লর্ডস টেস্টে একটি উইকেটের পর উচ্ছ্বাস উসমান খোয়াজা (বাঁ দিকে) এবং স্টিভ স্মিথের। ছবি: রয়টার্স
লর্ডসের লং রুমে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে এমসিসি সদস্যদের বাদানুবাদ নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক চর্চা হয়েছে। সম্প্রতি সেই ঘটনার একটি নতুন ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ওই দিন দর্শকদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিলেন উসমান খোয়াজা। জনি বেয়ারস্টোর আউটের পরেই এই ঘটনা ঘটেছিল।
ওই নতুন ভিডিয়োয় আরও একটু ভাল ভাবে দেখা গিয়েছে যে সে দিন কী হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার এক দৈনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খোয়াজাকেই আক্রমণের নিশানা করেন এমসিসির সদস্যেরা। তাঁকে উদ্দেশ্য করেই বিভিন্ন কটূক্তি উড়ে আসে। সেই শুনেই নিরাপত্তারক্ষীদের ডাকতে থাকেন খোয়াজা। পরে এক সমর্থকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। নিরাপত্তারক্ষীদের উদ্দেশে কিছু সমর্থককে চিহ্নিত করে উপরে উঠে যান খোয়াজা।
লর্ডসের লং রুমকে ক্রিকেট ঐতিহ্যের শেষ কথা বলা হয়। এমসিসি-র হোমরাচোমরারা এখানে বসে খেলা দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ক্রিকেটারদের সাজঘরে ফিরতে বা সাজঘর থেকে নামতে হলে লং রুমের ভিতর দিয়ে করতে হয়। মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের আক্ষরিক অর্থে সভ্যরা কোনও দিনই ব্র্যাডম্যান, বর্ডার, বয়কট, ব্রিয়ারলিদের এত কাছে পেয়েও আদেখলাপনা দেখাননি। এখনও স্টোকস, স্মিথদের পেয়ে দেখান না। কিন্তু এ বার যে বডিলাইন সিরিজের দ্বিতীয় সংস্করণ। বেয়ারস্টোর আউট মেনে নিতে পারেননি সভ্য ইংরেজরা। অভিযোগ, লং রুম দিয়ে অস্ট্রেলিয়া দল যখন ফিরছিল, তখন চিৎকার করে তাঁদের ‘চোর, প্রতারক’ ইত্যাদি সম্বোধনে ডাকতে থাকেন ইংরেজ সমর্থকেরা। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা প্রথমে তাতে বিশেষ পাত্তা দেননি। কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে উঠে লং রুমে ঢোকার পরেই বিপত্তি ঘটে। সেখানে এমসিসি-র যে সব সদস্য ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েক জন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের উদ্দেশে আরও কিছু বলেন। ওয়ার্নার এবং খোয়াজা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। তাঁরা পাল্টা দেন। শুরু হয়ে যায় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। ঝামেলা থামাতে এগিয়ে আসতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। তাঁরা ওয়ার্নার, খোয়াজাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। ওই সমর্থকদের থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার পরে চুপ থাকেনি অস্ট্রেলিয়া। একটুও সময় নষ্ট না করে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড এই ঘটনার তদন্তের দাবি করে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একটি বিবৃতিতে জানায়, ‘‘লর্ডস টেস্টের পঞ্চম দিন লং রুমে দর্শকদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের যে বিবাদ হয়েছে তার নিন্দা করছি আমরা। মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের কাছে আবেদন করছি, ঘটনার তদন্ত করা হোক। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের হেনস্থা করা হয়েছে। ধাক্কা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’
এই ঘটনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তখনই জানিয়েছিল এমসিসি। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিল তারা। একটি বিবৃতিতে এমসিসি বলেছিল, ‘‘লং রুম লর্ডসের ঐতিহ্য। পঞ্চম দিন সকালের পর থেকে মাঠের উত্তাপ গ্যালারিতে ছড়িয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এমসিসি-র কয়েক জন সদস্য অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। তার জন্য আমরা অস্ট্রেলিয়া দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
তার পরেই পদক্ষেপ করে এমসিসি (মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব)। তাদের তিন সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়। এই ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত লর্ডসে ঢুকতে পারবেন না ওই তিন সমর্থক। এমসিসি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘লর্ডসের ঘটনায় তিন সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের বরখাস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখন লর্ডসে ঢুকতে পারবেন না ওই তিন সমর্থক। তদন্ত শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’’ মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের চিফ এগজিকিউটিভ গায় ল্যাভেন্ডার জানিয়েছেন, লর্ডসের মতো ঐতিহ্যশালী স্টেডিয়ামে কোনও ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।