নজরে: কোচ লক্ষ্মীরতনের সঙ্গে ঋদ্ধি। ইডেনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
ইডেনে বুধবার সকালটা তাঁর কাছে সাধারণ দশটা দিনের মতোই। অথচ তাঁকে ঘিরে বইতে থাকা আবেগের স্রোতে গা ভাসাচ্ছেন না ঋদ্ধিমান সাহা।
আজ, বৃহস্পতিবার থেকে রঞ্জি ট্রফিতে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে চলতি মরসুমে হয়তো শেষ বারের মতো নামবেন বহু যুদ্ধের আদর্শ সৈনিক ঋদ্ধিমান। খাতায়-কলমে এখনও পরের পর্বে যাওয়ার স্বপ্ন বেঁচে রয়েছে বাংলার। তারকাহীন পঞ্জাব নামবে নিতান্ত নিয়মরক্ষার ম্যাচে। এখন ৬ ম্যাচে ১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলা। পরের পর্বে যেতে হলে শুধু পঞ্জাবের বিরুদ্ধে বোনাস পয়েন্ট নিয়ে জিতলেই চলবে না, প্রার্থনা করতে হবে যেন বিহার অঘটন ঘটিয়ে কেরলকে হারিয়ে দেয়। কর্নাটকও যেন হরিয়ানার বিরুদ্ধে হেরে যায় বা সেই ম্যাচ ড্র হয়।
পেশাদার জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসেও কি কোথাও চোখের কোণটা চিকচিক করছে না? তাঁর জবাব, “আমি ছোট থেকেই আবেগপ্রবণ নই। তাই আলাদা কোনও অনুভূতি হচ্ছে না। ১৮ বছর ধরে প্রত্যেক দিন সকালে উঠে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। সেটা আর করতে হবে না।” ঘাড়ের চোটের জন্য দল থেকে ছিটকে গিয়েছেন জোরে বোলার মুকেশ কুমার। তাঁর পরিবর্তে সুযোগ পাচ্ছেন সুমিত মোহন্ত। অভিষেক হবে বিশাল ভাটির। ওপেনিংয়ে নেই ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়। গত ম্যাচে দু’ইনিংসে তিনি ব্যর্থ হন। তাই চোট সারিয়ে ফেরা সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওপেন করবেন অঙ্কিত চট্টোপাধ্যায়। এ দিন সুস্থ হয়ে পুরোদমে অনুশীলন করেছেন অভিষেক পোড়েলও।
সব কিছু ছাপিয়ে নজরে এখন ঋদ্ধিমান সাহা। তাঁর কথাতে নেই কোনও বিস্ফোরক উক্তি, বরং রয়েছে প্রাপ্তির আনন্দ। বললেন, “আমার কাছে সবার আগে দলের স্বার্থ। দলের চাহিদা অনুযায়ী চিরকাল নিজেকে মেলে ধরেছি, বৃহস্পতিবারও তার অন্যথা হবে না।” ক্রিকেট ছাড়ার পরে তাঁর কাছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সহকারী কোচ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি প্রস্তুত নন বলে দায়িত্ব নিতে চাননি। বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল রাতে ফোনে বললেন, “ঋদ্ধি প্রথম ইনিংসে উইকেটের পিছনে দাঁড়াবে। হয়তো দ্বিতীয় ইনিংসের শেষ দিকেও কয়েক ওভার দাঁড়াবে।”
শুধু নিজেদের জন্যই নয়, ভাল খেলে ঋদ্ধিকে সেই জয় উৎসর্গ করার কথাও উঠে এল লক্ষ্মীর কথায়। তাঁর অধিনায়কত্বেই বাংলা দলে অভিষেক ঘটেছিল ঋদ্ধির। তাই কোচের খোলস থেকে বেরিয়ে তিনি কি নিজেও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন? একটু ভেবে বাংলার কোচের উত্তর, “ওকে নিয়ে সারাজীবন আবেগ থাকবে। বিশ্বের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক।”
কল্যাণীতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল বাংলা। তাই বুধবার ব্যাটিংয়ে বিশেষ জোর দিয়েছেন অনুষ্টুপ মজুমদার, অভিষেক-রা। বাংলা দল মারফৎ জানা যাচ্ছে, ভারত বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচের পিচেই তাদের খেলতে হবে। সেই পিচে অনেকটাই ঘাস রয়েছে।
সিএবি কর্তাদের থেকে জানা গেল, প্রথম দিনে তাঁরা আলাদা কোনও আয়োজন করেননি। হয়তো চতুর্থ দিন কোনও বিশেষ আয়োজন দেখা যেতে পারে। রঞ্জি ট্রফির পরে এক দিন ঋদ্ধিকে সংবর্ধান দেওয়ার কথা চললেও এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এত জৌলুসহীন ম্যাচ খেলে অবসর? ঋদ্ধির কথায়, “কখনওই প্রচারের আলোয় থাকার কথা ভাবিনি। তাই এতেই খুশি।” ইডেনে ঋদ্ধির মা-বাবা আসার কথা ছিল। তাঁর মা পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছেন। তাই হয়তো শুধু
বাবা থাকবেন।
বিদায়বেলায় যেন ঋদ্ধির ব্যাট ও গ্লাভস কথা বলে, এটাই বাংলার জনতার আগামী চার দিনের প্রার্থনা।
বৃহস্পতিবার রঞ্জি ট্রফিতে: বাংলা বনাম পঞ্জাব, সকাল ৯টা থেকে। জিয়ো সিনেমা অ্যাপে।