ভরসা: সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করে ছন্দে অধিনায়ক যশ। বিসিসিআই
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে নতুন কীর্তি গড়েন যশ ধুল। বিরাট কোহলি, উন্মুক্ত চন্দের পরে তৃতীয় ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে সেঞ্চুরির মালিক তিনিই। অথচ এ বারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের পরে বাকি ম্যাচগুলোয় তাঁর খেলা নিয়ে ছিল সংশয়। করোনা আক্রান্ত হয়ে কোয়রান্টিনে চলে যেতে হয় যশকে।
ঘরবন্দি থাকাকালীন কোচকে ফোন করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তরুণ ব্যাটার। ছোটবেলার কোচ প্রদীপ কোচ্ছার তাঁর ছাত্রকে একটাই কথা বলেছিলেন, দিল্লি থেকে ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে কাপ নিয়ে ফেরার ইতিহাস গড়েছেন বিরাট ও উন্মুক্ত। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই যেন এগিয়ে চলেন তরুণ ব্যাটার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে কুয়ালা লাম্পুরে ২০০৮ সালে সেঞ্চুরি করেছিলেন বিরাট। কাপ নিয়ে ফিরেছিল ভারত। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন উন্মুক্ত। চ্যাম্পিয়ন হয় ভারতই। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ১১০ বলে ১১০ রান করে দলের ব্যাটিং বিপর্যয় রক্ষা করে ভাল জায়গায় পৌঁছে দেন যশ। ভারত এ বার ফাইনালে। শনিবার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। ছাত্রের সাফল্যে খুশি হলেও এখনই আত্মতুষ্ট হচ্ছেন না কোচ। বলছিলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, ও কিন্তু শুধুমাত্র সেঞ্চুরি করার জন্য বিশ্বকাপ খেলতে যায়নি। দেশকে ট্রফি এনে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছে। সেঞ্চুরির উৎসবে ভেসে গেলে শেষ ম্যাচে মনোনিবেশ করতে পারবে না। ওকে বলে দিয়েছি, একেবারে মাথা ঠান্ডা রেখে প্রস্ততি নিতে।’’
করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে যশ যে ভেঙে পড়েছিলেন, তা জানিয়ে দিলেন কোচ। বলছিলেন, ‘‘ভাবতেই পারেনি ও করোনা আক্রান্ত হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৮৪ রান করেছিল। সবে ওকে চিনতে শুরু করেছিল ক্রিকেটবিশ্ব। আক্রান্ত হওয়ার পরে কাঁদতে কাঁদতে ফোন করেছিল। ও বরাবরই বিরাটের ভক্ত। মাঠে বিরাট যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে দলকে নেতৃত্ব দিত, সেটা অনুসরণ করার চেষ্টা করে যশ। বিরাটের উদাহরণ দিয়ে ওকে বলেছিলাম, বাবার মৃত্যুর পরেও হার মানেনি বিরাট। দিল্লির হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলতে এসেছিল। ওকে বোঝাই যে এই রোগ সাময়িক। সময়ের সঙ্গেই ঠিক হয়ে যাবে। বলে দিয়েছিলাম, বিরাট, উন্মুক্তের মতো তোকেও কাপ নিয়ে ফিরতে হবে। এই কথাগুলো শুনে ওর মুখে হাসি ফিরে এসেছিল।’’
মাত্র ১১ বছর বয়সে জনকপুরীর ভারতী কলেজ অ্যাকাডেমিতে প্রদীপ কোচ্ছারের কাছে ক্রিকেটে হাতেখড়ি যশের। ছোট থেকেই দ্রুত রান তুলতে পছন্দ করতেন। মাঝের সারির ব্যাটার হিসেবে কঠিন পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ বার করে আনা অভ্যেসে পরিণত করে ফেলেছিলেন যশ। অনূর্ধ্ব-১৪ স্তর থেকেই রাজ্য দলকে নেতৃত্ব দেন। অনূর্ধ্ব-১৬ স্তরেও নেতৃত্ব দিয়ে ভাল জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন দিল্লিকে। অনূর্ধ্ব-১৯ স্তরে তাঁকেই অধিনায়ক বেছে নিয়েছিল তাঁর রাজ্য। কোচবিহার ট্রফি খেলতে না পারলেও ওয়ান ডে প্রতিযোগিতায় দু’টি হাফসেঞ্চুরি ছিল যশের। ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলে শুরুতে অধিনায়ক করা হয়েছিল শেখ রশিদকে। কিন্তু এশিয়া কাপের আগে যশের হাতেই নেতৃত্বের ব্যাটন তুলে দেওয়া হয়।
যশের বাবা বিজয় সিংহ ধুল চাইতেন, ছেলে ক্রিকেট খেলুক। পড়াশোনায় কখনওই জোর দেননি। এমনকি প্রত্যেক দিন ছেলেকে প্র্যাক্টিসে নিয়ে যাওয়ার ফলে চাকরি ছাড়তে হয় তাঁকে। ঠাকুরদার পেনশনে সংসার চলত এক সময়। শেষমেশ ছোট একটি ব্যবসা দিয়ে সংসারের হাল ধরেন যশের বাবা। বলছিলেন, ‘‘ওর সেঞ্চুরির পরে অজান্তেই চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে গিয়েছিল। মনে পড়ছিল সে সব দিনের কথা, যখন ছেলেকে প্র্যাক্টিসে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাকরি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল আমাকে। ছেলেকে বলেছিলাম, তোকে ক্রিকেটার হতেই হবে। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব।’’ বলতে বলতে গলা ধরে এল যশের বাবার।
যশের কোচের মুখে আরও একটি তথ্য পাওয়া গেল। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগেই নাকি যশের সঙ্গে কথা হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স কর্তৃপক্ষের। প্রদীপের কথায়, ‘‘যশ বলছিল কেকেআর থেকে নাকি ওকে ফোন করা হয়েছে। কী কথা ওদের মধ্যে হয়েছে জানি না। তবে বলছিল, নিলামে হয়তো কেকেআর ওর জন্য ঝাঁপাতে পারে।’’
বিষয়টি আশ্চর্য হওয়ার মতোও নয়। শুভমন গিল, কমলেশ নগরকোটি, শিবম মাভিরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে নাইট শিবিরই তাঁদের আপন করে নিয়েছিল। যশের সঙ্গেও সে রকম কিছু হবে না, কে বলতে পারে?