Sachin Tendulkar

আফ্রিদি সুইং করাবে, তবে আমাদের ব্যাটিংটাও সেরা: সচিন তেন্ডুলকর

২০১১-তে শেষ বার কাপ জেতার পরে তাঁকে কাঁধে চড়িয়ে ঘুরিয়েছিলেন কোহলিরা। তার পর আর বিশ্বকাপ হাতে ছবি ওঠেনি। এগারো বছরের খরা কি দূর হবে? একান্ত সাক্ষাৎকারে সচিন তেন্ডুলকর।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৩৭
Share:

সচিন তেন্ডুলকর। ফাইল চিত্র।

আর মাত্র কয়েকটা দিন। ২৩ অক্টোবর পাক দ্বৈরথ দিয়ে শুরু রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের বিশ্বকাপ অভিযান। কতটা তৈরি ভারত? ২০১১-তে শেষ বার কাপ জেতার পরে তাঁকে কাঁধে চড়িয়ে ঘুরিয়েছিলেন কোহলিরা। তার পর আর বিশ্বকাপ হাতে ছবি ওঠেনি। এগারো বছরের খরা কি দূর হবে? আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সচিন তেন্ডুলকর। জানালেন, বিশ্বকাপ নিয়ে তাঁর ভাবনা।

Advertisement

প্রশ্ন: যশপ্রীত বুমরা নেই। কতটা প্রভাব পড়তে পারে ভারতের বিশ্বকাপ অভিযানে?

সচিন তেন্ডুলকর: বুমরা দলের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড়। বিশ্বের অন্যতম সেরা, সন্দেহ নেই। তাই ওর অনুপস্থিতি নিশ্চয়ই বড় ক্ষতি। একইসঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই, দল কিন্তু এটা মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। একটা জায়গায় আটকে থাকলে তো চলবে না। মনে রাখতে হবে বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে দল।

Advertisement

প্র: বুমরার অভাব কি সত্যিই মেটানো সম্ভব?

সচিন: বুমরার পরিবর্ত যাকে বাছা হয়েছে, সে-ও কিন্তু যথেষ্ট দক্ষ, অভিজ্ঞ। এমন এক জন যে কি না আগে যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছে। মহম্মদ শামি খুবই যোগ্য পরিবর্ত এবং বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে দারুণ কিছু করে দেখানোর ক্ষমতা রাখে।

প্র: সকলের মনে এখন একটাই প্রশ্ন। ভারত কি বিশ্বকাপ জিততে পারবে? কতটা আশাবাদী আপনি?

সচিন: আমি খুবই আশাবাদী। বিশ্বকাপ জেতার খুব ভাল সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের। দলটার ভারসাম্য দেখুন। ব্যাটিং লাইন-আপ এই বিশ্বকাপের সেরা। বোলিং বেশ ভাল। তারুণ্য যেমন রয়েছে, তেমনই আছে অভিজ্ঞতা। সব মিলিয়ে দারুণ ভারসাম্য। এই টিম কাপ জেতার দাবিদার না হলে কারা হবে?

প্র: আপনার ফেভারিট কারা? আপনার মতে, চার সেমিফাইনালিস্ট কারা হতে পারে?

সচিন: ভারতের গ্রুপ থেকে ভারত, পাকিস্তান। অন্য দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড। ডার্ক হর্স নিউজ়িল্যান্ড কারণ ওরা সব সময় আইসিসি প্রতিযোগিতায় দারুণ সফল হয়েছে।

প্র: বিশ্বকাপ জিততে গেলে কোন জিনিসগুলো ঠিক করতে হবে?

সচিন: বিশ্বকাপে কোনও বাছবিচার চলে না। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং। তিনটি বিভাগেই ধারাবাহিক ভাবে ভাল করে যেতে হবে। ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে শুরুটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই দরকার মাঝের দিকে ভাল পার্টনারশিপ হওয়া। তেমনই প্রয়োজন শেষের দিকে শক্তিশালী ব্যাটিং। বোলিংয়েও তা-ই। শুরু থেকে শেষ, ভাল করে যেতে হবে। মাঝের দিকে উইকেট তোলা গুরুত্বপূর্ণ হবে। আমার মনে হয় এই বিশ্বকাপে ফিল্ডিং খুব বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। ক্যাচ ধরা তো বটেই, তার সঙ্গে বাউন্ডারি লাইন থেকে রান আউট করার চেষ্টা করতে হবে। আমি বাউন্ডারি লাইন থেকে রান আউটের কথা বিশেষ ভাবে বলছি অস্ট্রেলিয়ায় বড় মাঠ বলে। ব্যাটসম্যানেরা দৌড়ে রান নেওয়ার চেষ্টা বেশি করবে অস্ট্রেলিয়ায়। তাই দূর থেকে থ্রো গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। তবে জানি না, বাউন্ডারি লাইন একই রকম থাকবে নাকি টি-টোয়েন্টি বলে কমিয়ে ছোট করা হবে।

প্র: ভারতীয় ব্যাটিংয়ের উপরে সব সময়ই উচ্চ প্রত্যাশা থাকে। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল। এ বার কি ব্যাটিং মহারথীদের বিশ্বকাপ ঘরে আনার সময় হল?

সচিন: সবাই বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে নেমে সফল হতে চায়। বিশ্বকাপ এখন আগের মতো আর চার বছর অন্তর আসে না। বরং এখন তো প্রতি বছরই বিশ্বকাপ হচ্ছে। যতদূর জানি, ২০২৭ পর্যন্ত এ রকমই চলবে। প্রত্যেক বছরই একটা করে বিশ্বকাপ। যা আগে হয়নি। তাই বিরাট, রোহিতরা বিশ্বকাপের স্বপ্নপূরণ করার যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছে।

প্র: একটা কথা খুব বলা হয় যে, কাগজে-কলমে এই ভারতীয় ব্যাটিং খুব ভাল কিন্তু মোক্ষম সময়ে বড় ম্যাচে সফল হয় না। বিশ্বকাপ জেতেনি, বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল বা ফাইনালে দক্ষতা অনুযায়ী খেলতে পারেনি। কী বলবেন?

সচিন: আমি মনে করি, এই ব্যাটিং বিভাগ খুবই দক্ষ। সর্বোচ্চ স্তরে সফল হওয়ার ক্ষমতা ওদের আছে। সাফল্য, ব্যর্থতা থাকবে, সেগুলো তো খেলার অঙ্গ। ও ভাবে কেউ বলে দিতে পারে না, কাপ জিতবেই বা সেমিফাইনাল বা ফাইনালে গিয়ে এরাই জিতিয়ে দেবে। আমি বলতে চাইছি, ওরা পারে সেমিফাইনাল, ফাইনাল জেতাতে। দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে। সেই দক্ষতা আছে।

প্র: বিশ্বকাপের পাক দ্বৈরথ মানেই সকলের মনে পড়ে ২০০৩ বিশ্বকাপে সেঞ্চুরিয়নে আপনার ইনিংস। এ বারেও রোহিতদের অভিযান শুরু হচ্ছে ২৩ অক্টোবর পাক দ্বৈরথ দিয়ে। কী ভাবে শাহিন শাহ আফ্রিদিদের সামলাবেন রোহিতরা? আপনার পরামর্শ কী?

সচিন: আমি নিশ্চিত, ওরা জানে কী করে সেরা বোলারদের সামলাতে হবে। শাহিন শাহ আফ্রিদি নতুন বলে ব্যাটসম্যানকে আক্রমণ করতে ভালবাসে, উপরে-উপরে বল করে। গতির সঙ্গে সুইং করায়। রোহিত, বিরাটরা ওকে খেলেছে, তাই নিশ্চয়ই ওদের সব কিছু জানাই আছে। আমি শুধু বলব, শুরুর দিকে সতর্ক থাকো। সুইং কেমন হচ্ছে, পিচ কেমন আচরণ করছে, সে সব দেখে নাও। তার জন্য শুরুর দিকে কয়েকটা ওভার বোলারকে দিতে হলে দাও। দিনটা যাতে তোমার হয়, সেটা নিশ্চিত করো।

প্র: ভারতীয় দলে তিন জন স্পিনার। তাদের ভূমিকা কী রকম হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

সচিন: আমাদের তিন জন স্পিনারই খুব ভাল, ইতিবাচক বোলিং করে। সব চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, ওরা উইকেট তুলতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে মাঝের দিকে উইকেট তোলা। আমাদের তিন স্পিনারেরই সেই দক্ষতা রয়েছে, তাই ওরা বড় ভূমিকা নিলে অবাক হওয়ার থাকবে না।

প্র: সূর্যকুমার যাদব যেন স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন। আপনি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে খুব কাছ থেকে ওঁকে দেখেছেন। সূর্যের প্রতাপ দেখে কতটা খুশি?

সচিন: দারুণ, দারুণ। আমি বলব, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সূর্য এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গত কয়েক মাসের ধারাবাহিকতা ওকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। সূর্য এখন ব্যাট করলে প্রত্যেকটা শট দেখে বোঝা যায়, নিজের দক্ষতায় কতটা বিশ্বাস চলে এসেছে ওর। এটাই তো আসল। বাইশ গজে দাঁড়িয়ে নিজের মনে-মনে বলতে হবে, আমি পারব। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক, আমি পারব।

প্র: ভারতের অনভিজ্ঞ বোলিং নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। হর্ষল পটেল, আরশদীপ সিংহদের নিয়ে বিশেষ করে। আর শুরুতেই কি না পাকিস্তান ম্যাচ। ওদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

সচিন: অস্ট্রেলিয়ায় সঠিক লেংথ খুঁজে পাওয়া খুব জরুরি। শর্ট বল খুব ভেবেচিন্তে ব্যবহার করতে হবে। আমার মনে হয়, শুরুর দিকে সুইং পেলে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখা যেতে পারে। শুরুতে অন্তত, নতুন বলে উপরে-উপরে বল করাটাই সঠিক স্ট্র্যাটেজি হবে বলে আমার মনে হয়। পাকিস্তান ভাল দল, ওদেরও ভারসাম্য আছে। বোলারদের রণনীতি খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে।

প্র: ভারতীয় বোলারদের শেষের ওভারগুলিতে বোলিং নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দেশের মাঠে সিরিজ়েও ১৮, ১৯, ২০তম ওভারে অনেক রান দিয়ে ম্যাচ হেরেছে দল। এটা কি চিন্তার কারণ নয়?

সচিন: টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটটাই এমন যে, শেষের দিকে ব্যাটসম্যানেরা আক্রমণাত্মক ঢংয়ে রান তুলবেই। ১৮, ১৯, ২০ ওভারে রান হওয়া তাই বিচিত্র কিছু নয়। হর্ষল, আরশদীপদের নিয়ে এখনই এতটা হতাশ হওয়ারও কোনও কারণ নেই।

প্র: কী ভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে চাপ সামলাতে পারেন হর্ষল, আরশদীপরা?

সচিন: আমার মনে হয়, ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে যে পরিকল্পনা করে নামছে বোলাররা, সেটা ধরে রাখা খুব জরুরি। দু’টো বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি হলেই বিভ্রান্ত হলে চলবে না। বিশ্বাস ধরে রাখতে হবে যে, আমার এই স্ট্র্যাটেজি ঠিক কাজে দেবে। একটা ছক্কা খেলেই হতাশ হলে চলবে না। সেই ছক্কাটা ব্যাটসম্যানের আগ্রাসী শট খেলার দক্ষতাতেও তো হতে পারে। বোলার হয়তো ঠিকই বলটা করেছিল। এই ফর্ম্যাটে যেটা হতেই পারে। মাথাটা পরিষ্কার রাখা খুব দরকার, বিভ্রান্ত হয়ে পড়লে তার ছাপ বোলিংয়েও পড়বে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement