২০১১ সালের জুন মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তাঁদের ঘরের মাঠ কিংস্টোনে ভারতীয় টেস্ট দলে অভিষেক ঘটে বিরাট কোহলীর। তার পর পাড়ি দিয়েছেন অনেকটা পথ, ছুঁয়েছেন বহু মাইলফলক। ২০২২ সালের ৪ মার্চ কোহলীর মুকুটে জুড়ল আরও একটি পালক। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলতে নামলেন কেরিয়ারের শততম টেস্ট ম্যাচ।
কেরিয়ারের প্রথম টেস্ট ম্যাচে তাঁর পারফরম্যান্স তেমন মারকাটারি কিছু ছিল না। সেই ম্যাচে বিশেষ রান পাননি কোহলী। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে করেন ৪ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে একই জায়গায় ব্যাট করতে নেমে করেন ১৫ রান। তিনি রান না পেলেও ভারতের জিততে কোনও অসুবিধা হয়নি। ৬৩ রানে ম্যাচ জিতেছিল ভারত।
ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৪০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১১২ রান করে ভারতের জেতার রাস্তা মসৃণ করে দিয়েছিলেন। ওই বছরের অগস্ট মাসে তিনি এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ২০১২ সালে। খেলেছেন মোট ১৬৪টি ম্যাচ। তার পর আরও এক বছর তিনি রাজস্থান রয়্যালসের হলে খেলা চালিয়ে যান।
২০১৩ সালে আইপিল থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি রাজস্থানের মেন্টর হন। তার পর তিনি জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান ও অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। দ্রাবিড়ের তত্ত্বাবধানেই ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতে ভারত। ভারতীয় এ দলের কোচের পদেও ছিলেন তিনি। বর্তমানে দ্রাবিড় ভারতীয় দলের কোচ।
সে দিনের ম্যাচে ওপেন করেছিলেন তামিলনাড়ুর ক্রিকেটার অভিনব মুকুন্দ। প্রথম ইনিংসে ১১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫ রান করেন। ম্যাচে বিশেষ দাগ কাটতে পারেননি। ভারতের হয়ে শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৭ সালে। এখনও পর্যন্ত মোট ৭টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। বর্তমানে তামিলনাড়ুর হয়ে ঘরোয়া ম্যাচ খেলেন মুকুন্দ।
ওপেনিংয়ে অভিনব মুকুন্দের সঙ্গী ছিলেন তামিলনাড়ুর আর এক ক্রিকেটার মুরলী বিজয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচে দাগ কাটতে ব্যর্থ হন বিজয়। প্রথম ইনিংসে ৮ ও দ্বিতীয় ইনিংসে করেন শূন্য রান। শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৮ সালে। দেশের হয়ে খেলা ৬১ টেস্টে বিজয়ের সংগ্রহ ৩৯৮২ রান। এক দিনের আন্তর্জাতিক খেলেছেন মাত্র ১৫টি। টি২০ আন্তর্জাতিক খেলেছেন ৯টি। আইপিএলে খেলেছেন ১০৬টি ম্যাচ। ২০২২-এর নিলামে অবিক্রিত থেকে যান বিজয়। তামিলনাড়ুর হয়ে ঘরোয়া ম্যাচে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সুবিধে করতে পারেননি ভিভিএস লক্ষ্মণও। ছাপ ফেলতে ব্যর্থ হন দুই ইনিংসেই। ভারতের হয়ে মোট ১৩৪টি টেস্টে প্রতিনিধিত্ব করেন লক্ষ্মণ। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট খেলে অবসর ঘোষণা করেন। অবসরের পর বেশ কিছু দিন থাঁকে ধারাভাষ্যকার হিসেবে দেখা গিয়েছিল। আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দেরাবাদের মেন্টর হিসেবেও কাজ করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান।
ছয় নম্বরে আসেন সুরেশ রায়না। পর পর উইকেট পরে যাওয়ায় মিডল অর্ডারে দলের হাল ধরেন। প্রথম ইনিংসে করেন গুরুত্বপূর্ণ ৮০ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ২৭ রান। ছয় ওভার হাত ঘুরিয়ে একটি উইকেটও পান। দেশের হয়ে খেলেছেন ১৮টি টেস্ট, মোট সংগ্রহ ৭৬৮ রান।
