বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উইকেট নেওয়ার পর উচ্ছ্বাস আরশদীপ সিংহের। বাঁদিকে মায়াঙ্ক যাদব এবং ডানদিকে সূর্যকুমার যাদব। ছবি: পিটিআই।
ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ দেখতে রবিবার এসেছিলেন কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তাঁর বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়ার নামে তৈরি করা হয়েছে গোয়ালিয়রের নতুন মাঠটি। রবিবার ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ দিয়েই অভিষেক হল শ্রীমন্থ মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামটির। গোয়ালিয়র পেল নতুন আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। যে মাঠে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারাল সূর্যকুমার যাদবের ভারত।
ব্রিটিশ শাসনের সময় গোয়ালিয়রের শেষ রাজা ছিলেন জিয়াজিরাও সিন্ধিয়া। তাঁর ছেলে মাধবরাও দেশের মন্ত্রী ছিলেন। ৫৬ বছর বয়সে বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন তিনি। সেই মাধবরাওয়ের নামে মাঠ। এখন ৩০ হাজার দর্শক ধরে। আগামী দিনে যা বেড়ে ৫০ হাজার হওয়ার কথা। সেই মাঠে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ তোলে ১২৭ রান। ভারত সেই রান তুলতে খুব বেশি সময় নেয়নি। ৪৯ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে যান সূর্যকুমারেরা।
টেস্ট সিরিজ়ে বাংলাদেশকে দাপটের সঙ্গে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল ভারত। সেই দলের কাউকেই টি-টোয়েন্টি দলে রাখা হয়নি। তবুও ভারত খেলল একই রকম দাপটের সঙ্গে। রবিবার অভিষেক হল নীতীশ কুমার রেড্ডি এবং মায়াঙ্ক যাদবের। সূর্যকুমারের নেতৃত্বে তরুণ ভারত কেমন খেলে সেই দিকে নজর ছিল সমর্থকদের। শুরুটা মন্দ হল না। তিনটি করে উইকেট নিলেন বাঁহাতি পেসার আরশদীপ সিংহ এবং তিন বছর পর দলে ফেরা বরুণ চক্রবর্তী। একটি করে উইকেট মায়াঙ্ক, হার্দিক পাণ্ড্য এবং ওয়াশিংটন সুন্দরের।
শ্রীমন্থ মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ছবি: পিটিআই।
২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুবাইয়ে শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন বরুণ। রবিবার ভারতের জার্সিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোয়ালিয়রে তিনি যখন খেলতে নামছেন, তখন ভারত মাঝের তিন বছরে ৮৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। খলিল আহমেদ ২০১৯ সালের পর খেলেছিলেন ২০২৪ সালে। তাঁর দু’টি ম্যাচের মাঝে ভারত ১০৪টি ম্যাচ খেলেছিল। বরুণ এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রইলেন। রবিবার সুযোগ পেয়ে ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিলেন বরুণ। তোহিদ হৃদয়, জাকের আলি এবং রিশাদ হোসেনকে আউট করেন তিনি। ভারতের হয়ে ৫৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা অভিজ্ঞ আরশদীপও তিন উইকেট নেন।
নজর কাড়লেন মায়াঙ্ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে টি-টোয়েন্টিতে শুরু করলেন মেডেন ওভার দিয়ে। মায়াঙ্ক আইপিএলে নজর কেড়েছিলেন তাঁর গতির জন্য। আইপিএলে ১৫৬ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে বল করেছিলেন তিনি। চোট পেয়েছিলেন আইপিএল খেলতে গিয়ে। আইপিএল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসা মায়াঙ্ক হয়তো রবিবার ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে বল করেননি, তবে তাঁর বোলিং বুঝিয়ে দিয়েছে আগামী দিনের জন্য তিনি তৈরি। ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন মায়াঙ্ক। বাংলাদেশের মাহমুদুল্লার উইকেট নেন তিনি।
ভারতের সামনে ১২৮ রানের বেশি লক্ষ্য রাখতে পারেনি ভারত। আর সেই রান করতে নেমে ঝড় তোলেন অভিষেক শর্মা। ৭ বলে করেন ১৬ রান। তার মধ্যেই দু’টি চার এবং একটি ছক্কা। দুর্ভাগ্য তাঁকে রান আউট হতে হয়। ভারতের নতুন অভিষেক জুটি তৈরি হল রবিবার। অভিষেকের সঙ্গে ওপেন করেন সঞ্জু স্যামসন। তাঁদের বোঝাপড়ার অভাব দেখা গেল। নিজেদের ভুল বোঝাবুঝির কারণেই রান আউট হলেন অভিষেক। তবে তাতে ভারতের জিততে অসুবিধা হয়নি। অধিনায়ক সূর্যকুমার ১৪ বলে ২৯ রান করেন। হার্দিক পাণ্ড্য অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ৩৯ রান করে। তাসকিন আহমেদের বলে যে দিকে বল মারছেন, সেই দিকে না তাকিয়ে একটি শট খেলেন হার্দিক। ভারত কতটা দাপটের সঙ্গে জিতেছে সেটার প্রমাণ হতে পারে ওই শটটাই।
রবিবারের ভারতের লড়াইটা ছিল অনেকটাই নিজেদের সঙ্গে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি এবং রবীন্দ্র জাডেজা এই ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়ে নেন। তাঁদের জায়গা নেওয়ার ক্রিকেটার প্রয়োজন। টেস্ট দলে খেলা ক্রিকেটারদের এই সিরিজ়ে রাখা হয়নি। ফলে অনেক তরুণ ক্রিকেটারই এই ম্যাচে সুযোগ পান। ঋষভ পন্থ থাকলে সুযোগ পান না সঞ্জু স্যামসন। তাঁকে সুযোগ দিয়েছেন গম্ভীর। তিনি ১৯ বলে ২৯ রান করেন। সেই সঙ্গে ভারত দেখে নিতে চাইছে রিয়ান পরাগদেরও। ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে হয়তো এই দলের অনেককেই দেখা যেতে পারে। সেই লড়াইটা শুরু হয়ে গেল রবিবার থেকেই।
ভারতের পরের ম্যাচ দিল্লিতে। ৯ অক্টোবর খেলতে নামবেন সূর্যকুমারেরা। ষষ্ঠীর দিন হবে সেই ম্যাচ। দিল্লিতে জিতলেই সিরিজ় ভারতের।