IPL 2025

৩০ টাকার অটো থেকে ৩০ লাখি অশ্বনী, কেকেআরের ট্রায়ালে বাতিল ক্রিকেটারের কাছেই হার মানল কলকাতা

গ্রামের একটি সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করতেন অশ্বনী। সেই স্কুলের মাঠেই প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু। দাদা শিবরানা এবং বন্ধুদের ডেকে নিয়ে যেতেন ওই মাঠে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৫৪
Share:
Ashwani Kumar

অশ্বনী কুমার। —ফাইল চিত্র।

কখনও সাইকেল, কখনও ৩০ টাকা অটোভাড়া দিয়ে যেতেন অনুশীলনে। সোমবার যখন অশ্বনী কুমার একের পর এক উইকেট তুলছেন, তখন তাঁর বাবা হর্কেশ দেখছিলেন ঘরে রাখা সাইকেলটির দিকে। ভাবছিলেন কোন জায়গা থেকে শুরু করে তাঁর ছেলে কোথায় পৌঁছে গিয়েছে। মা মীনা কুমারী অপেক্ষায় রয়েছেন ছেলে বাড়ি ফিরলে তাঁকে গোলা রুটি আর আলুর পরোটা করে খাওয়াবেন।

Advertisement

চণ্ডীগড়ের ঝনঝেরি গ্রামে জন্ম অশ্বনীর। সেখান থেকে পঞ্জাব ক্রিকেট সংস্থার স্টেডিয়ামটি (মোহালি) ১১ কিলোমিটার দূরে। প্রতি দিন ভোর ৫টার সময় ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে নিতেন মাঠে যাওয়ার জন্য। ভরসা ছিল তাঁর সাইকেল। কখনও কখনও বাবার থেকে ৩০ টাকা নিতেন অটো করে যাওয়ার জন্য। ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাবা হর্কেশ বলেন, “বৃষ্টি পড়ুক বা রোদ উঠুক, অশ্বনী মোহালি যাবেই। পরে মুল্লানপুরের স্টেডিয়ামে যেত। কখনও সাইকেলে করে, কখনও অটো করে যেত। মনে আছে ৩০ টাকা চাইত আমার কাছে অটো করে যাওয়ার জন্য। তাকেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনেছে। আমি জানতাম ওর জন্য টাকা খরচ করলে সেটা ব্যর্থ হবে না। প্রতি রাতে ১০টার মধ্যে শুয়ে পড়ত। পরের দিন উঠত ভোর ৫টায়। সারা দিনই অনুশীলন করত।”

গ্রামের একটি সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করতেন অশ্বনী। সেই স্কুলের মাঠেই প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু। দাদা শিবরানা এবং বন্ধুদের ডেকে নিয়ে যেতেন ওই মাঠে। অশ্বনী বল করতেন, বাকিরা ব্যাটিং। ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়েছিল সেই খেলা। ১১ বছরের মধ্যে অশ্বনী পৌঁছে গিয়েছেন ওয়াংখেড়েতে। পঞ্জাবের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সময় তিনি সতীর্থ হিসাবে পেয়েছিলেন অভিষেক শর্মা, রমনদীপ সিংহ এবং অর্শদীপ সিংহকে। ২০১৯ সালে রঞ্জি অভিষেক হয়েছিল অশ্বনীর।

Advertisement

দাদা শিবরানা বলেন, “গ্রামের কিছু ছেলে এবং আমাকে ডেকে নিয়ে মাঠে যেত অশ্বনী। ভোরবেলা স্কুলের মাঠে খেলতাম। আমরা ব্যাট করতাম আর অশ্বনী বল করত। মাঝেমধ্যে গ্রামের কাছে একটা মাঠে যেত ক্রিকেট খেলতে। সেখানে স্থানীয় দলের ছেলেদের সঙ্গে খেলত। সাধারণ জুতো পরেও প্রচণ্ড গতিতে বল করত। অশ্বনীর লক্ষ্য ছিল শুধু ক্রিকেট খেলা। আমরা গর্বিত ওকে নিয়ে।”

মোহালি ক্রিকেট সংস্থার কোচ হরবিন্দর বেদবান ২০১৬ সালে প্রথম বার অশ্বনীকে দেখেছিলেন। তিনি বলেন, “পেস বোলারের জন্য আমরা এমন ছেলে খুঁজি যাদের পেটাই চেহারা। বল করার সময় অশ্বনীর পা ঠিক জায়গায় পড়ত না। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করি। খুব ভাল বাউন্সার দিতে পারে ও। সেই সঙ্গে শর্ট বলও ভাল করে। অনেক কম বয়স থেকেই বল সুইং করাতে পারত। এক বার আন্তজেলার একটি ম্যাচে এক ওভারে ২০ রান দিয়ে ফেলেছিল। সেই দিন সন্ধেবেলাতেই নেটে মন্থর গতির বল করার অভ্যেস শুরু করে দেয়। সেই সঙ্গে ইয়র্কার দেওয়ার অনুশীলনও।”

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

এ বারের নিলামে মুম্বই তাঁকে কেনার আগে চেন্নাই সুপার কিংস, কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং রাজস্থান রয়্যালসের ট্রায়ালে গিয়েছিলেন অশ্বনী। কিন্তু কোনও দলই তাঁকে কেনেনি। ২০২০ সালে অশ্বনীর টেনিস এলবো হয়েছিল। এক বছরের বেশি সময় খেলতে পারেননি তিনি। মোহালির ক্রিকেট সংস্থার ডিরেক্টোর অফ ক্রিকেট বারিন্দর সিংহ বলেন, “আগে শুধু আউটসুইং করত অশ্বনী। আমাদের কাছে এসে ইনসুইংও শেখে। নেটে রমনদীপের বিরুদ্ধে বল করত ও। সেই সময় ইয়র্কারও শিখেছিল।”

অশ্বনীর দাদা বলেন, “আইপিএলের বিভিন্ন দলে ট্রায়াল দিয়েছিল। তবে জসপ্রীত বুমরাহ এবং মিচেল স্টার্কের মতো পেসারদের সঙ্গে বল করতে চাইত ও। অশ্বনীর বন্ধুরা চাঁদা তুলে এক সময় বল কিনে দিত ওকে। নিলামে ৩০ লক্ষ টাকা পাওয়ার পর প্রথমেই ও ক্রিকেট কিট এবং বল কিনে গ্রামের অ্যাকাডেমিতে দিয়েছিল ছোটদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার জন্য।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement