লোকেশ রাহুলের আউট হওয়ার মুহূর্ত। ভিডিয়ো: ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
মাথা কি কাজ করছিল না লোকেশ রাহুলের? ১৮তম ওভারের প্রথম বলের সময় ওই দুই সেকেন্ড রাহুলের মাথায় কী চলছিল, সেটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। মেলবোর্নে তিনি যে ভাবে আউট হলেন তা বিস্ময়কর, হাস্যকর। দেশের হয়ে ৫৩টি টেস্ট খেলা কোনও ব্যাটার যে এই ভাবে আউট হতে পারেন তা রাহুলকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন হত।
ভারত এ-র হয়ে খেলছেন রাহুল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের টেস্ট সিরিজ় রয়েছে। তার আগে প্রস্তুতি নিতেই রাহুলকে আগেভাগে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম টেস্টে রোহিত শর্মার খেলার সম্ভাবনা কম। সেই জায়গায় রাহুলকে ওপেন করানোর ভাবনা রয়েছে ভারতীয় দলের। সেই কারণেই ভারত এ দলের হয়ে ওপেন করানো হয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এ দলের স্পিনার কোরে রোচ্চিকিয়োলির বলে রাহুল যে ভাবে আউট হলেন, তার পর তাঁকে প্রথম একাদশে রাখা হবে কি না তা নিয়েই ভাবতে বসা উচিত কোচ গৌতম গম্ভীরদের।
রোচ্চিকিয়োলির নির্বিষ বল অফ স্টাম্পের বাইরে ড্রপ খেয়ে সামান্য বেঁকেছিল। ভারতের মাটিতে খেলে যাওয়া রাহুল বোধ হয় ভেবেছিলেন তিনি চিপক বা ওয়াংখেড়েতে ব্যাট করছেন। বল কতটা ঘুরতে পারে সেটার আন্দাজই করতে পারেননি। ব্যাট তুলে বল ছাড়ার জন্য দাঁড়িয়ে পড়েন রাহুল। তা-ও আবার পা ফাঁক করে। হয়তো ভেবেছিলেন বল লেগ স্টাম্পের অনেকটা বাইরে দিয়ে চলে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। বল ছিল মিডল এবং লেগ স্টাম্পের মাঝে। উইকেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রাহুলের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল গলে যায়। প্যাডের ধারে লেগে অফ স্টাম্পের বেল ফেলে দেয়। রাহুলের মধ্যে যদিও কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা তখন হাসছেন। ভাবছেন এমন ভাবেও আউট হওয়া যায়! রাহুল তখন নির্বিকার। তিনি সাধারণ ভাবেই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। যেন এমন আউট তো যে কেউ হতে পারে। তবে শুধু রাহুলের আউট হওয়াই নয়, শুক্রবার ভারত এ এবং অস্ট্রেলিয়া এ ম্যাচে আরও অনেক ঘটনাই ঘটল।
হ্যারিসকে আউট না দেওয়া
অস্ট্রেলিয়া এ ব্যাট করার সময় আম্পায়ারের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেই ইনিংসের ৪৩তম ওভারে মার্কাস হ্যারিস ব্যাট করছিলেন। বল করছিলেন তানুশ কোটিয়ান। স্পিনারের বল হ্যারিসের ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো দেবদত্ত পাড়িক্কলের হাতে। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেননি। হ্যারিসও ক্রিজ় ছাড়েননি। আম্পায়ারের মনে হয়নি বল হ্যারিসের ব্যাটে লেগেছে। সেই সময় তিনি ৪৮ রানে ব্যাট করছিলেন। কিন্তু আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় তিনি মাঠ ছাড়েননি। দিনের শেষে হ্যারিস বলেন, “দলের ছেলেরা বলল ২০ বার দেখেছে ভিডিয়োটা, কিন্তু বুঝতে পারেনি আদৌ বল আমার ব্যাটে লেগেছিল কি না। সত্যি বলতে আমি নিজেও নিশ্চিত নই। ওরা যদি রিভিউ নিত, তাতে যদি দেখা যেত আমি আউট, তা হলে মাঠ ছেড়ে যেতাম।” যদিও হ্যারিসের মাঠ ছাড়া উচিত ছিল বলে মনে করেন স্টুয়ার্ট ব্রড। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন পেসার বলেন, “আমি হলে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতাম।” হ্যারিস আউট হন ৭৪ রানে। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ তাঁকে আউট করেন।
বল নিয়ে অখুশি ভারত
প্রথম ম্যাচে ভারত এ দলের বিরুদ্ধে বল বিকৃতির অভিযোগ উঠেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা অনেক বেশি সাবধানি। ভারতীয় দল বল এনে আম্পায়ারের হাতে দেন। বলে ঘাস লেগেছিল। সেই ঘাস সরিয়ে দেওয়ার জন্য আম্পায়ারকে দেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়েরা। আম্পায়ার বল নিয়ে ঘাস সরিয়ে তা ফিরিয়ে দেন। যদিও সেই বল নিয়ে ভারত এ দলের ক্রিকেটারেরা খুশি ছিলেন না। বোলার প্রসিদ্ধ চাইছিলেন বল বদলে দেওয়া হোক। কিন্তু আম্পায়ার তা মানেননি। ফলে প্রসিদ্ধ সেই বল নিয়েই ফিরে যান রান আপ নিতে।
ভারত এ প্রথম ইনিংসে ১৬১ রানের বেশি করতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়া এ করে ২২৩ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত এ ৫ উইকেট হারিয়ে ৭৩ রান তুলেছে। অভিমন্যু ঈশ্বরণ ১৭ রানের বেশি করতে পারেননি। ১৯ রান করে ক্রিজ়ে রয়েছেন ধ্রুব জুরেল। প্রথম ইনিংসে তিনিই একমাত্র রান করেছিলেন। জুরেলের সঙ্গে রয়েছেন নীতীশ কুমার রেড্ডি। তিনি ৯ রানে অপরাজিত। ভারত এ এগিয়ে রয়েছে ১১ রানে।