ভারতকে জিতিয়ে উঠে উল্লাস বিরাট কোহলির। ছবি: রয়টার্স
২০ বছর পরে অবশেষে আইসিসি প্রতিযোগিতায় নিউ জ়িল্যান্ডকে হারাল ভারত। রোহিত শর্মাদের দলের হয়ে জয়ের প্রধান দুই নায়ক মহম্মদ শামি ও বিরাট কোহলি। এ বারের বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই ৫ উইকেট নিলেন শামি। ফলে ড্যারিল মিচেলের শতরানের পরেও ৩০০ করতে পারল না নিউ জ়িল্যান্ড। পরে রান তাড়া করতে নেমে এক সময় ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। সেখান থেকে দলকে টেনে তুললেন কোহলি। আরও এক বার তিনি দেখালেন কেন তাঁকে ‘চেজ়মাস্টার’ বলা হয়। তিনি যখন ৯৫ রান করে আউট হয়ে মাঠ ছাড়লেন তখন ভারত প্রায় জিতে গিয়েছে। এই জয়ের ফলে পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই জিতল ভারত। অন্য দিকে চার ম্যাচ জেতার পরে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ হারল নিউ জ়িল্যান্ড।
টস জিতে ধর্মশালার উইকেটে প্রথমে নিউ জ়িল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠান রোহিত। তাঁর সিদ্ধান্ত কাজেও লাগে। রান পাননি নিউ জ়িল্যান্ডের দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়ং। শূন্য রানের মাথায় কনওয়েকে আউট করেন যশপ্রীত বুমরা। ভাল ক্যাচ ধরেন শ্রেয়স আয়ার। ইয়ংকে ফেরান শামি। এ বারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের প্রথম বলে উইকেট নেন তিনি। পরের ওভারেই নিজের দ্বিতীয় উইকেট পেতে পারতেন শামি। তাঁর বলে রাচিন রবীন্দ্রের সহজ ক্যাচ ছাড়েন রবীন্দ্র জাডেজা। অন্য সময় চোখ বন্ধ করে সেই ক্যাচ ধরতে পারতেন তিনি।
তৃতীয় উইকেটে ভাল জুটি গড়েন রবিন্দ্র ও মিচেল। তাঁদের সাহায্য করে ভারতের ফিল্ডিং। বেশ কয়েকটি বল গলে। ফলে রান তোলার গতি বাড়ে নিউ জ়িল্যান্ডের। ভারতের স্পিনার কুলদীপ যাদবকে নিশানা করেন কিউয়ি ব্যাটারেরা। তাঁকে থিতু হতে দেননি তাঁরা। প্রথম ওভার থেকেই আক্রমণাত্মক শট খেলেন। কুলদীপ রান দেওয়ায় কিছুটা চাপে পড়ে যান রোহিত। দুই ব্যাটারই অর্ধশতরান করেন।
শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সময়ই আবার শামির হাতে বল তুলে দেন রোহিত। দ্বিতীয় স্পেলে রবীন্দ্রকে ৭৫ রানে আউট করে নিউ জ়িল্যান্ডকে ধাক্কা দেন শামি। দুই ব্যাটারের মধ্যে ১৫৯ রানের জুটি হয়। কিন্তু সেখান থেকেই শুরু হয় নিউ জ়িল্যান্ডের সমস্যা। পরের ব্যাটারেরা তেমন জুটি বাঁধতে পারেননি। এক দিকে মিচেল শতরান করলেও অন্য দিক থেকে সাহায্য পাননি তিনি। বাকিদের মধ্যে কেবল গ্লেন ফিলিপ্স ২৩ রান করেন। বাকিরা কেউ দু’অঙ্কে যেতে পারেননি।
