দর্শকদের জন্য সেরা মনোরঞ্জন উপহার দিলেন গাওস্কর। —ফাইল চিত্র
ইডেন বহুবার দেখেছে তাঁদের ধ্রুপদী ক্রিকেট। বৃহস্পতিবার এবিপি সংস্থার ইনফোকম ২০২২-এর মঞ্চে ফের জুটি বাঁধতে দেখা গেল সুনীল গাওস্কর ও গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথকে। এ বার যদিও ব্যাট নয়, তাঁদের হাতে মাইক। দেখা গেল সেই ভূমিকাতেও দুরন্ত ভারতীয় ক্রিকেটের দুইসেরা নক্ষত্র।
শুরুতেই দর্শকদের জন্য সেরা মনোরঞ্জন উপহার দিলেন গাওস্কর। যখন সঞ্চালক অম্বরীশ দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘দুই কিংবদন্তির মাঝে বসে এমন একটা শো পরিচালনা করতে গিয়ে আমার যে কী অবস্থা হচ্ছে,’’ গাওস্কর দ্রুত জায়গা বদল করে নিলেন। ঠিক যেভাবে খুচরো রান নিতেন। সঞ্চালকের মন্তব্যের সঙ্গে তাল মেলাতে তাঁকে নিয়ে এসে বসালেন মাঝখানে। বললেন, এক অনুষ্ঠানে মামা মাধবমন্ত্রীকে আয়োজকেরা জিজ্ঞেস করেন, কী ভাবে আপনার পরিচয় করাব? মাধবমন্ত্রী পরামর্শ দেন, ‘‘ছাত্রদের জিজ্ঞেস করবে, তোমাদের সব চেয়ে প্রিয় ক্রিকেটার কে? তখন বলে দেবে, আমি তার মামা।’’ এর পর সানির কথায়, ‘‘মাধবমন্ত্রী ধরেই নিয়েছিল, সকলে আমার নাম করবে। কিন্তু ছাত্রদের জিজ্ঞেস করতেই সকলে একসুরে একটাই নাম বলল— কপিল দেব।’’ উপস্থিত জনতার মধ্যে ফের হাসির রোল। এবং, তা চলতেই থাকল। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান উচ্চারণ ভঙ্গি নকল করে এর পর গাওস্কর বললেন জেফ বয়কটকে নিয়েঅজানা কাহিনি। যেখানে ট্যাক্সি ড্রাইভার দারুণ প্রশংসা করছিলেন বয়কটের, কিন্তু তাঁর দুই ইনিংসের রানসংখ্যাটা কিঞ্চিৎ ভুল বলেছিলেন। সানির কথায়, ‘‘বয়কট ট্যাক্সিচালককে সটান বলে দিল, আমার একটি রানও কম যে করে, তার ভাড়া পাওয়ার কোনও অধিকারই নেই।’’ বলেই বয়কট হাঁটা দেন হোটেলের দিকে।
প্রশ্নোত্তর পর্বের সময় অস্ট্রেলিয়ায় ডেনিস লিলির সঙ্গে মহাবিতর্কের কথা ওঠে। এ বারও অজানা কাহিনি শোনা যায় গাওস্করের মুখ থেকে। ‘‘ওই সিরিজ়ে আম্পায়ারেরা খুব ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে যাচ্ছিল। ওই ঘটনাটার আগেই অনেকগুলো কট বিহাইন্ড নাকচ হয়। সৈয়দ কিরমানি হঠাৎ বলে উঠল, এ বার যদি আম্পায়ার আউট না দেয়, মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাব।’’ গাওস্কর হাসতে হাসতে যোগ করেন, ‘‘ওই কথাটাই আমার মাথায় গেঁথে গিয়েছিল বোধ হয়। তাই মেলবোর্নে আমি বেরিয়ে যাচ্ছিলাম।’’ অবশ্য তার আগে বলেছেন, ‘‘আম্পায়ার আঙুল তুলে দেওয়ায় বিস্মিত হই। পরিষ্কার বল ব্যাটে লেগেছিল। লিলি এসে আমাকে দেখায়, বলপ্যাডে লেগেছে। আমিও বলি প্যাডে লাগার আগে বল লেগেছিল ব্যাটে। আমি ফিরে যাওয়ার সময় খুবই কটূ মন্তব্য করা হয়েছিল। যা আমি সকলের সামনে এখানে বলতে পারব না। তখনই আমি ঠিক করি, মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাব।’’ যোগ করেন, ‘‘চেতনকে (চৌহান) বলি, বেরিয়ে চলো। চেতন আমাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি ভেবেচিন্তে বলছ তো?’’
প্রয়াত টাইগার মনসুর আলি খান পটৌডিকে কী নামে ডাকবেন, তা নিয়েও মজার কাহিনি শোনান গাওস্কর।। বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে ঠিক হয়, যে প্রথমে বিশেষ কিছু করবে সে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে, কী নামে তাকে ডাকা যায়। তার পর আমিই রানআউট করলাম। তাই পটৌডিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, তোমাকে কী নামে ডাকব? ও কিছু না বলেই চলে গেল।’’ গাওস্করযোগ করেন, সারাজীবনে আর কখনওই বুঝে উঠতে পারেননি টাইগারকে কী ভাবে সম্বোধন করা যায়। বিশ্বনাথ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, প্রিয় অধিনায়কের প্রতি। জীবনের প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হওয়ার পরেও পটৌডি তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।