যুগলবন্দি: মুম্বইয়ে জয়ের দুই অন্যতম নায়ক। সফল শামি। রোনাল্ডোর উৎসব ভঙ্গি সিরাজের। ফাইল চিত্র।
প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের স্টাম্প ছিটকে দিয়েই তিনি যেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো হয়ে যান! হুবহু পর্তুগিজ তারকার মতোই শূন্যে লাফিয়ে মাঠে নেমে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। তিনি মহম্মদ সিরাজ। শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম একদিনের দ্বৈরথে ভারতের জয়ের অন্যতম নায়ক হয়ে উঠেছিলেন হায়দরাবাদের পেসার। যে উৎসব তাঁকে অবিলম্বে বন্ধ করতে বললেন অগ্রজ সতীর্থ। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের পরে বিসিসিআই টিভিতে মহম্মদ শামির সাক্ষাৎকার নিতে এলেন সিরাজ। তখনই শামি তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘এমন উৎসব কেন পালন করো?’’ সিরাজের জবাব, ‘‘আমি রোনাল্ডোর ভক্ত। তাই কাউকে বোল্ড করলেই এটা করি। তবে আমার বলে কেউ ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হলে বা অন্য কোনও ভাবে উইকেট এলে এই উৎসবটা করি না।’’ যা শুনে শামির দ্রুত পরামর্শ, ‘‘তোমাকে একটা কথা দিতে চাই। কারও ভক্ত হওয়াটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু ফাস্ট বোলার হিসেবে তোমার ও ভাবে লাফানোটা বন্ধ করতে হবে।’’ সতীর্থের পরামর্শ মন দিয়ে শুনে হেসে ফেলেন সিরাজ। জানতে চান, ‘‘তুমি তো এখানকার প্রবল গরমে একটা আগুনে স্পেল করলে। পরিকল্পনাটা ঠিক কী ছিল বলবে?’’
শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুরন্ত বোলিং করেছেন শামি। তাঁর বোলিং হিসাব ছিল ৬-২-১৭-৩! সিরাজের প্রশ্ন শুনে শামির জবাব, ‘‘এই সাফল্যের নেপথ্যে কোনও বিশেষ পরিকল্পনা নেই। খুব সহজ-সরল ভাবনা নিয়েই মুম্বইয়ে নেমেছিলাম। খেলার আগে আমরা ঠিক করেছিলাম, যে কোনও ভাবে শুরুটা ভাল করতে হবে। আর বোলিং ঠিকঠাক করতে প্রতিটি বল সঠিক জায়গায় ফেলতে হবে। দেখতে হবে, লাইন-লেংথে বল করার ক্ষেত্রে যেন আমাদের ঘাটতি না থাকে।’’
সিরাজকে তিনি আরও বলেন, ‘‘মুম্বইয়ে প্রথম পর্বে চড়া তাপমাত্রায় খেলতে হয়েছে। তবে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গরম কমতে থাকে। আমদাবাদে শেষ টেস্টে ৪০ ওভার বল করার পরে আমার দরকার ছিল দু’একদিনের পূর্ণ বিশ্রাম। সেই বিশ্রাম সেরে খেলতে এসেছিলাম।” যোগ করেন, “দল পরিচালন সমিতিও মনে করেছিল, এই বিশ্রামটা আমার প্রাপ্য। সাম্প্রতিক সময়ে প্রচুর ম্যাচ খেলতে হয়েছে। প্রত্যেকে জানি, কোথায় আমাদের শক্তি রয়েছে। তাই আরও ভাল খেলতে এই ধরনের অল্প দিনের বিরতিটা জরুরি।’’শুক্রবার সিরাজও অসাধারণ বোলিং করেন। ২৯ রানে পান তিন উইকেট। শামি প্রশ্ন করেন, ‘‘যখন মাত্র ১৮৯ রান তাড়া করতে নেমেও আমাদের পরপর উইকেট পড়ছিল, তোমার কী মনে হচ্ছিল?’’ সিরাজের জবাব, ‘‘ওই সময় কোনও উদ্বেগ তৈরি হয়নি আমার মনে। নিশ্চিত ছিলাম ম্যাচ বার করা যাবে। তবে শেষ দিকে খেলা হয়তো জমবে বলে মনে হয়েছিল। আর জুটিতে জাড্ডুভাই (রবীন্দ্র জাডেজা) আর কে এল (রাহুল) অসাধারণ ব্যাটিং করে ১০০ রান তুলে দিল।’’ শামি মজা করে বলেন, ‘‘তুমি নাকি প্যাড-গ্লাভস পরে নামার জন্য তৈরি হচ্ছিলে সে সময়?’’ সিরাজের সহাস্য জবাব, ‘‘আরে না না, আমি জানতাম কে এল ভাইরা ম্যাচ জিতিয়ে দেবে।’’ নিজের বোলিং নিয়ে শামিকে এর পর বললেন, ‘‘নতুন বল পাওয়ার পরে সাধারণত ইনসুইং করানোর চেষ্টা করি। পাওয়ার প্লে-তেও যত বেশি সম্ভব উইকেট নিতে চেয়েছিলাম। একটা উইকেটও পাই।’’ সিরাজকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘‘তুমি (শামি) বোলিং করার সময় ফাইন লেগে ফিল্ডিং করছিলাম। বোঝার চেষ্টা করছিলাম, কী ঘটছে। বল দারুণ সুইং করছিল। তাই বিশেষ একটা জায়গাতেই বারবার বল রেখে যাচ্ছিলাম। তখন তোমার পরামর্শ পেয়েছি। সত্যি আমরা দু’জনই ওই সময়টায় ওয়াংখেড়েতে নিজেদের বোলিং দারুণ উপভোগ করেছি।’’