ফের মধ্যপ্রদেশকে রঞ্জি ফাইনালে তুললেন চন্দ্রকান্ত। —ফাইল চিত্র
তিনি নাকি খুব কঠোর কোচ। দলের ক্রিকেটাররা তাঁর ভয়ে খুব বেশি কথা বলেন না। ২৩ বছর পর মধ্যপ্রদেশকে ফের রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে তুললেন তিনিই। তখন ছিলেন অধিনায়ক, এ বার কোচ। চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের সঙ্গে কথা বলল আনন্দবাজার অনলাইন। শুনল কেন তিনি শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী।
প্রশ্ন: আরও এক বার রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে। অনেক শুভেচ্ছা রইল।
পণ্ডিত: ধন্যবাদ। এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি। রঞ্জি জিততে হলে আরও একটা ম্যাচ জিততে হবে। সেটাই এখন লক্ষ্য।
প্রশ্ন: সকলে বলে আপনি কোচ হিসাবে খুব কঠোর। আপনি নিজেও কি তাই মনে করেন?
পণ্ডিত: আমার পক্ষে নিজেকে নিয়ে বলা খুব কঠিন। লোকে কী বলে সেটা জানি না। তারা আমাকে কঠোর মনে করে হয়তো। আমি যেমনই হই, আমার লক্ষ্য একটাই— দলের ভাল করা, ক্রিকেটারদের ভাল করা। তার জন্য যদি আমাকে কঠোর হতে হয়, তাতে আমি কোনও ভুল দেখি না।
অনুশীলনে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। —ফাইল চিত্র
প্রশ্ন: আপনি খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ। দলের ক্রিকেটারদের মধ্যেও সেটা আনতে চান?
পণ্ডিত: জীবন এবং ক্রিকেট দুই ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলা জরুরি বলে আমাকে শেখানো হয়েছে। রমাকান্ত আচরেকর (সচিন তেন্ডুলকরের ক্রিকেটগুরু) এবং অশোক মাঁকড়ের (বিনু মাঁকড়ের পুত্র) কাছে আমি এটাই শিখেছি। এঁরাই আমাকে শৃঙ্খলার গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। সেটাই আমি আমার দলে আনার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন: বাংলার বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল খেলতে নামার আগে কোন ধরনের পরিকল্পনা ছিল আপনার?
পণ্ডিত: ভাল দলের বিরুদ্ধে খেলতে গেলে পরিকল্পনা অবশ্যই প্রয়োজন। ভাবনাচিন্তা তো লাগবেই। কোয়ার্টার ফাইনালে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে খেলেছি। সেমিফাইনালে বাংলা। দুটো দলই দারুণ। গ্রুপ পর্বেও কঠিন লড়াই করেছি। আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম গ্রুপ পর্বে গুজরাত এবং কেরলের বিরুদ্ধে জিতে। ওই দুটো ম্যাচই ছেলেদের বড় ম্যাচ জেতার আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল।
প্রশ্ন: বাংলার বিরুদ্ধে নতুন বলে দুই স্পিনার (কুমার কার্তিকেয় এবং সারাংশ জৈন) দিয়ে শুরু করেছিলেন। এই পরিকল্পনা কেন?
পণ্ডিত: কারণ অবশ্যই ছিল। কিন্তু এখনও একটা ম্যাচ আমাদের বাকি রয়েছে। তার আগে সেই পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করে বলে দেওয়া উচিত নয়। সৌভাগ্য যে আমাদের সেই পরিকল্পনা কাজে লেগেছে।
প্রশ্ন: আপনার দলে রজত পাটীদার, কুমার কার্তিকেয়র মতো ক্রিকেটার রয়েছেন, যাঁরা আইপিএলে খেলেছেন। সাদা বলের ক্রিকেট থেকে এসে লাল বলে সাফল্য পাওয়ার রহস্যটা কী?
পণ্ডিত: ক্রিকেটে একটা ধরন থেকে অন্য ধরনে খেলতে যাওয়াটা বেশ কঠিন। কেউ সাদা বলে খেলছে, সেখান থেকে পরের ম্যাচ লাল বলে খেলতে গেলে অসুবিধা হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেটার জন্য একটু সময় প্রয়োজন হয়। আইপিএল খেলা কোনও ক্রিকেটারই সেই সময়টা রঞ্জিতে নামার আগে পায়নি। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ দলের ক্রিকেটাররা আইপিএল খেলার মাঝেও আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। মানসিক ভাবে প্রস্তুতিটা নেওয়া চলছিল আইপিএলের মধ্যেই। আমরা ভাগ্যবান যে রজত, কার্তিকেয়রা এক ম্যাচের মধ্যেই পরিবর্তনটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছে।
প্রশ্ন: আইপিএলে শতরানের পর রজতকে সকলে সাদা বলের ক্রিকেটার বলছিল। ও তো লাল বলেও পারদর্শী।
পণ্ডিত: আমার মনে হয় রজত পাটীদার সব ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারে। এটা ও প্রমাণ করে দিয়েছে। ও খুব তাড়াতাড়ি যে কোনও ধরনের ক্রিকেটে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।
প্রশ্ন: দলে বেঙ্কটেশ আয়ার, আবেশ খানের মতো ক্রিকেটার নেই। অসুবিধা হচ্ছে?
পণ্ডিত: বড় ক্রিকেটাররা থাকলে সাজঘরের আবহাওয়া অন্য রকম হয়। ওরা থাকলে হয়তো কিছুটা সুবিধা হত। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে আবেশদের জায়গায় যে ক্রিকেটাররা খেলছে তারা ভাল খেলছে। এটা কিন্তু আমাদের জন্য খুব ভাল একটা দিক।
প্রশ্ন: ১৯৯৯ সালে আপনার নেতৃত্বে মধ্যপ্রদেশ রঞ্জি ফাইনাল খেলেছিল। ফের রঞ্জি ফাইনালে মধ্যপ্রদেশ। এ বার আপনি কোচ।
পণ্ডিত: ক্রিকেটার হই বা কোচ, রঞ্জি ফাইনাল খেলা সব সময়ই সম্মানের। এটা দেশের সব থেকে বড় ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। আমার কাছে আবেগটা একই রকমের।
মনোজের সঙ্গে আলোচনায় পণ্ডিত। ছবি: টুইটার থেকে
প্রশ্ন: আপনি আবেগের সঙ্গে সেই বিষয় নিয়ে ভাবেন?
পণ্ডিত: আমি বাস্তববাদী। ২৩ বছর আগে আমরা হেরে গিয়েছিলাম। সেটাকে বদলাতে পারব না। কিন্তু এ বার আমার সামনে সুযোগ রয়েছে জেতার। এটা আমার হাতে রয়েছে। আমি এটা নিয়েই ভাবব। অতীত নিয়ে ভাবব না। যা চলে গিয়েছে, তা যাক। সব ম্যাচ খেলতে নামার আগে জেতার কথাই ভাবি, ফাইনালে আমি এবং আমার দল সেটা ভেবেই নামব।
প্রশ্ন: বাংলাকে সেমিফাইনালে হারানোর পর মনোজ তিওয়ারি আপনার সঙ্গে কথা বলছিলেন। কী নিয়ে আলোচনা হল?
পণ্ডিত: মনোজ আমাকে খুব সম্মান করে। বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কথা হল। মনোজ নিজের সম্পর্কে, দলের সম্পর্কে অনেক কিছু আলোচনা করছিল। যদিও কী কী কথা হয়েছিল আমাদের মধ্যে সেটা সবাইকে বলে দেওয়া উচিত হবে না।
প্রশ্ন: ফাইনালে মুম্বই। যে দলের কোচ অমল মজুমদারের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটার। দুই কোচের মগজাস্ত্রের লড়াই দেখা যাবে?
পণ্ডিত: মুম্বই ভাল খেলছে এটা ঠিক। আমরাও কিন্তু ভাল খেলছি না, এটা বলতে পারব না। আমাদের দলও ভাল খেলছে। খুব ভাল একটা ম্যাচ হবে। যে দল ওই পাঁচ দিন ভাল খেলবে তারাই জিতবে। ম্যাচটা অমল মজুমদার বনাম চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের নয়, মুম্বই বনাম মধ্যপ্রদেশের। আমরা বাইরে থেকে চেষ্টা করব দলকে সাহায্য করতে। সেটাই আমাদের কাজ।
প্রশ্ন: মুম্বইয়ের কোনও ক্রিকেটারের দিকে বিশেষ ভাবে নজর দেবেন?
পণ্ডিত: গোটা মুম্বই দলের দিকেই নজর দিতে হবে। কোনও একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে ভাবলে চলবে না। মুম্বই দলের কোচকে জিজ্ঞেস করলে তিনিও হয়তো একই কথা বলবেন মধ্যপ্রদেশ দল সম্পর্কে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।