দ্বিতীয় স্পেলে বিধ্বংসী বল করেন শামি। এক ওভারে মিচেল স্যান্টনার ও ম্যাচ হেনরিকে আউট করেন তিনি। ১৩০ রানের মাথায় মিচেলও শামির বলে আউট হন। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ৫ উইকেট নিয়ে নির্বাচকদের বড় বার্তা দিলেন শামি। পরের ম্যাচগুলিতে কি বাংলার বোলারকে বসানোর ঝুঁকি নিতে পারবে ভারত! শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ২৭৩ রানে অল আউট হয়ে যায় নিউ জ়িল্যান্ড।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে আগের ম্যাচের ফর্মেই খেলা শুরু করেন রোহিত। নিউ জ়িল্যান্ডের পেসারদের বিরুদ্ধে বড় শট মারেন তিনি। রোহিত আক্রমণাত্মক খেলায় শুভমন গিলও কিছুটা সুযোগ পান। দুই ব্যাটার দলের রান ৫০ পার করেন। রোহিত আবার অর্ধশতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু ৪৬ রানের মাথায় লকি ফার্গুসনের বলে আউট হন তিনি। ফার্গুসন নিজের পরের ওভারে শুভমনকে ফেরান। ২৬ রান করেন তিনি।
দুই ওপেনার ফেরার পর ভারতের ইনিংস ধরার দায়িত্ব ছিল বিরাট ও শ্রেয়সের কাঁধে। শ্রেয়স দ্রুত রান করছিলেন। মাঠে শিশির পড়ায় বোলারদেরও সমস্যা হচ্ছিল। মাঝে মাঠে কুয়াশা ঢুকে পড়ায় কিছু ক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। আবার খেলা শুরু হওয়ার পরে ট্রেন্ট বোল্টের বাউন্সারে পুল মারার লোভ সামলাতে না পেরে ৩৩ রানের মাথায় আউট হন শ্রেয়স। আরও একটি ম্যাচে ভাল শুরু করে নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন তিনি।
ভারতকে ম্যাচ জেতানোর দায়িত্ব এসে পড়ে আবার সেই বিরাট ও লোকেশ রাহুল জুটির উপর। এ বারের বিশ্বকাপে বার বার দলকে জিতিয়েছেন তাঁরা। আরও এক বার সেই কাজ করতে দেখা গেল তাঁদের। শুরুতে সময় নিলেন। নিউ জ়িল্যান্ডের স্পিনারেরা ভাল বল করছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বল দেখে খেলছিলেন দু’জনে। অহেতুক ঝুঁকি নেননি। কিন্তু মারার বল পেলে ছাড়েননি বিরাট-রাহুল।
দেখে মনে হচ্ছিল এই জুটিই ভারতকে জয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু ২৭ রানের মাথায় স্যান্টনারের বলে আউট হলেন রাহুল। প্রথম ম্যাচে সুযোগ পাওয়া সূর্যকুমার যাদবও রান পেলেন না। কোহলির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হলেন তিনি। ফলে দলকে নিয়ে যাওয়ার সব দায়িত্ব ছিল বিরাটের কাঁধে। চাপ বাড়ছিল তাঁর উপর।
চাপের মধ্যেই নিজের সেরা খেলাটা খেলেন কোহলি। সেটা আরও এক বার দেখালেন তিনি। কোহলি জানতেন জাডেজার পরে আর ব্যাটার নেই দলে। তাই তাঁরা কোনও ঝুঁকি নিলেন না। দৌড়ে রান করতে থাকলেন। মাঝে মধ্যে জাডেজা কিছু বড় শট খেললেও কোহলি শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থাকার লক্ষ্যে খেলছিলেন। ধীরে ধীরে লক্ষ্য কমছিল।
আরও এক বার নিজের শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন কোহলি। ঠিক আগের ম্যাচের মতো। দলের যখন জিততে ১৯ রান দরকার কোহলির তখন শতরান করতে দরকার ছিল ১৮ রান। ঠিক তখন থেকেই বড় শট খেলা শুরু করলেন কোহলি। দলের জিততে যখন ৭ রান দরকার তখন কোহলিও শতরানের জন্য দরকার ছিল ৭ রান। ৯৫ রানের মাথায় ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হলেন কোহলি। কিন্তু তত ক্ষণে ম্যাচ প্রায় জিতে গিয়েছে ভারত। তাই কোহলি আউট হলেও জিততে সমস্যা হয়নি দলের। ১২ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটে ম্যাচ জেতে ভারত। জাডেজা অপরাজিত থাকেন ৩৯ রান করে।