অজিঙ্ক রাহানে। আবার পুরনো দলে ফিরেছেন তিনি। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের পরবর্তী অধিনায়ক কে? এটাই এখন নাইট সমর্থকদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। দলকে গত বার চ্যাম্পিয়ন করা অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ারকে ছেড়ে দিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। ফলে নিলামে নতুন অধিনায়কের দিকে তাকাতে হয়েছে তাদের। যে ক্রিকেটারদের কেকেআর ধরে রেখেছে ও যাঁদের নিয়েছে তাঁদের মধ্যেই এক জনকে দায়িত্ব দিতে হবে। সেই দৌড়ে আপাতত এগিয়ে এক ‘বুড়ো ঘোড়া’। ২৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার বেঙ্কটেশ আয়ারকে টপকে অধিনায়ক হতে পারেন দেড় কোটির অজিঙ্ক রাহানে।
নিলামে লোকেশ রাহুলকে পায়নি কেকেআর
শ্রেয়সকে ছাড়ার পর সকলে ভেবেছিলেন নিলামে ঋষভ পন্থ বা লোকেশ রাহুলের মধ্যে এক জনকে নেওয়ার জন্য ঝাঁপাবে কেকেআর। রাহুলের জন্য তারা লড়াই শুরু করেছিল। কিন্তু তাঁর দাম ১০ কোটির বেশি হয়ে যাওয়ার পর রণে ভঙ্গ দেয় কেকেআর। ফলে রাহুলকে পায়নি তারা।
কেকেআরের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার বেঙ্কটেশ
এ বারের নিলামে কেকেআরের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার বেঙ্কটেশ। তাঁর ন্যূনতম মূল্য ছিল ২ কোটি টাকা। কিন্তু তাঁকে কিনতে ২৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা খরচ করেছে কলকাতা। নিলামের আগে ছেড়ে দেওয়া ক্রিকেটারের জন্য শেষ পর্যন্ত গিয়েছে তারা। তার চেয়ে কম খরচে রাহুলকে পেয়ে যেত তারা। ফলে বোঝা যাচ্ছে যে, বেঙ্কটেশ অধিনায়কের দৌড়ে রয়েছেন। কারণ, দু’বছর আগে যখন শ্রেয়স চোট পাওয়ায় নীতীশ রানা কেকেআরের অধিনায়ক হয়েছিলেন, তখন সহ-অধিনায়ক ছিলেন বেঙ্কটেশ। ঘরোয়া ক্রিকেটে মধ্যপ্রদেশের অধিনায়ক তিনি। সেই দলেরই কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত আবার কেকেআরের প্রধান কোচ। ফলে বেঙ্কটেশের একটা সম্ভাবনা রয়েছে।
দৌড়ে রয়েছেন কুইন্টন ডি’কক, সুনীল নারাইনও
এ বার নিলামে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি’কককে কিনেছে কেকেআর। তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব আগে সামলেছেন। নারাইন আবার নাইটদের অন্য দলে অধিনায়কত্ব করেছেন। কেকেআরে বিদেশি অধিনায়কের নজির রয়েছে। আগে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম বা অইন মরগ্যানের মতো অধিনায়ক দেখেছে কলকাতা। ফলে অভিজ্ঞ ডি’কক বা নারাইনেরও একটা সম্ভাবনা রয়েছে।
টাকার অঙ্কে ১৫ নম্বরে রাহানে
এ বার কেকেআরে মোট ২১ জন ক্রিকেটার রয়েছে। ছ’জনকে ধরে রেখেছিল তারা। নিলামে ১৫ জনকে কিনেছে কেকেআর। এই ২১ জনের মধ্যে টাকার অঙ্কে ১৫ নম্বরে রয়েছে রাহানে। তাঁর উপরে থাকা ক্রিকেটারেরা হলেন বেঙ্কটেশ আয়ার (২৩ কোটি ৭৫ লক্ষ), রিঙ্কু সিংহ (১৩ কোটি), আন্দ্রে রাসেল (১২ কোটি), বরুণ চক্রবর্তী (১২ কোটি), সুনীল নারাইন (১২ কোটি), রমনদীপ সিংহ (৪ কোটি), হর্ষিত রানা (৪ কোটি), আনরিখ নোখিয়া (৬ কোটি ৫০ লক্ষ), কুইন্টন ডি’কক (৩ কোটি ৬০ লক্ষ), অঙ্গকৃশ রঘুবংশী (৩ কোটি), স্পেনসার জনসন (২ কোটি ৮০ লক্ষ), মইন আলি (২ কোটি), রহমানুল্লা গুরবাজ় (২ কোটি) ও বৈভব অরোরা (১ কোটি ৮০ লক্ষ)। রাহানের ন্যূনতম মূল্য ছিল ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। সেই টাকাতেই তাঁকে পেয়েছে কেকেআর। অন্য কোনও দল রাহানেকে নিতে এগোয়নি। এর আগেও কেকেআরের খেলেছেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
রাহানের সমান টাকা দিয়ে রভম্যান পাওয়েলকে কিনেছে কেকেআর। তাঁরও ন্যূনতম মূল্য ছিল দেড় কোটি টাকা। অর্থাৎ, রাহানের থেকে কম টাকায় পাঁচ জন ক্রিকেটার কিনেছে কলকাতা। তাঁরা হলেন, উমরান মালিক (৭৫ লক্ষ), মণীশ পাণ্ডে (৭৫ লক্ষ), অনুকূল রায় (৪০ লক্ষ), লবনিত সিসোদিয়া (৩০ লক্ষ) ও মায়াঙ্ক মারকণ্ডে (৩০ লক্ষ)। তাঁদের মধ্যে মণীশ ভারতীয় দলে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন তিনিও জাতীয় দলের বাইরে। বাকিরা প্রত্যেকেই তরুণ ক্রিকেটার।
অধিনায়কের দৌড়ে ১৪ জনকে টপকাতে পারেন রাহানে
টাকার অঙ্কে ১৫ নম্বরে থাকলেও অধিনায়কের দৌড়ে ১৪ জনকে টপকে যেতে পারেন রাহানে। এখনও কোনও অধিনায়কের নাম কলকাতা ঘোষণা না করলেও শোনা যাচ্ছে, রাহানেই যে পরবর্তী অধিনায়ক হবেন তা ৯০ শতাংশ নিশ্চিত। তাঁর বিপক্ষে রয়েছে টাকার অঙ্ক ও দীর্ঘ দিন টি-টোয়েন্টি না খেলার যুক্তি। টাকার অঙ্কে এত নীচে থাকা কাউকে অধিনায়ক করা ঠিক হবে কি না তা নিয়ে একটা প্রশ্ন রয়েছে। পাশাপাশি রাহানে অনেক দিন কুড়ি-বিশের ক্রিকেট খেলেননি। কয়েকটি ম্যাচ খেলা আর গোটা মরসুম খেলা এক নয়। অধিনায়ক করলে তাঁকে মাঝপথে দল থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। পুরো মরসুম খেলাতে হবে। সে ক্ষেত্রে দলের ভারসাম্য নষ্ট হবে কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে কেকেআরে।
রাহানে পোড়খাওয়া অধিনায়ক, তাই ভরসা কেকেআরের
রাহানের পক্ষে যাচ্ছে তাঁর অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা। ঘরোয়া ক্রিকেটে মুম্বই থেকে শুরু করে ভারতের জাতীয় দল। বহু ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন রাহানে। সাফল্য দিয়েছেন। তিনি পোড়খাওয়া অধিনায়ক। বেঙ্কটেশ, ডি’কক, নারাইনদের ততটা অভিজ্ঞতা নেই। দলের বাকি যাঁরা রয়েছেন তাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। সেই কারণেই হয়তো নিলামের দিন রাহানেকে নিয়েছে কেকেআর। অধিনায়ক হিসাবে ‘বুড়ো ঘোড়া’র উপরেই বাজি রাখতে চাইছে তারা।
বাকি ন’টি দলের সম্ভাব্য অধিনায়কেরা কোন জায়গায় রয়েছেন
আইপিএলের বাকি ন’টি দলের মধ্যে চারটি দলে নতুন অধিনায়ক দরকার। নিলামে সে ভাবেই এগিয়েছে তারা। পাঁচটি দলে অবশ্য স্থায়ী অধিনায়ক রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক ন’টি দলের সম্ভাব্য অধিনায়কেরা টাকার অঙ্কে কোন জায়গায় রয়েছেন।
