পরামর্শ: ফান ডুসেনের সঙ্গে ক্রিকেট বিশ্লেষক প্রসন্ন (বাঁ-দিকে)। ছবি টুইটার।
দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। খুব ভাল করে জানেন ডিন এলগার থেকে টেম্বা বাভুমাদের শক্তি-দুর্বলতা। কেপ টাউনের পিচ থেকে কী আশা করা যেতে পারে, সে সম্পর্কেও ভাল ধারণা আছে তাঁর। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ডিন এলগারকে থামানোর ব্যাপারে একটা পরামর্শ দিতে চান প্রসন্ন আগোরাম— ধৈর্যের পরীক্ষায় হারাতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ককে।
কেপ টাউন টেস্ট শুরু হওয়ার একদিন আগে, সোমবার জোহানেসবার্গ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের প্রাক্তন ক্রিকেট অ্যানালিস্ট বলছিলেন, ‘‘জোহানেসবার্গে কিন্তু এলগারের ফাঁদে পা দিয়েছিল ভারত। যে কারণে ম্যাচটা ও বার করে নিয়ে যায়।’’ সেটা কী রকম? প্রসন্নের ব্যাখ্যা, ‘‘ধৈর্য এবং লড়াকু ব্যাটারদের যদি তালিকা করা যায় এই মুহূর্তে, তা হলে এলগার এক নম্বরে থাকবে। আমি তো ওকে চিনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ও উইকেটে পড়ে থাকতে পারে। রান না উঠলেও হতাশ হবে না। এর পরে বোলার-ফিল্ডার ক্লান্ত হয়ে পড়লে ও ঠিক রান
করে যাবে।’’
তা হলে ভারতের কি কৌশল নেওয়া উচিত এলগারের বিরুদ্ধে? ১১ বছর দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের ক্রিকেট অ্যানালিস্টের কাজ করার পরে গত বছরই সরে দাঁড়িয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ইঞ্জিনিয়ার। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে প্রসন্ন বলছিলেন, ‘‘এলগারকে হারাতে হবে ধৈর্যের পরীক্ষায়। জোহানেসবার্গে দেখলাম ভারত ডিপ স্কোয়ারলেগ-সহ দূরে দূরে কয়েক জন ফিল্ডার রেখেছে। ওই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে খুচরো রান তুলে নিয়েছিল এলগার। সেটা আর করতে দেওয়া যাবে না।’’ প্রসন্নর টোটকা, ‘‘অনসাইডে সিঙ্গল আটকাতে হবে। অফস্টাম্পের লাইনে বল রাখতে হবে। এলগার বড় শট খেলে খুব কম। তাই ওর বিরুদ্ধে অনেক ধৈর্য ধরে বল করতে হবে ভারতকে। অযথা আক্রমণে গেলে চলবে না।’’
চার বছর আগে কেপ টাউনে যখন টেস্ট হারতে হয়েছিল ভারতকে, তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ড্রেসিংরুমে ক্রিকেট বিশ্লেষক হিসেবে ছিলেন প্রসন্ন। ভারতের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ২০৮ রান। কিন্তু সেই অবস্থায় ভেঙে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং। কী রণকৌশল নিয়েছিলেন সে দিন? প্রসন্নের জবাব, ‘‘আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম, ভারতকে ৭০ ওভার খেলাতেই হবে। তা হলে ওদের আউট করে দেব। তিন জন ফিল্ডারকে আমরা ছড়িয়ে রেখেছিলাম বাউন্ডারি আটকানোর জন্য। জানতাম, ৭০ ওভারের ব্যাটিংয়ে ওরা ওই রানটা তুলতে পারবে না। কিন্তু আমাদের সামনে সুযোগ থাকবে ১০ উইকেট তোলার। ঠিক তাই হয়েছিল।’’ ৭০ ওভার প্রয়োজন হয়নি। ৪২ ওভারের মধ্যে শেষ হয়ে যায় ভারত।
নিউল্যান্ডসে পেসারদের পরিসংখ্যান যথেষ্ট ভাল থাকলেও প্রসন্ন মনে করিয়ে দিতে চান, এই মাঠে স্পিনাররাও সুবিধে পায়। বলছিলেন, ‘‘নিউল্যান্ডস হল এমন মাঠ, যেখানে ঘণ্টা দু’য়েক খেলে দিতে পারলে রান করা যায়। এই মাঠে স্পিনাররাও পিছিয়ে থাকে না।’’ উদাহরণ হিসেবে প্রসন্ন বলছেন, ‘‘এখানে হরভজন সিংহের সাত উইকেট আছে। কেশব মহারাজ উইকেট পেয়েছে। এই মাঠে শেষ টেস্টে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার খেলা হয়েছিল। সেখানে ইংল্যান্ডের অফস্পিনার ডমিনিক বেস ৩৩ ওভার বল করে। এমনকি অনিয়মিত লেগস্পিনার জো ডেনলি দু’উইকেট তুলে নেয়। তবে যদি দক্ষিণ আফ্রিকা পিচে ঘাস রাখার অনুরোধ করে, তা হলে আলাদা ব্যাপার।’’ যে রকম হয়েছিল ২০১৮ সালে। দ্বিতীয় ইনিংসে ছ’উইকেট নিয়ে ভারতকে ভাঙেন ভার্নন ফিল্যান্ডার।
এ বার কি প্রত্যাশা কেপ টাউনের পিচ ঘিরে? প্রসন্ন মনে করেন, এ বারের পিচে সে রকম ঘাস থাকবে না। ‘‘কেপ টাউনে এখন বেশ গরম পড়েছে। তার উপরে পাঁচ দিনই আবহাওয়া পরিষ্কার থাকবে বলে পূর্বাভাস আছে। সে ক্ষেত্রে উইকেট শুকনো থাকবে। স্পিনাররাও কিন্তু চতুর্থ-পঞ্চম দিনে বড় ভূমিকা নিতে পারে। রানটাও খারাপ উঠবে না।’’
প্রসন্ন মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভারতকে বুঝতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪০০-৪৫০ রান তোলার লক্ষ্য রাখলে চলবে না। ‘‘আমি বলব, ভারত যদি প্রথমে ব্যাট করে ৩৩০-৩৪০ রান তুলতে পারে, তা হলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে ফেলতে পারবে,’’ বলছেন তিনি। এই মুহূর্তে দক্ষিণ আফ্রিকার আঞ্চলিক দলের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের হয়ে কাজ চালাচ্ছেন। অতীতে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে কাজ করেছেন প্রসন্ন। সুযোগ পেলে ভারতীয় দলের হয়েও কাজ করতে চান।
ক্রিকেট বিশ্লেষক হিসেবে দু’দলকে কাটাছেঁড়া করে কী ভবিষ্যদ্বাণী করবেন সিরিজ়ের? প্রসন্নর জবাব, ‘‘ভারতই এগিয়ে।’’