গৌতম গম্ভীর। —ফাইল চিত্র।
ভারত-নিউ জ়িল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টের আগে সমস্যায় ভারতীয় দলের কোচ গৌতম গম্ভীর। তাঁর বিরুদ্ধে একটি পুরনো প্রতারণার অভিযোগের নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে দিল্লির আদালত। অভিযোগ, ফ্ল্যাট সংক্রান্ত প্রতারণার সঙ্গে জড়িত গম্ভীর।
ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল রুদ্র বিল্ডওয়েল রিয়েলটি প্রাইভেট লিমিটেড, এইচ আর ইনফ্রাসিটি প্রাইভেট লিমিটেড এবং ইউ এম আর্কিটেকচার্স অ্যান্ড কন্ট্রাক্টর্স লিমিটেড নামে তিনটি নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দু’টি সংস্থার ডিরেক্টর গম্ভীর। সংস্থাগুলির যৌথ প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ। ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের একাংশ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন। সেই মামলাতে বিশেষ আদালতের বিচারক বিশাল গগনে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ‘‘বিনিয়োগকারীদের সরাসরি আকৃষ্ট করার এক মাত্র মাধ্যম ছিলেন গম্ভীর। তিনি ছিলেন প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। নিম্ন আদালত অভিযোগ থেকে মুক্তি দিলেও রুদ্র বিল্ডওয়েল রিয়েলটি প্রাইভেট লিমিটেডে তাঁর ৬ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করেনি। এ ছাড়া রিটার্ন হিসাবে পাওয়া ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার রসিদের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়নি। বিচারক গগনে বলেছেন, ‘‘গম্ভীরকে রুদ্র বিল্ডওয়েল রিয়েলটি প্রাইভেট লিমিটেড যে টাকা ফেরত দিয়েছে, তার নেপথ্যে কোনও পূর্ব যোগসাজশ ছিল কিনা, তা চার্জশিটে বলা হয়নি। এও বলা হয়নি, বিতর্কিত প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পাওয়া তহবিলের অংশই এই টাকার উৎস কিনা। যেহেতু মূল অভিযোগ প্রতারণার মতো অপরাধ, তাই চার্জশিট এবং প্রতারণা করা পরিমাণের কোনও অংশ গম্ভীর পেয়েছেন কিনা, তা স্পষ্ট করে বলা উচিত ছিল।’’
২০১১ সালের ২৯ জুন থেকে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত রুদ্র বিল্ডওয়েল রিয়েলটি প্রাইভেট লিমিটেডের অতিরিক্ত ডিরেক্টর ছিলেন গম্ভীর। এই সময় সংস্থার সঙ্গে গম্ভীরের কী কী আর্থিক লেনদেন হয়েছে, তার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছেন বিচারক। এক জন সক্রিয় পদাধিকারী হয়েও গম্ভীর কী ভাবে বিজ্ঞাপনের মুখ হলেন, তারও গ্রহণযোগ্য যুক্তি দিতে বলেছেন বিচারক। গম্ভীর ডিরেক্টরের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরও কেন তাঁকে দফায় দফায় বিপুল টাকা দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি, তারও উত্তর চেয়েছেন বিচারক গগনে।
উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের ইন্দ্রপুরম এলাকায় ২০১১ সালে ‘সেরা বেলা’ নামে একটি আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করে অভিযুক্ত তিনটি সংস্থা যৌথ ভাবে। ২০১৩ সালে সেই প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে ‘পাভো রিয়েল’ করা হয়। আগ্রহী ক্রেতারা ৬ লাখ থেকে ১৬ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালেও প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন তাঁদের একাংশ। পরে তদন্তে দেখা গিয়েছিল, প্রকল্পটিতে সরকারের একাধিক দফতরের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র ছিল না। নির্দিষ্ট নকশা (প্ল্যান) অনুযায়ীও নির্মাণ কাজ হয়নি। একটা সময় পর সংস্থার তরফে ক্রেতাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। আরও পরে জানা যায়, প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ২০০৩ সালে এলাহাবাদ হাই কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে বেআইনি ভাবে নির্মাণ শুরু করেছিল সংস্থাগুলি। যার মধ্যে দু’টি সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন গম্ভীর।