বিশ্বকাপে ভারতের বড় ভরসা বিরাট, শামিরা। —ফাইল চিত্র
ভারতের মাটিতে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। প্রথম একাদশ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও অনেক সময় পাবে দলগুলি। ভারত বছরের শুরুতেই ঠিক করে নেয় যে, বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে ১৮-২০ জন ক্রিকেটারকে বেছে নিয়ে এগোবে তারা। সেখান থেকেই বেছে নেওয়া হবে প্রথম একাদশ। কেমন হতে পারে সেই দল? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।
ভারতীয় দলে চোট-আঘাতের সমস্যা চলছে। যশপ্রীত বুমরা, শ্রেয়স আয়ারের মতো ক্রিকেটারের চোট রয়েছে। গাড়ি দুর্ঘটনার পর এখনও সুস্থ হতে সময় লাগবে ঋষভ পন্থের। দলের অন্যতম সেরা তিন ক্রিকেটারের চোট থাকায় তাঁদের এখন পাচ্ছে না ভারত। মনে করা হচ্ছে বুমরা এবং শ্রেয়স বিশ্বকাপের আগে সুস্থ হয়ে যাবেন। পন্থকে নিয়ে চিন্তা রয়েছে। তিনি সুস্থ হলেও ম্যাচ খেলার মতো জায়গায় থাকবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। সেই সব দিক মাথায় রেখেই বেছে নেওয়া হচ্ছে প্রথম একাদশ।
ওপেনার
ওপেনার হিসাবে বিশ্বকাপে শুরু করতে পারেন রোহিত শর্মা এবং শুভমন গিল। অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশ্রণ রাখতে চাইবে ভারত। এখানে ঈশান কিশনকে প্রথম একাদশে ভাবা হচ্ছে না। তবে দলে রাখা হতে পারে তাঁকে। সৌরাশিস লাহিড়ীর মতে ঈশান এখনও বড় মঞ্চের জন্য তৈরি নন। বাংলার সহকারী কোচ বললেন, “বিশ্বকাপে মিচেল স্টার্ক, টিম সাউদি, শাহিন আফ্রিদি, কাগিসো রাবাডার মতো পেসারদের একের পর এক ম্যাচে সামলাতে হবে। ঈশান এখনও ততটা পরিণত নয়। ওর সময় লাগবে। এখনই প্রথম একাদশে ওকে ভাবা উচিত হবে না।”
মিডল অর্ডার
তিন নম্বরে অবশ্যই থাকবেন বিরাট কোহলি। দেশের মাটিতে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিলেন তিনি। সে বার জিতেছিল ভারত। আরও এক বার সেই সুযোগ বিরাটের সামনে। দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিতে চাইবেন তিনি। বিরাটের থাকা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠতেই পারে না। রান পেতেও শুরু করেছেন বিরাট। যা স্বস্তি দেবে অধিনায়ক রোহিতকে।
গত বারের বিশ্বকাপে ভারত ভুগেছিল চার নম্বর জায়গা নিয়ে। একাধিক ক্রিকেটারকে সেখানে খেলানো হয়েছিল। কিন্তু কেউই সফল হতে পারেননি। এ বার সেই জায়গায় খেলতে পারেন শ্রেয়স। যদিও তাঁর চোট রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, বিশ্বকাপের আগে সুস্থ হয়ে যাবেন তিনি। দলের মিডল অর্ডারের বড় ভরসা শ্রেয়স। তাঁর মতো ব্যাটারকে এক দিনের বিশ্বকাপের আগে সুস্থ দেখতে চাইবে ভারতীয় দল।
উইকেটরক্ষক
