PCB in Champions Trophy

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে শুরুতেই বিদায়, তিন সমস্যায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড

২৯ বছর পরে আইসিসি প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু শুরুতেই বিদায় নিয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে পাক বোর্ডের সামনে তিন বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৮
Share:

ভারতের কাছে হারের পর হতাশ পাকিস্তানের কয়েক জন ক্রিকেটার। ছবি: রয়টার্স।

অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচে ভরে গিয়েছিল লাহোরের গ্যালারি। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্তা গর্বের সঙ্গে জানিয়েছিলেন, পাকিস্তান খেলছে না এমন ম্যাচেও গ্যালারি ভরে যাচ্ছে। এই ছবি বুঝিয়ে দিচ্ছে, ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা আরও বাড়ছে পাকিস্তানে। কিন্তু সোমবার বাংলাদেশের হারের সঙ্গে পাকিস্তান প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাওয়ার পরেও কি সেই হাসি রয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাদের মুখে?

Advertisement

২৯ বছর পরে আইসিসি প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু শুরুতেই বিদায় নিয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে পাক বোর্ডের সামনে তিন বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক) স্পনসরের সমস্যা। দুই) ভবিষ্যতে আইসিসি প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার সমস্যা। তিন) পাকিস্তান ক্রিকেটের খোলনলচে বদলে ফেলার দাবি।

আপাতত সবচেয়ে বড় সমস্যা স্পনসর। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির হাত ধরে আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এই প্রতিযোগিতার জন্য নিজেদের তিনটি মাঠ সংস্কারে ১৮০ কোটি টাকা খরচ করেছে তারা। প্রতিটি দলের নিরাপত্তায় জোর দেওয়া হয়েছে। বিদেশি সমর্থকদের থাকা-খাওয়ার দিকে নজর রাখা হয়েছে। কিন্তু আসল বিষয় হল ক্রিকেটে দর্শকদের আগ্রহ তৈরি করা। যে ভাবে পাকিস্তানে একের পর এক আইসিসি প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ হচ্ছে, তাতে এই আগ্রহ ক্রমশ কমছে।

Advertisement

বড় প্রতিযোগিতাগুলিতে টানা ব্যর্থতায় হতাশ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিও। পিসিবি কর্তারা স্পনসর হারানোর আশঙ্কা করছেন। বোর্ডের এক কর্তা বলেন, ‘‘২৯ বছর পর আমরা একটা বড় মাপের প্রতিযোগিতার আয়োজক। অথচ প্রতিযোগিতা শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই আমরা প্রায় ছিটকে গিয়েছি। নকআউট পর্বের টিকিট বিক্রি প্রত্যাশামতো না-ও হতে পারে। আমরা না খেললে তার একটা প্রভাব তো পড়বেই।’’

পিসিবি কর্তাদের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা মেনে নিয়েছেন সে দেশের বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ তাহির রেজ়া। তিনি বলেছেন, ‘‘একটা দল বার বার ব্যর্থ হলে মানুষের আগ্রহ কমতে বাধ্য। দলের ব্র্যান্ড ভ্যালু কমে যায়। তার প্রভাব সরাসরি আঘাত হানে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির স্বার্থে। ফলে তারা নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহী হয় না।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানে ক্রিকেটকে বিক্রি করা আগের মতো সহজ নয়। পারফরম্যান্স ভাল না হলে সমর্থক, স্পনসর, অন্য বিজ্ঞাপনদাতা, সম্প্রচারকারী সংস্থা সকলেই আগ্রহ হারায়। পাকিস্তান ক্রিকেটে তেমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এমন ফলাফলের পর ক্রিকেটে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী করা কঠিন। বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি বিনোদন জগত বা অন্য খেলায় বিনিয়োগ করতে চাইবে। যেখানে বেশি প্রচার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, সেখানে তারা বেশি বিনিয়োগ করবে এটাই স্বাভাবিক।’’

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আর পাকিস্তান না থাকায় বাকি ম্যাচে টিকিট বিক্রি কমতে পারে। তবে আয়োজক দেশ হিসাবে আইসিসির কাছ থেকে পাক বোর্ড যে টাকা পাবে তাতে কোনও আর্থিক ক্ষতি হবে না। কিন্তু ভবিষ্যৎ? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরেই পাকিস্তান সুপার লিগ। সেই প্রতিযোগিতা সম্প্রচার করতে আগ্রহী নাও হতে পারে কোনও চ্যানেল। পাশাপাশি সেখানে বিনিয়োগ করতে বিভিন্ন সংস্থা আগ্রহ না-ও দেখাতে পারে। তেমনটা হলে পাকিস্তান সুপার লিগের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

১৯৯৬ সালের পর থেকে পাকিস্তানে কোনও আইসিসি প্রতিযোগিতা হয়নি। তার একটি কারণ সেখানকার নিরাপত্তা। এ বার প্রতিযোগিতা হচ্ছে। কিন্তু আইসিসি চায়, যে দেশে প্রতিযোগিতা হবে সেই দেশে গ্যালারি ভর্তি থাকুক। দর্শকদের উৎসাহ থাকুক। আয়োজক দেশ যদি ভাল খেলতে না পারে, তা হলে উৎসাহ কমবে। পাকিস্তানের দর্শকেরা যে ভাবে ক্রিকেটে আগ্রহ হারাচ্ছেন, তাতে ভবিষ্যতে এই দেশকে কোনও আইসিসি প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়ার আগে অনেক ভাবতে হবে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থাকে।

পাকিস্তানের এই খারাপ ফলের জন্য কাঠগড়ায় গোটা বোর্ড। নিশানা করা হয়েছে চেয়ারম্যান মহসিন নকভিকেও। অনেকে বলছেন, মাঠের সংস্কারের দিকেই বেশি নজর দিয়েছেন নকভি। নিজের দলের দিকে দেননি। অথচ, নির্বাচক কমিটি থেকে শুরু করে কোচিং দল, সবই তাঁর ঠিক করা। সুতরাং এই ব্যর্থতার দায় তাঁকে নিতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে পুরো কোচিং দলকে বরখাস্ত করা হতে পারে। পাক ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্তা বলেন, “চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমাদের দলের পারফরম্যান্স অত্যন্ত হতাশাজনক। এখনকার কোনও কোচিং স্টাফকেই আর দায়িত্বে রাখা হবে না। লাল বল এবং সাদা বলের ক্রিকেটের জন্য আলাদা কোচ রাখা হবে কি না, তা অবশ্য ঠিক হয়নি।’’ বিদেশি কোচদের নিয়ে আর আগ্রহী নন পিসিবির একাধিক কর্তা। দেশীয় প্রাক্তন ক্রিকেটারদের নিয়োগ করা হতে পারে।

তবে শুধু জাতীয় দল নয়, গোটা পাকিস্তান ক্রিকেটের খোলনলচে বদলে দেওয়ার কথা বলছেন ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনুসের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। তাঁদের মতে, বদল করতে হবে একেবারের নীচের স্তর থেকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিবর্তন করতে হবে। একটা নির্দিষ্ট নিয়ম করতে হবে। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সুতরাং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সামনে অনেক সমস্যা। অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে তাদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement