বিশ্বকাপ নিয়ে ভারতের অধিনায়ক উদয় (বাঁ দিকে) এবং অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হিউ। ছবি: এক্স।
ঠিক ৮৪ দিন আগে আমদাবাদের একটি রাত। দেশের মাটিতে সাড়া জাগিয়েও এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে তখন সবে হেরেছে ভারত। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি এবং গ্যালারিতে অগণিত দর্শককে চোখের জলে ভাসিয়ে ট্রফি নিয়ে নাচছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা। তিন মাস পরে ভারতের সামনে সুযোগ এসেছে তার বদলা নেওয়ার। তবে দাদারা নয়, এ বার ভাইদের কাছে বদলা নেওয়ার সুযোগ। রবিবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের সামনে সেই অস্ট্রেলিয়াই। বেনোনির মাঠে কি বদলা হবে?
শুধু রোহিত, কোহলিরা কেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিন তেন্ডুলকরেরাও কি এই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না? বেনোনি থেকে জোহানেসবার্গের দূরত্ব মাত্র ৩৮ কিলোমিটার। ২০০৩ সালে সেই জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে ভারতের দ্বিতীয় বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল এই অস্ট্রেলিয়ার হাতেই। আবার দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া। প্রতিশোধ নেওয়া বাকি সেটারও। তবে প্রতিশোধের ভাবনা মাথাতেই নেই অধিনায়ক উদয় সাহারানের। তিনি বলেছেন, “আমরা প্রতিশোধ নিয়ে ভাবছি না। বর্তমানে বাঁচছি। অতীত নিয়ে ভাবতে চাই না।”
অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকে সিনিয়র দলে ক্রিকেটার উঠে আসার নিরিখে ভারত বাকিদের অনেক আগে। এই বিশ্বকাপ শুধু কোহলিকেই দেয়নি, তার আগে যুবরাজ সিংহ, মহম্মদ কাইফ, সুরেশ রায়না এবং পরে শুভমন গিল, পৃথ্বী শ-কে দিয়েছে। আগামী কয়েক বছরে উদয় সাহারান, মুশির খান, সচিন ধাস, রাজ লিম্বানীরা ঘরোয়া নাম হবেন কি না সময়েই বলবে। তবে রবিবার নিজেদের চেনানোর সুবর্ণসুযোগ তাঁদের সবার কাছেই।
ক্রিকেটে যখন সামনে অস্ট্রেলিয়ার মতো দল, তখন লড়াই সহজ হবে না। সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন টম স্ট্র্যাকার। এ ছাড়া হিউ ওয়েবগেন, হ্যারি ডিক্সন, ক্যালাম ভিডলারের মতো ক্রিকেটারেরা রয়েছেন। পরিসংখ্যান অবশ্য ভারতের সঙ্গেই। ২০১২ এবং ২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হয়েছিল। দু’বারই জিতেছিল ভারত। এই বয়সের ক্রিকেটে ভারত গোটা বিশ্বই দাপট দেখায়।
তাই ইতিহাস গড়ার তাগিদ নিয়ে মাঠে নামছেন না উদয়েরা। পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত এমনিতেই ইতিহাসে। এ বার জিতলে ছ’বার হবে। কিন্তু মাঠে নেমে কতটা লড়াই করতে পারল তারা, কতটা মনোরঞ্জন করতে পারল, তার দিকেই নজর থাকবে। ২০১৬ থেকে এই বিশ্বকাপে প্রতি বারই ফাইনালে উঠেছে ভারত। দু’বার জিতেছে, দু’বার হেরেছে।
ফাইনালে উঠলেও ভারতের এই দলটি আগে আশা জাগাতে পারেনি। বিশ্বকাপের আগেই এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা। কিন্তু বিশ্বকাপে সবাই নিজের সেরাটা বার করে এনেছেন। ব্যাটারদের মধ্যে সবার আগে অধিনায়ক নিজেই। করেছেন ৩৮৯ রান। এর পর মুশির খান এবং সচিন ধাস রয়েছেন। এর মধ্যে উদয় এবং সচিনকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এই দলে এমন কোনও চরিত্র নেই যাঁকে নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত চাপও নেই তাঁদের মাথায়। ফাইনালে এটা তাঁদের পক্ষে যেতে পারে।
ফাইনালে উদয় তো বটেই, মুশির, সচিনের ব্যাটিংয়ের দিকে নজির থাকবে। পাশাপাশি, দলকে জেতাতে বল হাতে ভূমিকা নিতে হবে সাউমি পাণ্ডে, রাজ লিম্বানীকে। এখন দেখার, রবিবারই ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন তারকার উত্থান দেখা যায় কি না।