ষুষুধান: আজ এসপার-ওসপার ম্যাচ। রশিদদের আফগানিস্তান বনাম উইলিয়ামসনের নিউজ়িল্যান্ড। ফাইল চিত্র।
স্কটল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে বিরাট কোহালিরা নিজেদের নেট রানরেট আফগানিস্তানের উপরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ঝড় উঠেছে গণমাধ্যমে। শনিবার সকাল থেকে আফগানিস্তান বোর্ড এবং তাদের ক্রিকেটারদের টুইটারে একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তা আসছে। প্রেরক, অবশ্যই ভারতীয় সমর্থকেরা। বার্তার বক্তব্য মোটামুটি এক: রবিবার যে করে হোক হারাতেই হবে নিউজ়িল্যান্ডকে!
রশিদ খান হোক বা মহম্মদ নবি, আইপিএলের দৌলতে ভারতে এঁদের ভক্তসংখ্যা কম নয়। কিন্তু কোটি কোটি ভারতবাসী এবং কোহালিরাও কোনও দিন যে আফগানিস্তানের জয়ের জন্য প্রার্থনা করবেন, এটা ভাবা যায়নি। ঘটনাচক্রে চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেটাই হচ্ছে। কারণ সকলেরই জানা। কেন উইলিয়ামসনের বিরুদ্ধে দ্বৈরথে যদি শেষ হাসি হাসেন রশিদ খান, তবেই ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। আর যদি নিউজ়িল্যান্ড হারিয়ে দেয় আফগানিস্তানকে? তা হলে কী হবে, তার উত্তরটা আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে দিয়েই রেখেছেন রবীন্দ্র জাডেজা। ভারতীয় অলরাউন্ডারের কথায়, ‘‘তা হলে আমরা ব্যাগপত্তর গুছিয়ে বাড়ি চলে যাব।’’
আপনারা যখন নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নামবেন, তখন একশো কোটি নতুন সমর্থককে পাশে পাবেন। ভারতীয়দের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তা আপনারাও নিশ্চয়ই পাচ্ছেন ক্রমাগত?
শনিবার দুপুরে ভিডিয়ো কল মারফত প্রশ্নটা করা গেল আফগানিস্তান দলের ব্যাটার হাসমাতুল্লাহ শাহিদিকে। আইসিসির সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন এই অভিজ্ঞ আফগান ক্রিকেটার। প্রথমেই হাল্কা হেসে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন, ভারতীয়দের শুভেচ্ছাবার্তার ঢল যে নেমেছে, তা জানেন তিনি। কিন্তু পাশাপাশি একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে দিতে চান শাহিদি। বুঝিয়ে দিলেন, এই ম্যাচটা আফগানিস্তান নিজেদের জন্য খেলতে নামবে, ভারতের জন্য নয়। শাহিদি বলে দিলেন, ‘‘আমরা কিন্তু শুধু আমাদের কথাই ভাবছি। আর কারা কোন জায়গায় আছে, তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই। আমাদের লক্ষ্য হল, সেমিফাইনালে যাওয়া। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামব। অন্য কোনও দলকে শেষ চারে তোলার জন্য নয়।’’
এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যা, তাতে নেট রানরেটে ভারতের (+১.৬১৯) চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে আফগানিস্তান (+১.৪৮১)। ভারতের সবচেয়ে বড় সুবিধে হল, শেষ দিনে নামিবিয়াকে পাচ্ছে তারা। যে কারণে প্রয়োজনে নেট রানরেট বাড়ানোর বড় সুযোগ থাকবে কোহালিদের কাছে। ব্যাপারটা অজানা নয় আফগান ক্রিকেটারদের কাছেও। শাহিদি বলছেন, ‘‘কাজটা কঠিন জানি। কিন্তু আমরা সেমিফাইনালে ওঠার লক্ষ্যেই নিউজ়িল্যান্ড ম্যাচটা খেলতে নামব।’’
কোনও সন্দেহ নেই, রবিবার দুপুর থেকে আবু ধাবির স্টেডিয়ামে নজর থাকবে কোহালিদের। প্রার্থনা চলবে, রশিদ খানদের ঘূর্ণির সামনে যেন ভেঙে পড়ে নিউজ়িল্যান্ডের ব্যাটিং। তারও আগে অবশ্য আরও একটা প্রার্থনা নিশ্চয়ই করছেন বিরাট-সহ কোটি কোটি ভারতবাসী। রহস্য স্পিনার মুজিব-উর-রহমান যেন সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। স্কটল্যান্ড ম্যাচের পরে স্বয়ং সুনীল গাওস্কর টিভিতে বলেছিলেন, ‘‘রশিদ খান, মহম্মদ নবি তো আছেই। এর সঙ্গে যদি মুজিব সুস্থ হয়ে যায়, তা হলে কিন্তু সমস্যা
আছে নিউজ়িল্যান্ডের।’’
পাকিস্তান ম্যাচে পায়ে চোট পেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন রহস্য স্পিনার মুজিব। পরের দুটো ম্যাচে খেলেননি তিনি। এই মুহূর্তে কী অবস্থায় আছেন? জানা যাচ্ছে, মুজিবকে সুস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে আফগান ফিজ়িয়ো এবং চিকিৎসকেরা। মোটামুটি খেলার জায়গায় এলেই তাঁকে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হবে। শাহিদি বলছিলেন, ‘‘ফিজ়িয়োর উপরে মুজিবের ব্যাপারটা পুরো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ওর দায়িত্ব।’’
আফগানরা যতই দাবি করুন, তাঁরা সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আছেন, বাস্তবটা কিন্তু সে রকম নয়। নিউজ়িল্যান্ড হেরে গেলে ভারতেরই সেমিফাইনালে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশেরও বেশি।
সেক্ষেত্রে বিরাটদের স্বপ্নপূরণ করার মুখ কারা হতে পারেন? আফগানিস্তানের প্রাক্তন কোচ লালচাঁদ রাজপুত কয়েক জনকে আলাদা করে বেছে নিচ্ছেন। অবশ্যই তালিকায় আছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা লেগস্পিনার রশিদ। যিনি ম্যাচের রং একাই বদলে দিতে পারেন। আছেন ব্যাটার হাজরাতুল্লাহ জ়াজ়াই, অলরাউন্ডার মহম্মদ নবিও। সুস্থ থাকলে রহস্য স্পিনার মুজিব।
নিউজ়িল্যান্ড ফেভারিট হলেও একটা ব্যাপারে নিজেদের এগিয়ে রাখতে চায় আফগানিস্তানের ক্রিকেটারেরা। সেটা হল, মরুশহরের পরিবেশে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্পিন আক্রমণ। শাহিদি বলছিলেন, ‘‘আমি আবু ধাবির উইকেট এখনও দেখিনি ঠিকই, কিন্তু এটা জানি এই পরিবেশে আমাদের স্পিনাররা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। ওরা এখানে অনেক খেলেছে। এই অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে আসবে বলেই মনে হয়।’’
রবিবার যদি সত্যিই নিউজ়িল্যান্ডকে হারিয়ে দিতে পারে আফগানিস্তান, তা হলে ভারতের মাটিতে রশিদ খানদের মূর্তি বসার দাবি উঠলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না!