অবসরের ঘোষণা করতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না তামিম ইকবাল। ছবি: টুইটার
বুধবার রাত থেকেই কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন সাংবাদিকেরা। কারণ, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ়ের মাঝেই হঠাৎ সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন তামিম ইকবাল। বৃহস্পতিবার সেই অনুমানই সত্যি হল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন বাংলাদেশের এক দিনের ক্রিকেটের অধিনায়ক। আর সে কথা বলতে গিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলেন তিনি। হঠাৎ কেন অবসর? তামিম বুঝিয়ে দিয়েছেন দীর্ঘ দিন ধরেই ক্ষোভ, অভিমান জমছিল। আর পারছিলেন না তিনি। প্রথমে বলেন, কারণগুলি এই সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলতে চান না। পরে সরে যাওয়ার কারণ প্রায় প্রকাশ্যে এনে ফেলেছিলেন। কিন্তু তখন তিনি এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন, আর কথা বলতে পারেননি।
চট্টগ্রামের একটি হোটেলে সাংবাদিক বৈঠকে তামিম যখন এসে বসেন, তখন শুধুই ক্যামেরার ঝলকানি আর শাটারের শব্দ। অন্য কিছু শোনা যাচ্ছিল না। তার মাঝেই তামিম বলেন, ‘‘এটাই আমার শেষ। আমি নিজের সেরাটা দিয়েছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম এক দিনের ম্যাচই আমার শেষ ম্যাচ ছিল।’’ এরপর তিনি বলেন, ‘‘আমি হঠাৎ করে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। অবসরের পিছনে অনেক কারণ আছে। সে সব এখানে বলতে চাই না। পরিবারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছি। অনেক ভেবেছি। আমার মনে হয়েছে, এটাই অবসর নেওয়ার সঠিক সময়।’’
অবসরের কথা জানাতে গিয়ে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারছিলেন না তামিম। বার বার কেঁদে ফেলছিলেন। মাঝেমাঝে মাথা ঝুঁকিয়ে টুপির আড়ালে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পারছিলেন না। বলেন, ‘‘আমার অনেক কিছু বলার আছে। কিন্তু আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন যে কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই আমি। আশা করছি আপনারা বুঝতে পারছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া সহজ নয়।’’
অবসরের কারণ নিয়ে মুখ না খুলেও কি অনেক কিছু বলে গেলেন তামিম? তাঁর কথা থেকে স্পষ্ট, খুব কষ্টে অবসর নিচ্ছেন। নইলে আগে থেকেই সেটা বলে দিতেন। এ ভাবে সিরিজ়ের মাঝপথে বলতেন না। সাংবাদিক বৈঠকে যে ভাবে তিনি কাঁদলেন, তাতে বোঝা গেল, নিজের সব থেকে প্রিয় জিনিসটা থেকে দূরে সরতে কতটা কষ্ট হচ্ছে তাঁর। নইলে তিনি কেন বলবেন, ‘‘আমি নিজের সেরাটা দিয়েছি। সত্যিই সেরা দিয়েছি। হতে পারে সেটা যথেষ্ট নয়। হতে পারে আমি ততটা ভাল নই। কিন্তু যখনই মাঠে নেমেছি নিজেকে ১০০ শতাংশ উজাড় করে দিয়েছি।’’
তাঁর অবসর নিয়ে যেন কোনও বিতর্ক না হয় সেই অনুরোধও করেছেন বাংলাদেশের হয়ে এক দিনের ক্রিকেটে সর্বাধিক রানের মালিক। কারণ, তাঁর কাছে ব্যক্তির থেকে দেশ অনেক আগে। তামিম বলেন, ‘‘দয়া করে এই ঘটনা নিয়ে আর বিতর্ক বাড়াবেন না। এই বিষয়কে এখানেই শেষ করে দিন। আমি সব সময় বলেছি, দেশ অনেক আগে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পাশে থাকুন।’’ তামিমের এই কথাও কি কোনও ইঙ্গিত দিয়ে গেল! কেন তিনি বিতর্ক বাড়াতে নিষেধ করলেন। তা হলে কি সত্যিই এই সিদ্ধান্ত বিতর্কিত! জল্পনা কিন্তু রয়েই গেল।