রিচা ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
বাংলার রিচা ঘোষের মারা চারেই প্রথম বার ট্রফি জেতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। সেই উচ্ছ্বাস এখনও ধরা পড়ছে। গত রবিবার উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগে (মেয়েদের আইপিএলে) দিল্লি ক্যাপিটালসকে হারিয়ে ট্রফি জিতে নেয় আরসিবি-র মহিলা দল। আর শুক্রবার আরসিবি-র পুরুষ দল নামছে আইপিএল খেলতে। এর মাঝেই রিচা জানালেন তাঁদের জয়ের পরে বিরাট কোহলির শুভেচ্ছা জানানোর কথা। একই সঙ্গে ২০ বছরের রিচা ‘পরামর্শ’ও দিয়ে রাখলেন ৩৫ বছরের কোহলির জন্য।
গত রবিবার দিল্লির অরুন্ধতী রেড্ডীর বল এক্সট্রা কভার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন রিচা। চমক ভাঙে মুহূর্তেই। বেঙ্গালুরুর সব ক্রিকেটার তখন দৌড়তে দৌড়তে মাঠে ঢুকছেন। বাউন্ডারি মেরে দলকে জিতিয়ে রিচাও তখন দলের সকলের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন। বৃহস্পতিবার রিচা আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “ট্রফি জয়ের আনন্দ এক রকম। কিন্তু চার মেরে ট্রফি জেতানোর সুযোগ তো সব সময় আসে না। ওই অনুভূতিটা আলাদা। দারুণ আনন্দ হয়েছিল দলকে জেতাতে পেরে।”
রিচার ওই বাউন্ডারি আরসিবি-কে প্রথম ট্রফি এনে দিয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয় আইপিএল। সেই সময় থেকেই খেলছে বেঙ্গালুরু। ছেলেদের দল এখনও ট্রফি জিততে না পারলেও মেয়েদের দল ট্রফি এনে দিয়েছে। দলের অন্যতম মালিক বিজয় মাল্য সেই প্রসঙ্গে সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, “মহিলাদের আইপিএল জেতায় আরসিবি-র মহিলা দলকে শুভেচ্ছা। খুব ভাল হয় যদি আরসিবি-র পুরুষদের দল এ বার আইপিএল জেতে। অনেক বছর ধরে এই ট্রফি পাওনা আছে।” কোহলিদের আগাম শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন তিনি। রিচা যদিও মনে করেন ট্রফি জেতার জন্য ভাগ্য প্রয়োজন। বাঙালি উইকেটরক্ষক বললেন, “ট্রফি জেতার জন্য ভাগ্যও প্রয়োজন। আশা করি এ বারের আইপিএলে ছেলেদের দলের সঙ্গেও ভাগ্য থাকবে। ওরাও নিশ্চয়ই ট্রফি এনে দেবে।”
মেয়েদের ট্রফি জয় এবং ছেলেদের আইপিএল শুরুর আগে দুই দলের খেলোয়াড়দের দেখা হয় আরসিবি-র একটি অনুষ্ঠানে। সেখানে বিরাট কোহলির সঙ্গে কথা হয় রিচার। এ বারের মেয়েদের আইপিএলে ১০ ম্যাচে ২৫৭ রান করা বেঙ্গালুরুর উইকেটরক্ষক বললেন, “আরসিবি-র অনুষ্ঠানে বিরাটের সঙ্গে দেখা হয়। ও আমাকে শুভেচ্ছা জানায়। চার মেরে ট্রফি জেতানোর জন্য পিঠ চাপড়ে দেয়।” রিচার কথা হয়েছে ফ্যাফ ডুপ্লেসি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের সঙ্গেও। তাঁরাও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এত জন তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে উচ্ছ্বসিত রিচা। আরও খুশি ছেলেদের দল ট্রফিজয়ী মহিলা দলকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়ায়।
শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ছেলেদের আইপিএল তার আগে বিরাটদের উদ্দেশে রিচা বললেন, “ট্রফি জেতার চাপ মাথায় যেন না নেয় বিরাটেরা। প্রতিটা ম্যাচ ধরে ধরে এগোনো উচিত। উপভোগ করা উচিত। ট্রফি আসবে কি না সেটা ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু পরিশ্রম করে যেতে হবে। সেখানে ফাঁকি দিলে চলবে না।”
গত বার মেয়েদের আইপিএলে আরসিবি শেষ করেছিল চার নম্বরে। প্লে-অফে উঠতে পারেনি। এ বারে চ্যাম্পিয়ন হলেন রিচারা। সেই প্রসঙ্গে রিচা বললেন, “গত বারের থেকে এ বারে আমাদের দলের মধ্যে বোঝাপড়া বেশি ভাল ছিল। সকলে জানত কাকে কী করতে হবে। সেটায় সুবিধা হয়েছিল। গত বারের থেকে এ বারে দলের ক্রিকেটারদের বেশি চিনতাম আমরা। কারণ প্রতিযোগিতা শুরুর বেশ কয়েক দিন আগে থেকে আমরা শিবির করি। সেখানে সবাই একসঙ্গে অনুশীলন করেছিলাম। সেটাই খুব কাজে দিয়েছিল।”
রিচা প্রশংসা করেন অধিনায়ক স্মৃতি মন্ধানার। বাংলার মেয়ে বললেন, “মন্ধানা দুর্দান্ত অধিনায়ক। ও সকলের সঙ্গে খুব সহজে মিশে যেতে পারে। সকলকে নিয়ে চলতে পারে। আর খুব ঠান্ডা মাথা। কখনও রেগে যায় না।” আরসিবি-তে মন্ধানার নেতৃত্বে খেলা রিচা ভারতের হয়ে খেলেন হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বে। তাঁর মতে দু’জনেই দুর্দান্ত অধিনায়ক। তবে নেতৃত্ব দেওয়ার ধরনটা আলাদা। রিচা বললেন, “হরমনপ্রীত আগ্রাসী। ও দলকে আক্রমণাত্মক ভাবে খেলতে উৎসাহ দেয়। স্মৃতি সেখানে ধীরস্থির। ও অনেক শান্ত। দু’জনের নেতৃত্ব দেওয়ার ধরনটা একেবারেই আলাদা।”
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অনুষ্ঠানে রিচা ঘোষের সঙ্গে স্মৃতি মন্ধানা। ছবি: এক্স।
আরসিবি-র প্রথম ট্রফি জয়ের নায়ক এখন বাড়িতে। আইপিএল দেখার অপেক্ষায়। রিচা বললেন, “মেয়েদের ক্রিকেট যে উন্নতি করছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। ছেলেদের মতো গুরুত্ব পাচ্ছি আমরা। এটা ভাল লাগছে। আরসিবি-কে ট্রফি জিতিয়ে ভাল লাগছে। দলকে জেতাতে পেরেছি এটাই আনন্দের। বাড়িতেও সবাই খুব খুশি। আশা করি ছেলেদের দলও ট্রফি জিতবে।”