রবীন্দ্র জাডেজা। —ফাইল চিত্র।
শেষ পর্যন্ত সত্যি হল ক্রিকেটপ্রেমীদের আশঙ্কা। অন্য বলের রিপ্লে দেখে রবীন্দ্র জাডেজাকে আউট দেওয়া হয়েছিল প্রথম ইনিংসে। শুক্রবারই জাডেজার আউটের সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। যদিও ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দ্বিতীয় টেস্টের ধারাভাষ্যকারেরা এবং সম্প্রচারকারী সংস্থা দাবি করেছিল, সঠিক সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছিল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে জাডেজার আউট নিয়ে প্রথম থেকেই তৈরি হয়েছিল প্রশ্ন। ডিআরএস (মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনও দলের আবেদন) ব্যবহার করা হলেও প্রযুক্তিগত সমস্যার জন্য ঠিক মতো বোঝা যায়নি জাডেজা আউট হয়েছিলেন কিনা। আল্ট্রা এজ দেখে তৃতীয় আম্পায়ার মতামত জানিয়েছিলেন। ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশের দাবি ছিল, আসল বলের ছবি দেখে বিচার করা হয়নি।
ডিআরএসের সময় তৃতীয় আম্পায়ারকে রিপ্লেতে বা আল্ট্রা এজে আসল বলটি দেখানো হয়নি। রোচের আগের একটি বলে পরাস্ত হয়েছিলেন জাডেজা। সেই বলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল ডিআরএসে। রোচের যে বলটিতে আউটের আবেদন করা হয়েছিল, সেই বলটি অফ স্টাম্পের বেশ কিছুটা বাইরে ছিল। আর যে বলটি রিল্পেতে দেখানো হয়েছিল, সেটি তুলনায় অফস্টাম্পের কাছাকাছি ছিল। জাডেজার ব্যাট চালানোর মধ্যেও ছিল কিছুটা পার্থক্য। তা ছাড়াও আউটের আবেদন হওয়া বলটি খেলার সময় জাডেজার ব্যাট ছিল প্যাড থেকে কিছুটা দূরে। আর যে বলটি তৃতীয় আম্পায়ারকে দেখানো হয়েছিল, সেই বলটি খেলার সময় জাডেজার ব্যাট-প্যাড খুব কাছাকাছি ছিল। দু’ক্ষেত্রেই বল বেরিয়েছিল ব্যাটের প্রান্ত ঘেঁসে। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল না থাকলেও, সম্প্রচারকারী সংস্থার তরফে ভুল ছিল। প্রযুক্তিগত সমস্যার জন্য আসল বলটি রিপ্লেতে দেখানো হয়নি। পাশাপাশি ডিআরএসের সময় দেখানো ছবিও পরিষ্কার ছিল না।
ব্যক্তিগত ৬১ রানে রোচের বলে উইকেটরক্ষক জসুয়া ডি সিলভার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছিলেন জাডেজা। রোচ অফ স্টাম্পের একটু বাইরে বল করেছিলেন। জাডেজা ব্যাট চালান। ঠিক মতো সংযোগ না হওয়ায় বল চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। ডি সিলভা আউটের আবেদন করেছিলেন। মাঠের আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস আউট দেননি। সিদ্ধান্ত মানতে না পারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ডিআরএসের আবেদন করেছিল।
রিপ্লেতে দেখা গিয়েছিল, জাডেজার ব্যাটের খুব কাছ দিয়ে বল গিয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তিগত সমস্যায় ছবি অস্পষ্ট হওয়ায় ব্যাট এবং বলের সংযোগ হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করা যায়নি। তৃতীয় আম্পায়ার মাইকেল গফ আল্ট্রা এজ দেখতে চেয়েছিলেন। আল্ট্রা এজে কোনও কিছুর সঙ্ঘাতের একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বল যখন ব্যাটের প্রান্ত অতিক্রম করেছিল, সে সময় ব্যাট এবং প্যাড ছিল খুব কাছাকাছি। কিন্তু যেহেতু সঙ্ঘাতের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তাই দেখে তৃতীয় আম্পায়ার ইরাসমাসকে আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার অনুরোধ করেছিলেন।
স্বাভাবিক ভাবেই একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। ক্রিকেটপ্রেমীরা কাঠগড়ায় তুলছেন সম্প্রচারকারী সংস্থাতে। তাঁদের প্রশ্ন, কী ভাবে তৃতীয় আম্পায়ারকে অন্য একটি বলের ছবি দেখাল? প্রযুক্তিগত সমস্যায় আসল বলটির ছবি দেখানো সম্ভব না-ও হে পারে। সে ক্ষেত্রে আম্পায়ারেরা সিদ্ধান্ত নিতেন। কেন অন্য একটি বলের ছবি দেখিয়ে বিভ্রান্ত করা হবে আম্পায়ারদের? দু’টি আলাদা বলের ভিডিয়ো দিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। আউটের আবেদন হওয়া বলটি সরাসরি সম্প্রচারের সময় ছবিতে কোনও সমস্যা ছিল না। তার রেকর্ডিং থেকেই ধরা পড়ে গিয়েছে কোন বল দেখিয়ে আউট দেওয়া হয়েছিল জাডেজাকে। সম্প্রচারকারী সংস্থার ভুল ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও আধুনিক প্রযুক্তির কাছেই মুখ পুড়ল তাদের।