এক দিনের ক্রিকেটে প্রথম দ্বিশতরান করলেন শুভমন গিল। তাঁর ব্যাটে ভর করে নিউ জ়িল্যান্ডকে হারাল ভারত। ছবি: পিটিআই
একটা সময় দেখে মনে হচ্ছিল, শুভমন গিলের করা ২০৮ রানও করতে পারবে না নিউ জ়িল্যান্ড। ১৩১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল কিউয়ি ব্যাটিং। কিন্তু সেখান থেকে দলকে টেনে তুললেন মাইকেল ব্রেসওয়েল ও মিচেল স্যান্টনার। দুরন্ত শতরান করলেন ব্রেসওয়েল। দু’জনের মধ্যে ১৬২ রানের জুটি হল। কিউয়ি জুটির দৌলতে নিউ জ়িল্যান্ড খেলায় টিকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারল না। ব্যর্থ হল ব্রেসওয়েলের ৭৮ বলে ১৪০ রানের লড়াই। ঘরের মাঠে বল হাতে জ্বলে উঠলেন মহম্মদ সিরাজ। ভয়ঙ্কর কিউয়ি জুটিকে ভাঙলেন তিনিই। শেষ পর্যন্ত হায়দরাবাদে ১২ রানে নিউ জ়িল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজের শুভ মহরৎ করলেন রোহিত শর্মারা।
ম্যাচ জিতলেও বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে গেল। শুভমন ছাড়া বাকি ব্যাটাররা বড় রান পেলেন না। আরও এক বার ব্যর্থ অধিনায়ক রোহিত। সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্যও বড় রান করতে পারেননি। প্রতি ম্যাচে কোনও এক জন দ্বিশতরান করবেন না। রোহিতকে চিন্তায় রাখবে দলের বোলিং। মহম্মদ শামি, মহম্মদ সিরাজ ও কুলদীপ যাদব ছাড়া বাকিরা ছাপ ফেলতে ব্যর্থ। একটা সময় তো মনে হয়েছিল ভারত বোধহয় হেরে যাবে। সহজ ম্যাচকে কঠিন করে তুললেন ভারতীয় বোলাররা। কোনও রকমে জিতলেও বোলিং নিয়ে এখনও অনেক পরিশ্রম করতে হবে ভারতকে।
টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রোহিত। পরের দিকে শিশির পড়বে জেনেও নিজেদের পরীক্ষার মুখে ফেলতে চেয়েছিলেন। সেই পরীক্ষায় বাকিরা পাশ করতে না পারলেও শুভমন লেটার মার্কস পেলেন। রোহিতের সঙ্গে শুরুটা ভাল করেছিলেন তিনি। দু’জনে মিলে দ্রুত রান তুলছিলেন। ভাল দেখাচ্ছিল রোহিতকে। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে গিয়ে ৩৪ রানের মাথায় সাজঘরে ফিরলেন রোহিত। রান পাননি বিরাট কোহলি ও ঈশান কিশন।
দিনটা ছিল শুভমনের। অন্য প্রান্তে উইকেট পড়লেই পরের কয়েকটি বলে বড় শট মেরে রানের গতি বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। ফলে উইকেট পড়লেও বড় রানের দিকে এগোচ্ছিল ভারত। শুভমনকে কিছুটা সঙ্গ দেন সূর্যকুমার ও হার্দিক। সূর্য ৩১ ও হার্দিক ২৮ রান করেন। হার্দিকের আউট হওয়ার পিছনে রয়েছে আম্পায়ারের ভুল। রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, বল উইকেটে লাগেনি। উল্টে কিউয়ি উইকেটরক্ষক টম ল্যাথামের গ্লাভসে বেল পড়ে যায়। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দেন। বিরক্ত হয়ে মাঠ ছাড়েন হার্দিক।
শুভমন নিজের তৃতীয় শতরান পূর্ণ করেন। ১৯টি ইনিংসে তৃতীয় শতরান হল তাঁর। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি। অন্য দিকে উইকেট পড়তে থাকায় রানের গতি বাড়ান তিনি। ১৫০ রান পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে একটা সময় মনে হচ্ছিল, দ্বিশতরান বুঝি আর হল না। কারণ, কয়েকটি ওভারে রানের গতি কমে গিয়েছিল। কিন্তু ৪৯তম ওভারকে নিশানা করলেন শুভমন। লকি ফার্গুসনকে পর পর তিন বলে তিনটি ছক্কা মেরে ২০০ রান পূর্ণ করেন তিনি। শেষ ওভারের প্রথম বলে আবার ছক্কা মারেন তিনি। দ্বিতীয় বলে বড় শট মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান শুভমন। ৩৪৯ রানে শেষ হল ভারতের ইনিংস।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি নিউ জ়িল্যান্ডের। ব্যর্থ দলের টপ ও মিডল অর্ডার। ফিন অ্যালেন ৪০ রান করলেও প্রথম ছয় ব্যাটারের কেফ রান পেলেন না। নতুন বলে শামি-সিরাজ ও মাঝের ওভারে কুলদীপের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মাত্র ১৩১ রানে ৬ উইকেট পড়ে যায় নিউ জ়িল্যান্ডের।
সেখান থেকে জুটি বাঁধলেন ব্রেসওয়েল ও স্যান্টনার। প্রতি আক্রমণ শুরু করলেন তাঁরা। দলের বাকি বোলারদের নিশানা করলেন। প্রতি ওভারে বড় শট খেলা শুরু করেন কিউয়ি জুটি। বেশি আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করেন ব্রেসওয়েল। একের পর এক বল গিয়ে পড়ছিল বাউন্ডারির বাইরে। চাপে পড়ে যায় ভারতীয় বোলিং। খারাপ বল করা শুরু করেন শার্দুল ঠাকুর, ওয়াশিংটন সুন্দররা।
দুরন্ত শতরান করেন ব্রেসওয়েল। অর্ধশতরান করেন স্যান্টনার। একটা সময় মনে হচ্ছিল, নিউ জ়িল্যান্ডকে জিতিয়ে দেবেন তাঁরা। কিন্তু তখনই ভারতকে আবার খেলায় ফেরালেন সিরাজ়। বল করতে এসে ৫৭ রানের মাথায় স্যান্টনারকে আউট করলেন তিনি। ৪ উইকেট নিলেন সিরাজ।
স্য়ান্টনার আউট হলেও টিকে ছিলেন ব্রেসওয়েল। সব দায়িত্ব এসে পড়েছিল তাঁর কাঁধে। প্রায় প্রতি বলে বড় শট খেলার চেষ্টা করছিলেন তিনি। সফলও হচ্ছিলেন। শেষ ওভারে জিততে দরকার ছিল ২০ রান। শার্দুলকে প্রথম বলে ছক্কা মারেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান। ব্রেসওয়েল আউট হতেই শেষ হয়ে যায় নিউ জ়িল্যান্ডের ইনিংস।