ICC Champions Trophy

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পাকিস্তানে যাবে না ভারত, রোহিতদের বাদ দিয়েই কি হবে প্রতিযোগিতা?

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পাকিস্তানে যাবে না ভারত। গত কয়েক বছরের নিদর্শন দেখলে এটা প্রত্যাশিতই। কিন্তু এ বার ভারতকে বাদ দিয়েই প্রতিযোগিতা আয়োজনের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ ১৪:১৯
Share:

রোহিত শর্মাদের বাদ দিয়েই হতে পারে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পাকিস্তানে যাবে না ভারতীয় ক্রিকেট দল। গত কয়েক বছরের নিদর্শন দেখলে এটা প্রত্যাশিতই। কিন্তু যেটা অপ্রত্যাশিত সেটা হল, এ বার ভারতকে বাদ দিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে।

Advertisement

ভারত কী চাইছে

হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে চাইছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। অর্থাৎ, প্রতিযোগিতার আয়োজক হিসাবে পাকিস্তানই থাকুক, কিন্তু ভারত তাদের ম্যাচ অন্য দেশে গিয়ে খেলবে। বোর্ডের এক কর্তা সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, শ্রীলঙ্কা বা দুবাইয়ে খেলতে চাইছে বোর্ড। কারণ সেই একই। সীমান্তে একের পর এক জঙ্গি হানার কারণে কেন্দ্রীয় সরকার ভারতীয় ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে পাঠানোর অনুমতি দেয়নি। গত বছর এশিয়া কাপে ঠিক এ রকমই হয়েছিল। প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিল পাকিস্তান। কিন্তু ভারত সে দেশে খেলতে যায়নি। আয়োজক হিসাবে পরে শ্রীলঙ্কাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। ভারতের সব ম্যাচ হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। পাকিস্তান মূল আয়োজক হলেও ১৩টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র চারটি ম্যাচ সে দেশে হয়। ফাইনাল-সহ ন’টি ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়।

Advertisement

নিরুপায় পাকিস্তান

গত বছর ভারতের দাবি মেনে নেয় পাকিস্তান বোর্ড। তাদের আর কোনও উপায় ছিল না। আর্থিক দিক দিয়ে ভারতের ধারেকাছে নেই তারা। ফলে আইসিসি (বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা)-তে তাদের প্রভাব খুবই কম। শুধু তা-ই নয়। আইসিসি-ও খুব ভাল করে জানে, ভারতকে ছাড়া তাদের চলবে না। আইসিসি সারা বছর যে টাকাটা লাভ করে, তার সিংহভাগ আসে ভারতীয় বোর্ডের থেকে। ফলে বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতেরও ছড়ি ঘোরাতে সুবিধা হয়। বিভিন্ন দেশ বসে থাকে কবে তারা নিজেদের দেশে ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ় আয়োজন করবে। কারণ রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের বাজারদর অন্য যে কোনও ক্রিকেটারের থেকে অনেক বেশি। ফলে ভারতের বিরুদ্ধে খেলে বিজ্ঞাপন বা সম্প্রচার থেকে যে আয় হবে, অন্য কোনও দেশের বিরুদ্ধে খেলে তার ধারেকাছেও পৌঁছনো সম্ভব হবে না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সদ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া ভারতীয় দলের পারফম্যান্সও ভাল। ফলে ছড়ি ঘোরানোর পুরো সুযোগটা নেয় ভারতীয় বোর্ড। প্রত্যেক বার পাকিস্তান বোর্ডের কর্তারা শুরুতে আস্ফালন করেন। ভারত তাঁদের দেশে খেলতে না গেলে কী কী ব্যবস্থা তারা নেবেন, তা নিয়ে নানা রকম হুমকি দেন। গত বছর এশিয়া কাপের সময়ও পাকিস্তান বলেছিল, ভারত যদি সেখানে খেলতে না যায়, তা হলে তারা বিশ্বকাপে ভারতে খেলতে আসবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হতে হয় তাঁদের। সুড়সুড় করে ভারতের দাবি মেনে নেন তাঁরা। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে ভারতে এসে ন’টি ম্যাচ খেলতে হয় পাকিস্তানকে। মুখরক্ষার জন্য পাকিস্তান শেষে একটি দাবি করেছিল, এ দেশের দু’টি কেন্দ্রে তারা খেলবে না। সেই দাবিও ভারত উড়িয়ে দেয়।

এ বার বদলাতে পারে ছবি

এ বার হাইব্রিড মডেল না-ও থাকতে পারে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের দাবি, এ বার ভারতের দাবির কাছে নতিস্বীকার করবে না আইসিসি। ফলে ভারত যদি পাকিস্তানে খেলতে না যায়, তা হলে রোহিত-কোহলিদের বাদ দিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি করার কথা ভাবা হচ্ছে। ভারতের বদলে তখন খেলার সুযোগ পাবে শ্রীলঙ্কা।

