দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে দাপট দেখালেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তাঁর ভেল্কিতে মাত অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা। ছবি: এএফপি।
দেওয়াল লিখন আগেই লেখা হয়ে গিয়েছিল। সময় যত গড়াল তত সেটা স্পষ্ট হল। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— সব বিভাগেই অস্ট্রেলিয়াকে টেক্কা দিল ভারত। মাত্র আড়াই দিনেই শেষ হয়ে গেল নাগপুর টেস্ট। তবে সেটা শুধু পিচের জন্য নয়, ভারতীয় স্পিনারদের জুজু অস্ট্রেলিয়ার পতনের মূল কারণ। ইনিংস ও ১৩২ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ১-০ এগিয়ে গেলেন রোহিত শর্মারা।
অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম ধাক্কা দিলেন অশ্বিন। উসমান খোয়াজাকে ৫ রানের মাথায় আউট করেন তিনি। স্লিপে ক্যাচ ধরেন বিরাট কোহলি। ভারতের মাটিতে সিরিজ়ের শুরুটা ভাল হল না অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা ক্রিকেটারের। অপর ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকেও ১০ রানের মাথায় ফেরান অশ্বিন।
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরুটা ভাল করেছিলেন মার্নাশ লাবুশেন। কিন্তু রবীন্দ্র জাডেজার একটি বল বুঝতে না পেরে আউট হলেন তিনি। উইকেটের সামনে জাডেজার বল গিয়ে লাগে তাঁর প্যাডে। আম্পায়ারের মনে কোনও সন্দেহ ছিল না। ম্যাচ রেনশঁ ও পিটার হ্যান্ডসকম্বকেও সাজঘরে পাঠান অশ্বিন। প্রথম ইনিংসে যদি জাডেজা দাপট দেখান তা হলে দ্বিতীয় ইনিংস অশ্বিনের। তাঁর অফ স্পিন, ক্যারম হল, ফ্লিপার কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না অসি ব্যাটাররা। মাত্র ৫২ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায় তাঁদের।
উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারে শুরু থেকেই সুইপ, রিভার্স সুইপের উপর ভরসা করে খেলছিলেন। কিন্তু তিনিও বেশি ক্ষণ টিকতে পারলেন না। অশ্বিনের বলে আউট হলেন। নিজের ১০ নম্বর ওভারে ৫ নম্বর উইকেট তুলে নিলেন অশ্বিন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ছয় ব্যাটারের মধ্যে পাঁচ জনই এলবিডব্লিউ আউট হলেন। এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, ভারতীয় স্পিনের সামনে পা কাঁপল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের।
এক দিকে টিকেছিলেন স্টিভ স্মিথ। কিন্তু তাঁকে সঙ্গ দিতে পারলেন না কোনও ব্যাটার। দলের ৮৮ রানের মাথায় স্মিথকে বোল্ড করে অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করে দেন জাডেজা। কিন্তু পরে দেখা যায় নো বল করেছেন তিনি। ফলে তখনই খেলা শেষ হয়নি। তবে তাতে বিশেষ সমস্যা হল না। শেষ পর্যন্ত ৯১ রানে শেষ হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। ভারতের হয়ে অশ্বিন ৫, জাডেজা ২, অক্ষর ১ ও শামি ২ উইকেট নিলেন।
এর আগে তৃতীয় দিনের শুরুর কয়েক ওভারের মধ্যেই জাডেজার উইকেট হারায় ভারত। আউট করেন সেই টড মারফি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া মারফির বল ছেড়ে দেন জাডেজা। কিন্তু বল না ঘুরে সোজা গিয়ে উইকেটে লাগে। ৭০ রানের মাথায় আউট হয়ে যান তিনি। জাডেজা আউট হওয়ার পরে অস্ট্রেলিয়ার কাছে সুযোগ ছিল ভারতীয় ইনিংসকে দ্রুত শেষ করার। কিন্তু শামির দৌলতে সেটা হয়নি।
অক্ষরের সঙ্গে ৫২ রানের জুটি বাঁধেন শামি। তার মধ্যে তিনি নিজেই করেন ৩৭ রান। যে পিচে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা খেলতে হিমশিম খেলেন সেই পিচে শামিও সোজা ব্যাটে খেললেন। শুরুতে একটু ধীরে খেললেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার মারফিকে পর পর দু’বলে দু’টি ছক্কা মারেন তিনি। ৪৭ বলে ৩৭ রান করে সেই মারফির বলেই অবশ্য আউট হন শামি।
অন্য দিকে খুব ভাল ব্যাট করছিলেন অক্ষর। শামি যত ক্ষণ ছিলেন, তত ক্ষণ ধীরে খেলছিলেন তিনি। কিন্তু শামি আউট হওয়ার পরে রানের গতি বাড়ান তিনি। শতরানের একটা সুযোগ ছিল অক্ষরের সামনে। সেই দিকেই এগোচ্ছিলেন ভারতীয় অলরাউন্ডার। কিন্তু ৮৪ রানের মাথায় প্যাট কামিন্সের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। শতরান হাতছাড়া হয় অক্ষরের। তাতে অবশ্য দলের জিততে কোনও সমস্যা হয়নি।