বিশ্বকাপে ভারতের উইকেটরক্ষক কে হবেন সেই নিয়ে আলোচনা হবেই। এর বড় কারণ পন্থকে নিয়ে অনিশ্চয়তা। এখনও সাত মাস দূরে বিশ্বকাপ। পন্থ যদি সুস্থ হয়ে ম্যাচ খেলার মতো জায়গায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারেন, তা হলে অন্য কাউকে ভাবার প্রয়োজন হবে না। উইকেটের পিছনে দাঁড়াবেন তিনিই। কিন্তু পন্থ সুস্থ না হলে? এখন লোকেশ রাহুলকে উইকেটরক্ষক হিসাবে খেলাচ্ছে দল। কিন্তু বিশ্বকাপেও কি সেটা দেখা যাবে? মনে করছেন না সৌরাশিস। তিনি বললেন, “পন্থ অবশ্যই প্রথম পছন্দ। ও না পারলে সঞ্জু স্যামসনকে খেলানো যেতে পারে। তবে বিশ্বকাপে রাহুলকে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব দেওয়াটা ঠিক হবে না মনে হয়।”
রাহুল নিজে রান পাচ্ছেন না। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচটি জেতালেও সেটা এখন ব্যতিক্রমী ঘটনা হয়ে গিয়েছে। যদিও বিশ্বকাপে তাঁকে দলে দেখা যেতে পারে কারণ এক দিনের ক্রিকেটে এখনও রান পাচ্ছেন না সূর্যকুমার যাদব। টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটার ৫০ ওভারের ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। সে ক্ষেত্রে বিশ্বকাপে প্রথম একাদশে বাইরে বসতে হতে পারে তাঁকে। রাহুল সে দিক থেকে জায়গা পেয়ে যেতে পারেন। অর্থাৎ প্রথম ছ’জন হতে পারেন রোহিত, শুভমন, বিরাট, শ্রেয়স, পন্থ অথবা সঞ্জু এবং রাহুল।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
অলরাউন্ডার
পেসার অলরাউন্ডার হিসাবে হার্দিক পাণ্ড্যর জায়গা পাকা। সঙ্গে থাকবেন রবীন্দ্র জাডেজা। ব্যাটে, বলে এই দুই ক্রিকেটার দলের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেন। সেই সঙ্গে দলের ব্যাটিং গভীরতাও অনেকটা বাড়বে। এই দু’জনের সঙ্গে রাখা হতে পারে অক্ষর পটেলকেও। সৌরশিস বললেন, “এই ন’নম্বর জায়গায় কে খেলবে তা ঠিক করতে হবে পিচ, বিপক্ষ এবং ম্যাচের পরিস্থিতি দেখে। অক্ষর খেলতে পারে। স্পিনার খেলালে কুলদীপ যাদবকে নেওয়া হতে পারে। নেওয়া হতে পারে শার্দূল ঠাকুরকেও। সমস্তটাই নির্ভর করবে পরিস্থিতির উপর।”
বোলার
ভারতের মাটিতে প্রথম একাদশে দুই পেসার নিয়ে খেলতে পারে ভারত। কোন দু’জনকে নিয়ে খেলবে তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। তবে বুমরা সুস্থ হয়ে গেলে তিনি খেলবেন ধরে নেওয়াই যায়। তাঁর সঙ্গী হতে পারেন অভিজ্ঞ মহম্মদ শামি। কিন্তু বিশ্বকাপ খেলার জন্য তৈরি মহম্মদ সিরাজও। তাই বুমরাকে পাওয়া না গেলে শামি-সিরাজের জুটি দেখা যেতে পারে বিশ্বকাপে। সৌরাশিস বললেন, “বুমরা সুস্থ হয়ে গেলে দুই পেসার অবশ্যই ও আর শামি। এটা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।”
এক নজরে ভারতের সম্ভাব্য প্রথম একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমন গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়স আয়ার, ঋষভ পন্থ/ সঞ্জু স্যামসন (উইকেটরক্ষক), লোকেশ রাহুল, হার্দিক পাণ্ড্য, রবীন্দ্র জাডেজা, অক্ষর পটেল, মহম্মদ শামি এবং যশপ্রীত বুমরা।