দ্য বেস্ট’ ট্রফি। আরও পরিষ্কার ভাবে বললে ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার।
সেরা হওয়ার দৌড়ে থাকা আঁতোয়া গ্রিজম্যান ও লিওনেল মেসিরকে পিছনে ফেললেন স্বপ্নের দু’হাজার ষোলোর সৌজন্যে। যেখানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ইউরো, প্রতিটা ট্রফি জিতেছিলেন রোনাল্ডো। উঠেছিলেন শ্রেষ্ঠত্বের চূড়োয়।
জুরিখে ‘দ্য বেস্ট’ অনুষ্ঠানের হলঘরে তখন উপস্থিত একের পর এক স্বপ্নের কিংবদন্তি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনা থেকে শুরু করে ২০০২ বিশ্বকাপের ‘ফেনোমেনো’ রোনাল্ডো। কে নেই? তাঁদের সামনে ‘দ্য বেস্ট’ ফুটবলারের পুরস্কার নিয়ে সিআর সেভেন বললেন, ‘‘গত বছরটা স্বপ্নের মতো কেটেছে। ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। দেশকে ইউরো জেতানো। সব কিছু পেয়েছি। তাই ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার হয়ে দারুণ লাগছে।’’
তবে অনুষ্ঠানে জাঁকজমক থাকলেও উত্তেজনা ছিল না। আগে ভাগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, কার হাতে ট্রফি উঠবে। গত কয়েক বছরে ফিফার বর্ষসেরা অনুষ্ঠান মানেই মেসি বা রোনাল্ডোর মধ্যে কে জিতবেন, সেটা নিয়ে থাকত টানটান উত্তেজনা। এ বারের অনুষ্ঠান সেই তুলনায় ব্যতিক্রম।
অনুষ্ঠান শুরুর আগেই যেন এক রকম সাদা পতাকা তুলে দিয়েছিলেন মেসি। ফ্যাকাসে মুখ করে প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে এক ফ্রেমে দাঁড়িয়ে থেকে ছবি তোলার যন্ত্রণাই হোক বা মঞ্চের ধারে বসে করুণ চোখে সহ্য করা— সঞ্চালক খাম খুলে বলছেন ‘দ্য বেস্ট’ রোনাল্ডো, এর থেকে যেন দূরে থেকে যেতে চাইলেন এলএম টেন।
সোমবার ফিফার বর্ষসেরার অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ঘণ্টা পাঁচেক আগেই বার্সেলোনা সরকারি বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয়, মেসি-সহ তাদের কোনও ফুটবলার অনুষ্ঠানে যাবেন না। কারণ সামনে অপেক্ষা করছে কোপা দেল রে ম্যাচে অ্যাথলেটিক বিলবাওর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ লড়াই। আর সেটার প্রস্তুতিতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
ফিফা বর্ষসেরার দৌড়ে গত ন’বছরের মতো এ বারও চূড়ান্ত তিনের মধ্যে ছিলেন মেসি ও রোনাল্ডো। তৃতীয় জনের নাম আঁতোয়া গ্রিজম্যান। ট্র্যাডিশন অনুযায়ী, বাকি আর কেউ যাক না যাক, চূড়ান্ত তিন ফুটবলার অবশ্যই উপস্থিত থাকেন। এ বারই ব্যতিক্রম ঘটল।
গ্রিন কার্পেটে জিদান-সহ র্যামোস, মার্সেলো— রিয়াল তারকার অবশ্য কমতি ছিল না। আর অবশ্যই সঙ্গে নীল স্যুট পরে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। রিয়াল কিংবদন্তি রবের্তো কার্লোস যেমন বললেন, ‘‘রিয়াল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। আমরা সেরা ক্লাব ঠিকই। তা বলে মেসি আসবে না! আমি বার্সার সিদ্ধান্তে হতাশ।’’
চব্বিশ ঘণ্টা আগেই ভিয়ারিয়ালের বিরুদ্ধে ছবির মতো ফ্রি-কিক নিয়ে দলকে ড্র করতে সাহায্য করেছেন এলএম টেন। কিন্তু ফিফার বর্ষসেরা অনুষ্ঠানে রাজপুত্রের অনুপস্থিতির পিছনে কারণ হিসেবে উঠে আসছে সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নাম। কিছু দিন আগেই এক স্প্যানিশ দৈনিকে আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিল সিআর সেভেনের হাতেই উঠবে ‘দ্য বেস্ট’ ফুটবলারের পুরস্কার। জনৈক ফুটবলভক্তদের মতে, জয়ের কোনও আশা নেই বলেই হয়তো অনুষ্ঠান বয়কট করলেন বার্সা মহাতারকা।
দিনের শেষে যা হওয়ার তাই হল। হাসিমুখে সবাইকে অটোগ্রাফ দিলেন রোনাল্ডো। ছেলে ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়র ও বান্ধবীর সঙ্গে ছবি তুললেন। আর সবশেষে নিজের নামের পাশে তকমাও বসিয়ে গেলেন ‘দ্য বেস্ট’।