কেন এ বার নরম নয় আইসিসি

যা জানা যাচ্ছে, ভারতের উপর এ বার আইসিসি নরম না-ও হতে পারে। যাঁরা এ কথা বলছেন, তাঁরা মূলত দু’টি যুক্তি দেখাচ্ছেন। প্রথমত, কোনও বিশেষ একটি দেশ (এ ক্ষেত্রে ভারত) শুধু টাকার জোরে সর্বোচ্চ সংস্থার উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে, এই ছবিটা ক্রিকেটের জন্য খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। অন্য খেলার কাছে এই কারণে ক্রিকেটকে ছোটই হতে হয়। চার বছর পরে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক্সে ক্রিকেট জায়গা পেয়েছে। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ক্রিকেটের প্রচার, পরিচিতি বাড়বে। তার আগে ভারতের কর্তৃত্ব কিছুটা হলেও খর্ব করতে চাইছে আইসিসি। সংস্থার বেশ কয়েক জন কর্তার মত নাকি সেটাই। ভারতের হাইব্রিড মডেলের দাবি না মানা তারই প্রথম পদক্ষেপ হবে। দ্বিতীয় কারণ হল, আইসিসিতে পালাবদলের সম্ভাবনা। এখনকার চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলের মেয়াদ এই বছরই শেষ হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে তিনি সম্ভবত আর নির্বাচনে লড়বেন না। তিনি যদি চলেই যান, আইসিসি নিয়ে তাঁর আর কোনও দায় থাকবে না। তাই ভারতকে বাদ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি করার ঝুঁকি তিনি নিতেই পারেন। পাশাপাশি এই প্রশ্নও অনেকে তুলছেন যে, ভারতকে ছেঁটে ফেলে এত বড় একটা প্রতিযোগিতা আয়োজন করার ঝুঁকি কি সত্যিই নিতে পারবে আইসিসি? বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা কি সত্যিই এতটা সাবালক হতে পেরেছে?

জয় শাহ ফ্যাক্টর

শোনা যাচ্ছে নিউ জ়িল্যান্ডের বার্কলের জায়গায় জয় শাহ আইসিসির চেয়ারম্যান হতে পারেন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সচিব যদি আইসিসির ক্ষমতায় আসেন, তা হলে পুরো ছবিটাই বদলে যেতে পারে। আগামী ১৯ জুলাই থেকে ২২ জুলাই কলম্বোয় আইসিসির অ্যানুয়াল কনফারেন্স রয়েছে। কিন্তু সেই অ্যাজেন্ডায় সংস্থার নির্বাচন নেই। শাহকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই কনফারেন্সের সূচিতে এ বার নির্বাচন রাখা হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে। নভেম্বরে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন হবে। শাহ যাতে মনস্থির করার জন্য বাড়তি তিন মাস সময় পান, সেই কারণেই এটা করা হচ্ছে বলে খবর। নিয়ম অনুযায়ী বার্কলে আরও একটা টার্ম ক্ষমতায় থাকতে পারেন। কিন্তু শাহ যদি আইসিসির চেয়ারম্যান হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তা হলে বার্কলে আর নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। তখন শাহ চেয়ারম্যান হবেন। ফলে ভারতের ছড়ি ঘোরানো অব্যাহত থাকবে।

আইসিসি চেয়ারম্যানের কার্যকালের মেয়াদের ক্ষেত্রে সম্প্রতি সংবিধান বদল করেছে। দু’বছর করে তিনটি মেয়াদে থাকতে পারতেন আইসিসির চেয়ারম্যান। নতুন নিয়মে তিন বছর করে সর্বোচ্চ দু’টি মেয়াদ থাকতে পারবেন তিনি। ফলে শাহ এ বার চেয়ারম্যান হলে ২০২৭ সাল পর্যন্ত পদে থাকবেন। ভারতীয় বোর্ডের সংবিধান অনুযায়ী তার পর তিনি বোর্ড সভাপতি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, বোর্ডের সর্বোচ্চ পদে বসার আগে আইসিসি-তে বেশ কিছু বদল করে আসতে চাইছেন শাহ। বিশেষ করে, গত মাসে আমেরিকায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনে বিভিন্ন ত্রুটি ধরা পড়েছে। তিনি নিজে বিশ্বকাপ দেখতে গিয়েছিলেন। ফলে আইসিসিতে কী কী সমস্যা রয়েছে, তিনি একেবারে সামনে থেকে দেখেছেন।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব জয় শাহ। —ফাইল চিত্র।

বোর্ড সভাপতি হওয়ার আগে শাহ যদি আইসিসি ঘুরে আসেন, তা হলে স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের কর্তৃত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েই আসবেন। যাতে বোর্ড সভাপতি হিসাবে তাঁর কাজ করতে সুবিধা হয়। পাকিস্তানে গিয়ে রোহিতেরা খেলবেন কি না, তখন পুরোটাই থাকবে শাহী নিয়ন্ত্রণে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement