T20 World Cup 2022

ক্রিকেটেও ফোরহ্যান্ড! বিশ্বকাপে নাদাল, জোকোভিচকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন সূর্য, বাটলাররা

রাফায়েল নাদাল বা নোভাক জোকোভিচের হাত থেকে যে ফোরহ্যান্ড বেরোয়, সেই একই জিনিস বিভিন্ন ক্রিকেটারের শটে দেখা যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে তত জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৫৩
Share:

বাটলারদের এই ফোরহ্যান্ড শটই আলোচনার কেন্দ্রে। ফাইল ছবি

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড থেকে রড লেভার অ্যারেনার দূরত্ব মেরেকেটে দুই কিলোমিটার। বছরের গোড়ার দিকে প্রতি বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সময় সেই এলাকা গমগম করে। আর কয়েক মাস পরেই দেখা যেতে চলেছে সেই দৃশ্য। তবে তার আগেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে টেনিসের। রাফায়েল নাদাল বা নোভাক জোকোভিচের হাত থেকে যে ফোরহ্যান্ড বেরোয়, সেই একই জিনিস বিভিন্ন ক্রিকেটারের শটে দেখা যাচ্ছে। বোলারকে আক্রমণ করতে হঠাৎ করেই ফোরহ্যান্ডের মতো শট খেলতে দেখা যাচ্ছে ব্যাটারদের।

Advertisement

বিশ্বকাপে এই শট শুরু করেছেন জস বাটলার। নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে লকি ফার্গুসনের বলে ফোরহ্যান্ড মারার ধাঁচে বল সীমানার বাইরে পাঠাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বাটলার নিজে যুব পর্যায়ে টেনিস খেলেছেন ইংল্যান্ডে। ফার্গুসন স্লো বাউন্সার দিয়েছিলেন। বাটলার বলের জন্য অপেক্ষা করেন। ফোরহ্যান্ড মারার ভঙ্গিতে মিড অনের উপর দিয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠান তিনি। শটটা দেখতে অনেকটা ক্রস কোর্ট ফোরহ্যান্ডের মতো ছিল। তার পরে একই কায়দায় ট্রেন্ট বোল্টকে বাউন্ডারিতে মারেন।

শুধু বাটলার একা কেন, ভারতেও রয়েছেন এমন একজন। কোনও সন্দেহ নেই যে তাঁর নাম সূর্যকুমার যাদব। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে অনরিখ নোখিয়াকে এমন একটি শট মেরেছেন, যা টেনিসের ফোরহ্যান্ডকেই মনে করিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সূর্যকুমার প্রতি ম্যাচেই শট মারার ব্যাপারে উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। কখনও ল্যাপ স্কুপ, কখনও সুইপ, তাঁর ব্যাট থেকে একের পর এক শটের বৈচিত্র হয়েই চলেছে। এমনকি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যে শট মেরে বিখ্যাত, সেই হেলিকপ্টার শটও রপ্ত করে নিয়েছেন সূর্য।

Advertisement

তবে টেনিসের তুলনায় ক্রিকেটের ফোরহ্যান্ড শট খেলা কিন্তু বেশ শক্ত ব্যাপার। টেনিসে দু’পা ছড়িয়ে অনেকটা ওপেন স্টান্স নিয়ে দাঁড়ানো যায়। সার্ভিসের ক্ষেত্রে ফোরহ্যান্ড মারার জন্য অনেক জায়গা পাওয়া যায়। কিন্তু ক্রিকেটে বেশির ভাগ খেলোয়াড়েরই দু’পা জোড়া থাকে। ফোরহ্যান্ড যে ভাবে খেলা হয়, সেই শট মারার জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে না। যাঁরা মূলত ওপেন স্টান্সে খেলেন, তাঁদের কাছে এই শট মারা সুবিধা। বাকিদের ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। তা ছাড়া, টেনিসে বলের উচ্চতা থাকে কোমরসমান। ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে প্রায় বুকের কাছাকাছি উচ্চতায় বল আসে।

টেনিসের এই শটের সঙ্গে ক্রিকেটের অনেক সাদৃশ্যও রয়েছে। টেনিসের ক্ষেত্রে, বল মারার সময় হাত সোজা থাকে এবং বলের সঙ্গে র‌্যাকেটের যোগাযোগের সময় সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করা হয়। ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও নীচের দিকের হাত সোজাসুজি থাকে এবং হাতের সঙ্গে কাঁধ একই উচ্চতায় থাকে। না হলে শটের মধ্যে সেই জোর পাওয়া যাবে না। বাটলার এবং সূর্য, দু’জনেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে সাফল্য পেয়েছেন।

তবে একটি ক্ষেত্রে ব্যাটাররা পিছিয়ে থাকবেন। টেনিসে যে ভাবে ফোরহ্যান্ড মারার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোণ ব্যবহার করে এবং র‌্যাকেটের সামান্য নড়াচড়ায় টপ স্পিন জাতীয় শট মারা যায়, ক্রিকেটে সেটার উদাহরণ কম। ক্রিকেট ব্যাট র‌্যাকেটের থেকে ভারী। ক্রিকেটের বলও টেনিসের বলে থেকে ভারি। ফলে ব্যাটের সামান্য দিক পরিবর্তন করে শট মারতে গেলে তা যেমন বেশি দূরে যাবে না, তেমনই কানায় লেগে ক্যাচও উঠে যেতে পারে। ফলে সোজাসুজি ব্যাটের মাঝখান দিয়েই শট মারার চেষ্টা করেন ব্যাটাররা।

উইকেটকিপারের মাথায় উপর দিয়ে শট মারার থেকে বোলারের মাথায় উপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেওয়া অনেকের কাছেই সহজ লাগে। অতীতে বীরেন্দ্র সহবাগ এবং কেভিন পিটারসেনরা এই কাজ করেছেন। ক্রিকেটের ফোরহ্যান্ড শটও বোলারের উপর দিয়ে মারার জন্যেই তৈরি হয়েছে। তবে এই শট পুরোপুরি ঝুঁকিহীন নয়। অনেক সময় গতি দিয়ে ব্যাটারকে টেক্কা দিতে পারেন বোলাররা। শ্রেয়স আয়ারকে এই শট খেলতে দেখা গিয়েছে। কম গতির বোলারদের সহজেই বাউন্ডারিতে পাঠালেও যাঁদের বলের গতি বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে বল কানায় লেগে আকাশে উঠে গিয়েছে। কোমর এবং বুকের মাঝামাঝি উচ্চতায় বল না থাকলে এই শট খেলা কঠিন।

তবে যত দিন যাবে তত এই শট নিখুঁত করার চেষ্টা চালাবেন ব্যাটাররা। এখন দেখার, আগামী দিনে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এটাই ব্যাটারদের মূল অস্ত্র হয়ে ওঠে কি না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement