প্রেরণা: ভক্তের আঁকা ছবিতে সই দিয়েছেন কোহলি। —নিজস্ব চিত্র।
হুইলচেয়ারে বসা প্রিয় নায়কের ছবি হাতে নিয়ে। বৃহস্পতিবার স্বপ্ন পূরণের দিন ছিল তাঁর।
চেন্নাইয়ের এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়ামের মূল মাঠ, যেখানে ৮ অক্টোবর ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ, তার পিছন দিকটায় অনুশীলন করার জায়গা। ছবিটা বুকের কাছে আঁকড়ে নিয়ে বসেছিলেন যুবক। উনিশ বছরের বিশেষ ভাবে সক্ষম শ্রীনিবাস। যদি প্রিয় নায়কের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।
শুধু চোখে পড়াই নয়, প্রিয় নায়ক বিরাট কোহলির কাছে থেকে উপহারও পেয়ে গেলেন শ্রীনিবাস। ব্যাটিং অনুশীলন সেরে যখন কোহলি বড় মাঠের দিকে যাচ্ছেন ফিল্ডিং প্র্যাক্টিস করতে, তখনই তাঁর নজর চলে যায় হুইলচেয়ারে বসা ভক্তের দিকে। দেখেই এগিয়ে গেলেন কোহলি। হাতে ধরা নিজের ছবির দিকে ইঙ্গিত করে জানতে চান, ‘‘তুমি কি চাও আমি ছবিটাতে অটোগ্রাফ করে দিই?’’ শ্রীনিবাস খুশি মনে মথা নাড়তেই ছবিতে সই করে দেন কোহলি। দাঁড়িয়ে কিছু ক্ষণ কথা বললেন ভক্তের সঙ্গে। বিশেষ উপহার পেয়ে স্বপ্ন পূরণ হল যেন শ্রীনিবাসের। পরে বলছিলেন, ‘‘আমার বয়স উনিশ। ক্রিকেটের ভক্ত। অনেক দিন ধরেই ক্রিকেট দেখছি। বিরাট কোহলি আমার সব চেয়ে প্রিয়।’’
শ্রীনিবাস যে নিয়মিত ভাবে খেলা দেখেন এবং কোহলির ব্যাটিং সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল, দ্রুতই প্রমাণ পাওয়া গেল। কেন কোহলিকে ভাল লাগে? একটুও না ভেবে ভক্তের জবাব, ‘‘ওঁর কভার ড্রাইভের জন্য। সারাদিন ধরে আমি ওই একটা শট দেখে যেতে পারি।’’ কোহলি ছাড়া আর কোন ক্রিকেটারকে ভাল লাগে? এ বারও উত্তর দিতে সময় নিলেন না তিনি, ‘‘এম এস ধোনি।’’ বৃহস্পতিবার কোহলির সঙ্গে দেখা করার স্বপ্নপূরণ হল। ধোনির সঙ্গে দেখা হওয়া এখনও বাকি রয়েছে। সামনের বছর আইপিএলের সময় ধোনির সঙ্গে দেখা করতে চান।
ভারতীয় দলের হাবভাব দেখে অবশ্য মনে হল, বৃহস্পতিবার থেকেই ম্যাচে মনোনিবেশ করতে শুরু করেছেন সকলে। কোহলি বরাবরের মতো ক্রিকেট-সাধনায় মগ্ন। কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় ব্যস্ত থাকলেন। তার পরে রাহুলের সতর্ক দৃষ্টির সামনে আলাদা ভাবে শর্ট বলের বিরুদ্ধে ব্যাটিং অনুশীলন করলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জশ হেজ্লউড রয়েছে। দক্ষ পেস আক্রমণ। তাঁরা শর্ট বলে পরীক্ষা নিতে পারে ভারতের। কোহলি ছাড়া অন্যদেরও দেখা গেল একই অনুশীলন করছেন। তবে শুভমন গিল না আসায় হাল্কা করে হলেও প্রশ্ন ঘোরাফেরা করল, তা হলে কি গিল সুস্থ নন? ভারতীয় শিবির থেকে অবশ্য জানানো হল, গিল ঠিকই আছেন। বাধ্যতামূলক অনুশীলন ছিল না বলে নাকি আসেননি।
যুজ়বেন্দ্র চহাল এবং অক্ষর পটেলকে টপকে শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাওয়া অশ্বিন এমনিতেই শিরোনামে ছিলেন। যেখানে যাচ্ছেন, ক্যামেরা তাঁর উপরে। চেন্নাই তাঁর শহর, আরও বেশি করে নজর তাঁর উপরে। যদি বিশ্বের কোথাও কোনও অধিনায়ক অশ্বিনকে প্রথম একাদশে চান, সেটা চেন্নাই। এখানকার স্পিন-সহায়ক বাইশ গজে তাঁকে ছাড়া যদি নামে ভারত, নিউ জ়িল্যান্ডের ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেওয়ার চেয়েও বড় অঘটন হবে। হয়তো তিনি— অশ্বিনও ইঙ্গিত পেয়েছেন। যে ভাবে এক পরিচিতের (পুরুষ বন্ধু) দিকে তাকিয়ে ফ্লাইং কিস ছুড়লেন, সচরাচর এই মেজাজে তাঁকে দেখা যায় না।
বাইশ গজ নিয়ে আগ্রহ যথারীতি তুঙ্গে। অস্ট্রেলিয়াও সন্ধের দিকে অনুশীলনে এসেই পিচ দেখতে ছুটল। বল ঘুরতে পারে আভাস পেলে তিন স্পিনারেও নামতে পারে ভারত। জাডেজা, কুলদীপের সঙ্গে অশ্বিন। দুই পেসার বুমরা ও সিরাজ। সঙ্গে হার্দিক পাণ্ড্য। ভারতীয় দল যে দীর্ঘ লেজ নিয়ে চিন্তিত এবং সুরাহা খুঁজছে, সেটাও দেখা গেল। বুমরাদের আগে নেটে পাঠানো হল এবং দীর্ঘ ক্ষণ ব্যাট করানো হল। কে জানে বাবা, অস্ট্রেলিয়া যদি বড় স্কোর তুলে দেয় আর শেষ পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস নাটক চলে। তখন বুমরা, অশ্বিন বা কুলদীপদের ব্যাটিংটাও যে দরকার পড়বে!