রমেশ কুমার। ছবি: টুইটার থেকে
নারাইনকে নিলামে মাত্র ২০ লক্ষ টাকায় কিনেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। অবাক হচ্ছেন? দলের খেলোয়াড় তালিকায় পাচ্ছেন না এমন কাউকে? ওয়েস্ট ইন্ডিজের রহস্য স্পিনারকে তো আগে থেকেই ধরে রেখেছে নাইটরা। তা হলে?
এই নারাইন ক্যারিবিয়ান নন। ভারতীয়। পঞ্জাবের ব্যাটার জালালাবাদের বাসিন্দা। মারকুটে ব্যাটার হিসেবেই পরিচিত। ২৩ বছরের এই ক্রিকেটার দক্ষ অফ স্পিনারও। আসল নাম রমেশ কুমার। বোলিং অ্যাকশন অবিকল নারাইনের মতো। তাই সকলেই রমেশকে ভারতের নারাইন বলে ডাকেন। কেমন ক্রিকেটার রমেশ? ক্যারিবিয়ান তারকা দলে থাকতেও কেন নেওয়া হল তাঁকে? কেকেআর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
আইপিএল নিলামে নিজেকে ব্যাটার হিসেবে নথিভুক্ত করলেও রমেশের আসল শক্তি বোলিং। বাঁহাতে অফ স্পিন করেন ২৩ বছরের এই ক্রিকেটার। বল ঘোরাতে পারেন দু’দিকেই। এখানেই শেষ নয়। রমেশ আসলে টেনিস বলের ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত। টেনিস বল ক্রিকেটে বড় বড় ছয় মারার জন্য খ্যাতি রমেশের। মাত্র ১০ বলে ৫০ রান করার নজিরও রয়েছে তাঁর। বিশ্ববিখ্যাত কোনও ক্রিকেটার তাঁর প্রিয় নন। পঞ্জাবেরই টেনিস বলের এক ব্যাটার তাঁর প্রিয় খেলোয়াড়। স্থানীয় এক বোলারই তাঁর মতে সেরা। রমেশের বিশ্বাস, টেনিস বল ক্রিকেটের জন্যই আইপিএলে সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
রমেশের বাবা পেশায় মুচি। তাঁর মা গ্রামে গ্রামে প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি করেন। ছোট শহর বা গ্রামের পাঁচ জন বাচ্চার মতোই টেনিস বলেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি রমেশের। বল এবং ব্যাট হাতে দক্ষতার জন্য নজরে পড়েন দ্রুত। আশপাশের বিভিন্ন টেনিস বল টুর্নামেন্ট থেকে ডাক আসতে থাকে। কিন্ত রমেশের পরিবার চাইত খেলায় মন না দিয়ে রোজগারের চেষ্টা করুক। অবশ্য টেনিস বল টুর্নামেন্ট খেলে পাওয়া টাকায় নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতেন রমেশ। স্নাতক স্তরের পড়াশোনাও শেষ করেন।
জেলা স্তরে ভাল খেলার জেরে গত বছর পঞ্জাব রাজ্য দলের শিবিরে ডাক পান রমেশ। সেখানে রমেশের সঙ্গে দেখা হয় ২০১৬ সালে ভারতের হয়ে এক দিনের ম্যাচ খেলা গুরকিরত সিংহ মানের সঙ্গে। রমেশ নিজের আর্থিক সঙ্কটের কথা জানিয়ে কোনও প্রতিযোগিতায় সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন তাঁকে। সাহায্যের আশ্বাস দিলেও গুরকিরত বলেন, পারফরম্যান্সই শেষ কথা বলবে। মিনার্ভা ক্রিকেট অ্যাকাডেমির হয়ে জেপি আত্রে মেমোরিয়াল ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ করে দেন গুরকিরত। একটি ম্যাচে নয় ওভারে ৩৫ রানে পাঁচ উইকেট এবং আর একটি ম্যাচে আট ওভার বল করে ৩২ রানে ৪ উইকেট নেন। প্রতিযোগিতার সেরা নির্বাচিত হন তিনি। রমেশ সেই খেলাগুলির ভিডিয়ো পাঠান কেকেআর-এর সহকারী কোচ অভিষেক নায়ারকে। ডাকা হয় ট্রায়ালে। বল এবং ফিল্ডিং করতে বলা হয়। তার পরই রমেশকে আইপিএল নিলামে নাম নথিভুক্ত করতে বলা হয়।
আইপিএল-এ সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত রমেশ। বলেছেন, ‘‘সুযোগটা আমার জীবন বদলে দিয়েছে। জেপি আত্রে আমাকে একটা মঞ্চ দিয়েছে। কখনও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলিনি। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী, রঞ্জি ট্রফির দরজাও খুলবে আমার সামনে। অবশ্যই চূড়ান্ত লক্ষ্য ভারতের হয়ে খেলা। এ সব কিছুই সম্ভব হত না ঈশ্বরের আশীর্বাদ এবং গুরকিরত পাজির সাহায্য ছাড়া।’’
টেনিস বল ক্রিকেট থেকে আইপিএল-এর মঞ্চে রমেশই প্রথম নন। ২০১৭ সালে টি নটরাজনকে ৩ কোটি টাকায় কিনেছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। সেই নটরাজন ইতিমধ্যেই তিন ধরনের ক্রিকেটে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। নেট দুনিয়ায় নারাইন জালালাবাদিয়া বলে পরিচিত রমেশ ভবিষ্যতে দেশের হয়ে খেলার স্বপ্নপূরণ করতে পারবেন কি না, তা নির্ভর করবে আইপিএল-এ কেমন খেলেন তার উপর।