দিল্লি ক্যাপিটালস— লোকেশ রাহুল। নিলামে ১৪ কোটি টাকায় তাঁকে কিনেছে দিল্লি। তবে রাহুল দিল্লির সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার নন। ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকায় তারা অক্ষর পটেলকে ধরে রেখেছে। অর্থাৎ, টাকার অঙ্কে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ক্রিকেটার অধিনায়ক হতে পারেন।
লখনউ সুপার জায়ান্টস— ঋষভ পন্থ। আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ২৭ কোটি টাকায় পন্থকে কিনেছে লখনউ। অর্থাৎ, সবচেয়ে দাবি ক্রিকেটারকেই অধিনায়ক করতে পারে তারা।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু— বিরাট কোহলি। ২১ কোটি টাকায় কোহলিকে ধরে রেখেছে বেঙ্গালুরু। সবচেয়ে দামি ক্রিকেটারকেই অধিনায়ক করতে চায় তারা।
পঞ্জাব কিংস— কেকেআরের ছেড়ে দেওয়া শ্রেয়স আয়ারকে ২৬ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় কিনেছে পঞ্জাব। তিনিই দলের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার। তাঁকেই অধিনায়ক করতে পারে প্রীতি জ়িন্টার দল।
চেন্নাই সুপার কিংস— রুতুরাজ গায়কোয়াড়। গত মরসুমে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ছাড়ার পর তাঁকে অধিনায়ক করা হয়েছিল। ১৮ কোটি টাকায় তাঁকে ধরে রেখেছে চেন্নাই। একই টাকা দেওয়া হয়েছে রবীন্দ্র জাডেজাকেও। অর্থাৎ, যুগ্ম সর্বোচ্চ দামি ক্রিকেটার চেন্নাইয়ের অধিনায়ক।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স— রোহিত শর্মাকে সরিয়ে গত মরসুমে হার্দিক পাণ্ড্যকে অধিনায়ক করেছিল মুম্বই। এ বার তাঁকে ১৬ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকায় ধরে রেখেছে তারা। তবে মুম্বইয়ের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার যশপ্রীত বুমরা। ১৮ কোটি টাকা দিয়ে তাঁকে ধরে রাখা হয়েছে। হার্দিকের সমান টাকা দেওয়া হয়েছে সূর্যকুমার যাদবকে। অর্থাৎ, দ্বিতীয় যুগ্ম সর্বোচ্চ দামি ক্রিকেটারের হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা।
রাজস্থান রয়্যালস— সঞ্জু স্যামসন। দলের স্থায়ী অধিনায়ক তিনি। ১৮ কোটি টাকা দিয়ে সঞ্জুকে ধরে রেখেছে রাজস্থান। একই টাকা পেয়েছেন যশস্বী জয়সওয়ালও। অর্থাৎ, যুগ্ম সর্বোচ্চ দামি ক্রিকেটার রাজস্থানের অধিনায়ক।
গুজরাত টাইটান্স— শুভমন গিল। গত বার থেকে তিনিই দলের অধিনায়ক। তাঁকে ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকায় ধরে রেখেছে গুজরাত। তবে সবচেয়ে বেশি ১৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে রশিদ খানকে। অর্থাৎ, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি ক্রিকেটার গুজরাতের অধিনায়কত্ব করবেন।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ— প্যাট কামিন্স। গত মরসুমে দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন। তাঁকে ১৮ কোটি টাকা দিয়ে ধরে রেখেছে হায়দরাবাদ। তবে দলের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার হেনরিখ ক্লাসেন। অর্থাৎ, এই দলেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি ক্রিকেটার অধিনায়কত্ব করবেন।