Mukesh Kumar

বাবা থাকলে আজ জড়িয়ে ধরতেন: মুকেশ

চাকরির খোঁজে বিহারের গোপালগঞ্জ থেকে মুকেশদের নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন তাঁর বাবা কাশীনাথ সিংহ। সে ভাবে কোনও কাজ না পেয়ে ট্যাক্সিচালক হিসেবে জীবন শুরু হয় তাঁর।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:০৩
Share:

৫.৫ কোটি টাকায় মুকেশকে তুলে নেয় দিল্লি ক্যাপিটালস। ছবি সংগৃহীত।

‘‘যখন সময় থমকে দাঁড়ায়, নিরাশার পাখি দু’হাত বাড়ায়। খুঁজে নিয়ে মন, নির্জন কোন। কী আর করে তখন? স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন দেখে মন।’’ এই স্বপ্নই মুকেশ কুমারকে বসিয়ে দিয়েছে আইপিএলের আসনে। এক সময় নতুন জুতো কেনার টাকাও ছিল না তাঁর কাছে। বাংলার প্রাক্তন পেসার রণদেব বসু তাঁকে ম্যাচ খেলার জুতো উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু আইপিএলের দরজা খুলতেই তাঁর নামের পাশে বসে গেল ৫.৫ কোটি টাকা। মুকেশকে তুলে নেয় দিল্লি ক্যাপিটালস।

Advertisement

চাকরির খোঁজে বিহারের গোপালগঞ্জ থেকে মুকেশদের নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন তাঁর বাবা কাশীনাথ সিংহ। সে ভাবে কোনও কাজ না পেয়ে ট্যাক্সিচালক হিসেবে জীবন শুরু হয় তাঁর। বাবা চাইতেন, মুকেশ বড় হয়ে ভাল একটি চাকরি পাক। কিন্তু ছেলের মনে অন্য স্বপ্ন দানা বেঁধেছিল। হাতে তুলে নিয়েছিল বল। কিন্তু আঙুল ভেঙে যাওয়ার পরে ডান হাতের মধ্যমা যায় বেঁকে। সেই হাত নিয়েই জোরে বোলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন মুকেশ।

ময়দানে খুব একটা আহামরি পারফর্ম করতেন না মুকেশ। কিন্তু সিএবির ‘ভিশন ২০২০’-তে রণদেব বসুর প্রশিক্ষণে আমূল পরিবর্তন হতে শুরু করে তাঁর। বাড়ে গতি, সুইং পেতে শুরু করেন দু’দিকেই। ডান হাতের মধ্যমা বাঁকা থাকার কারণে আউটসুইং করলেও বল মাটিতে পড়ে ডান হাতি ব্যাটারের ভেতরের দিকে চলে আসে। সেটাই তাঁর ম্যাজিক বল হয়ে ওঠে ২০১৯-এর রঞ্জি ট্রফিতে।

Advertisement

কিন্তু সে বছর তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। বাবার জন্য সারা রাত হাসপাতালে থাকার পরের দিন রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলতেও আসতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু তাঁর চোখে-মুখে ক্লান্তির কোনও ছাপ লক্ষ্য করা যায়নি। সব সময়ই নিষ্পাপ হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দেন, সব ঠিক আছে। মুকেশের বাবা চলে গিয়েছেন তিন বছর হল। ভারতীয় দলে তাঁর ডাক পাওয়ার দিনও দেখে যেতে পারেননি। কখনও হয়তো ভাবেনওনি ছেলে আইপিএল থেকে ৫.৫ কোটি টাকা পাবে। আইপিএলে দল পাওয়ার পরে মুকেশ সব চেয়ে বেশি অভাব অনুভব করছেন তাঁর বাবার। আনন্দবাজারকে বলছিলেন, ‘‘বাবা এই দিনটা দেখে যেতে পারলেন না। আজ থাকলে নিশ্চয়ই আমাকে জড়িয়ে ধরতেন। তাঁকে ভাল রাখার জন্যই যাবতীয় পরিশ্রম করতাম ছোট থেকে। ট্যাক্সি চালিয়ে সংসার চালিয়েছেন। যতটা সম্ভব সাহায্য করেছেন। কিন্তু আমার সাফল্য তিনি উপভোগ করতে পারলেন না।’’ বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে আসে তাঁর।

দিল্লি ক্যাপিটালসের শিবিরেই শেষ বার ছিলেন মুকেশ। কিন্তু নেট বোলার হিসেবে। সেই সময়েই রিকি পন্টিংদের নজর কেড়েছিলেন মুকেশ। নেট বোলাররা ভাল করলে পন্টিংয়ের নজর এড়ানো কঠিন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রথম মরসুমেই যার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। অশোক ডিন্ডাকেও নেট থেকেই পছন্দ হয়েছিল পন্টিংয়ের। তার পরে তাঁকে খেলানো হয় কেকেআরে। মুকেশ সেই কথা জানেন। তাই বলছিলেন, ‘‘নেট বোলার হিসেবে চেষ্টা করেছিলাম সেরাটা দেওয়ার। ডিন্ডাদার কাহিনি আমি জানতাম। সেই কাহিনি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাই নেটেও ম্যাচের মতো বল করতে শুরু করি।’’

মুকেশ জানেন, আইপিএল তাঁকে বিরাট একটি মঞ্চ দিয়েছে নিজেকে তুলে ধরার। ভারতীয় ক্রিকেটমহলে পরিচিত হয়ে ওঠার কোনও ফাঁক রাখবেন না তিনি। বলেন, ‘‘আইপিএলই আমাদের মতো ক্রিকেটারের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মঞ্চ। একটি সুযোগেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। অতিরিক্ত চাপ নিচ্ছি না। প্রত্যেক মুহূর্ত উপভোগ করে যেতে চাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement