—ফাইল চিত্র।
ল্যারি গোমসকে মনে আছে? ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই বাঁ-হাতি ব্যাটার। যার ব্যাটিং মোটেই আকর্ষণীয় ছিল না, কিন্তু কার্যকর ছিল। সাধারণত দেখা যায়, বাঁ-হাতিদের ব্যাটিংয়ে একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। সেটা ডেভিড গাওয়ার থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সবার খেলায় ফুটে উঠেছে। তারই মধ্যে কয়েক জন ব্যতিক্রমও আছে। অতীত থেকে যদি গোমসের কথা বলা যায়, তা হলে এখনকার ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডিন এলগারের নাম করতেই হবে।
এলগারের ব্যাটিংয়ে সৌন্দর্য বলে কিছু নেই। অফসাইডে ড্রাইভ বলতে গেলে মারেই না। বেশির ভাগ শট অনসাইডের দিকে ঠেলে। মাঝে মাঝে দু’একটা বল ফ্লিক করে বাউন্ডারিতে। এই হল চুম্বকে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের ব্যাটিং। কিন্তু যা আছে, তা হল, নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝে স্ট্রোক বাছা। ‘জীবন যাবে, তবু উইকেট দেব না’ মানসিকতা। পরিবেশ, পরিস্থিতি বুঝে ব্যাটিংকে পরিমার্জিত করা এবং অসম্ভব সাহস। যে গুণগুলো এ দিন ফুটে উঠল এলগারের ব্যাটিংয়ে।
জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৪০ রান করতে হবে এই অবস্থায় ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান দু’উইকেটে ১১৮। জয়ের জন্য প্রয়োজন আর ১২২। উইকেটে রয়েছে যোদ্ধা এলগার। ১২১ বলে ৪৬ রান করে। মেরেছে মাত্র দু’টি চার। আর শরীরে ক’টা বল যে লেগেছে, তা ভুলে গিয়েছি। কখনও বুকে, কখনও হাতে, কখনও মাথায় এসে আছড়ে পড়েছে ভারতীয় পেসারদের গোলাগুলি। কিন্তু এলগারকে টলানো যায়নি। শেষ দিকে হাতে ব্যথা কমানোর স্প্রে নিয়ে খেলল। এ রকম লড়াকু ইনিংস কিন্তু দলের বাকিদেরও তাতিয়ে দেয়। এলগারের জন্যই দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের সম্ভাবনা এখন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।
অথচ ভারত আরও ভাল জায়গায় থাকত, যদি দলের এক বাঁ-হাতি দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটটা করত। ঋষভ পন্থ যখন নামল, স্কোর চার উইকেটে ১৬৩। হাফসেঞ্চুরি করার পরে ফিরে গিয়েছে চেতেশ্বর পুজারা এবং অজিঙ্ক রাহানে। কিন্তু ‘পুরানে’-র একশো রানের ওপর জুটি তখন ভারতকে ভাল জায়গায় এনে দিয়েছে। ওই সময় ঋষভের থেকে একটা দায়িত্বশীল ইনিংসের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ও কী করল? কাগিসো রাবাডার প্রথম বলটা খেলতে গিয়ে ফস্কাল। দ্বিতীয় বলটা ব্যাটের উপরে লেগে গালির কাছাকাছি পড়ল। তৃতীয় বলটা চোখ বন্ধ করে, ক্রিজ় থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে যে শটটা খেলতে গেল, তা বাচ্চারাও খেলবে না। শর্ট বল কানায় লেগে উইকেটকিপারের কাছে ক্যাচ। কী ভাবে পরিবেশ-পরিস্থিতিকে সম্মান দিয়ে ব্যাট করতে হয়, তা নিশ্চয়ই উইকেটের পিছন থেকে এলগারের ব্যাটিং দেখে বুঝেছে ঋষভ। আশা করব, কিছু শিখবে।
ঋষভের বোকামির পরেও ভারত যে ২৪০ রানের লক্ষ্য দিতে পারল, তার জন্য কৃতিত্ব দিতেই হবে হনুমা বিহারীকে (অপরাজিত ৪০)। অশ্বিন আর শার্দূল ঠাকুরকে নিয়ে খেলে গেল ছেলেটা। কঠিন বিদেশ সফর এলেই হনুমার কথা মনে পড়ে ভারতের। বিরাট কোহলি কেপ টাউনে সুস্থ হয়ে ফিরলে এই হনুমাকেই আবার বসতে হবে। কিন্তু ভারত এই টেস্ট জিতলে হনুমার নামটা সবার মনে রাখা উচিত।
একটা সমস্যা হল, বলটা ৪০ ওভার পুরনো হয়ে গিয়েছে। কোকাবুরা বল রিভার্স খুব কমই করে। তার উপরে ওয়ান্ডারার্সের মতো সবুজ মাঠে সে ভাবে খড়খড়ে হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম। নতুন বল এখনও ৪০ ওভার দূরে। শার্দূল ‘ক্রস সিম’ কাজে লাগিয়ে এডেন মার্করামকে আউট করেছে, অশ্বিনের অফস্পিনের শিকার কিগান পিটারসেন। চতুর্থ দিন বল কতটা স্পিন করে, তার উপরেও কিন্তু ঝুলে থাকতে পারে ম্যাচের ভাগ্য।