টেস্ট টিমে ধারাবাহিক না হলেও আন্তর্জাতিক এক দিন ও টি২০ দলে রায়না ছিলেন নিয়মিত। আইপিলে বেশির ভাগ ম্যাচই তিনি খেলেছেন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। রায়নাকে ডাকা হয় ‘মিস্টার আইপিল’ বলে। আইপিএলে ২০৫টি ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৫ হাজার ৫২৮ রান। ২০২২ সালের আইপিল নিলামে অবিক্রিত থেকে গিয়েছেন তিনি।
২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালের শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অসাধারণ পারফম্যান্সের পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ওপর ছিল সব নজর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিনি নামেন সাত নম্বরে। প্রথম ইনিংসে কোনও রান না করেই আউট হয়ে যান। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১৬ রান। দেশের হয়ে খেলেছেন ৯০টি টেস্ট। তার মধ্যে ৬০টি টেস্টেই তিনি ছিলেন অধিনায়ক।
ভারতের সেরা অধিনায়কদের মধ্যে অন্যতম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বর্ডার-গাওস্কর সিরিজ চলাকালীনই তিনি আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন। ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক এক দিন এবং টি২০ ক্রিকেট থেকেও অবসর ঘোষণা করেন। কিন্তু এখনও আইপিলে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন ধোনি। এ বছর চেন্নাই তাঁকে ১৬ কোটি টাকা দিয়ে ধরে রেখেছে।
আট নম্বরে নেমে দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটি খেলেন ‘টার্বুনেটর’ হরভজন সিংহ। প্রথম ইনিংসে করেন ৭০ রান, বল হাতে ৫১ রান দিয়ে উইকেট পান দু’টি। দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিন ৫ রান এবং একটি উইকেট নিয়েছিলেন। ১০৩টি টেস্টে তিনি দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। উইকেট সংখ্যা ৪১৭। হরভজন টেস্টে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ২০২১ সালে তিনি সব রকম ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁকে এখন ধারাভাষ্যকার হিসেবে দেখা যায়।
নয় নম্বরে নামা প্রবীণ কুমার ব্যাট হাতে বিশেষ অবদান রাখতে না পারলেও বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। দু’টি ইনিংসে তিনটি করে ম্যাচে মোট ছয় উইকেট নিয়েছিলেন। দেশের হয়ে ৬টি টেস্ট খেলেছেন প্রবীণ। তিনটি ফরম্যাট মিলিয়ে মোট ২০৩টি ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৮ সালে তিনি অবসর ঘোষণা করেন। তাঁর নিজস্ব একটি রেস্তরাঁ রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের আগে তিনি রাজনীতিতে নামেন। যোগ দেন সমাজবাদী পার্টিতে।
দশ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন অমিত মিশ্র। ব্যাট হাতে দুই ইনিংসে তাঁর সংগ্রহ যথাক্রমে ৬ এবং ২৮। দু’টি ইনিংসে মোট উইকেট শিকার ৪। মিশ্র ২২টি টেস্টে ৩৫.৭ গড়ে ৭৬টি উইকেট নিয়েছেন। ২০১৬ সালে তিনি দেশের হয়ে শেষ টেস্ট খেলেছেন। অমিত মিশ্র এখনও হরিয়ানার ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভাবে খেলে যাচ্ছেন। আইপিএলে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি (১৬৬) তিনি।
এগারো নম্বরে নেমে ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে না পারলেও বোলিংয়ে পুষিয়ে দিয়েছিলেন ইশান্ত শর্মা। ম্যাচে মোট ছ’টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এখনও পর্যন্ত মোট ১০৫টি টেস্টে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ইশান্ত। ২০১১ সালের বিরাট কোহলীর প্রথম টেস্টের ১১ জনের মধ্যে কোহলী এবং ইশান্ত শর্মাই এখনও ধারাবাহিক ভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন।