তারকা-আকর্ষণ: ওভালে প্রথম ওয়ান ডে দেখতে হাজির হরভজন। নিজেই তুলে দিলেন এই ছবি। ছবি ফেসবুক।
স্পিনের দেশ ভারতের হয়ে দেশে, বিদেশে নিয়মিত ভাবে টেস্ট ক্রিকেটে খেলে যাওয়া সম্ভবত শেষ স্পিনার। ইডেনে স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়াকে চূর্ণ করার পাশাপাশি হেডিংলি বা কেপ টাউনেও প্রতিপক্ষকে যিনি ভাঙতে পারতেন। আর এখন বিদেশের মাঠে ভারতীয় একাদশে জায়গা হয় না সেরা স্পিনারেরই। কী বলছেন তিনি? ভারতের এজবাস্টন হার নিয়েই বা তাঁর বিশ্লেষণ কী? ইংল্যান্ডে ছুটি কাটানোর মধ্যেই কয়েক দিন আগে ফোনে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় হরভজন সিংহ। সর্দারের বরাবরের সেই সোজাসাপ্টা ভঙ্গি। আজ প্রথম কিস্তি...
প্রশ্ন: জুলাই যেন ক্রিকেট তারকাদের জন্মদিনের মাস। আপনারটা মাসের শুরুতেই ছিল। কেমন কাটালেন?
হরভজন সিংহ: ফেরিতে গিয়েছিলাম। পুরো পরিবার নিয়ে। ক্রিকেট খেলার সময় তো সে ভাবে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো হত না, জন্মদিন পালনও হত ক্রিকেট সতীর্থদের সঙ্গেই। এখন সেই সুযোগটা হয়, তাই চেষ্টা করি এই মুহূর্তগুলো পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করার। আমার মেয়ের জন্মদিনও গেল ১০ জুলাই। আর আপনি একদম ঠিকই বলেছেন, জুলাই তো দেখছি ক্রিকেটারদের বার্থডে মাস। ধোনি, দাদা, তার পর সানি ভাইয়ের জন্মদিনও গেল।
প্র: ভারতীয় দলও তো ইংল্যান্ডে। দেখছেন খেলা? এজবাস্টনে জেতা টেস্ট হেরে গেল দল। কী বলবেন?
হরভজন: আমি এজবাস্টন টেস্ট দেখার সুযোগ পাইনি সে ভাবে। শুধু স্কোরকার্ড দেখেছি। যে ভাবে এত বড় রান ইংল্যান্ড এত সহজে তাড়া করে দিল, বেশ অবাক হয়েছি। জানি, এখন রানস্কোরিং অনেক দ্রুত হয়ে গিয়েছে। তার উপরে ইংল্যান্ডের কোচ এখন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। অতি আগ্রাসী ক্রিকেটই যার মন্ত্র। ম্যাকালাম নিজেও ইতিবাচক, আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতেই ক্রিকেট খেলত। ওরা নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪০০ রান তাড়া করে ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে এসেছিল। ভারতের বিরুদ্ধেও যে ভাবে রানটা তাড়া করল, খুবই প্রশংসনীয়। সবই বুঝলাম। কিন্তু এত সহজে ম্যাচটা জিততে দেব কেন? লড়াই করা উচিত ছিল আমাদের।
প্র: অনেক বেশি মরিয়া মনোভাব আশা করেছিলেন ভারতীয় দলের থেকে?
হরভজন: শেষ ইনিংসে ৩৭৮ রান তাড়া করা মোটেও সহজ কথা নয়। আর রানটা ওরা দাপটের সঙ্গে তুলে দিল। কোনও রকম লড়াই-ই যেন দেখাতে পারলাম না আমরা। এটাই অপ্রত্যাশিত। জো রুট, জনি বেয়ারস্টো-রা দারুণ খেলেছে, মানছি। কিন্তু ওদের জীবনকে কঠিন করার জন্য আমরা কী করলাম? সেই প্রশ্নটাও ভেবে দেখতে হবে। আমি চতুর্থ দিনের শেষে দেখলাম, শেষ দিনে ১১৯ রান দরকার। আর শেষ দিন সকালে এগারোটার সময় খেলা শুরু, বারোটার মধ্যে আমার মোবাইলে নোটিফিকেশন এল, খেলা শেষ। রুট আর বেয়ারস্টো তো ওয়ান ডে ম্যাচ খেলে বেরিয়ে গেল। দু’জনেই সেঞ্চুরি করল আর শেষ দিনে এক ঘণ্টার মধ্যে ম্যাচ শেষ করে দিল। আমি ম্যাচ দেখিনি। তাই বলতে পারব না বোলিং কেমন হয়েছে, ফিল্ডিং সাজানোয় গলদ ছিল কি না বা ক্যাপ্টেন্সি কেমন হয়েছে। শুধু স্কোরবোর্ডই দেখেছি আর তা দেখে আমার মনে হয়েছে, ৩৭৮ রান হাতে নিয়ে আরও ভাল লড়াই আশা করাই যায়।
প্র: ম্যাচ না দেখলেও স্কোরকার্ড দেখে এজবাস্টন টেস্ট নিয়ে আপনার রায় তা হলে কী?
হরভজন: ইংল্যান্ডকে কৃতিত্ব দিতেই হবে, যে ভাবে ওরা এত বড় রান শেষ ইনিংসে হেলায় তাড়া করে দেখিয়েছে। তবে আমাদেরও নিশ্চয়ই অনেক কিছু ঠিক হয়নি। আমার মনে হয়, রাহুল দ্রাবিড়কে এটাই সব চেয়ে বেশি ভাবাবে। এজবাস্টনে এত দ্রুতগতিতে, এত একপেশে ভাবে রানটা কী করে তুলে দিল ইংল্যান্ড।
প্র: দল নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। মাত্র এক স্পিনার নিয়ে কেন নামা হল? আপনাদের সময়ে আপনি ও অনিল কুম্বলে বিদেশের মাঠেও টেস্টে একসঙ্গে খেলেছেন, ম্যাচ জিতিয়েছেন। হেডিংলির ঐতিহাসিক জয় সব চেয়ে বড় উদাহরণ। স্পিনের দেশ কি স্পিনকেই উপেক্ষা করছে?
হরভজন: আমি মনে করি, ক্রিকেটের তিনটে ফর্ম্যাটেই এখনও স্পিনারদের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তবে টেস্ট ক্রিকেটে উইকেট নেওয়ার মতো স্পিনার দরকার। উইকেট নেওয়া মানে আমি বলছি না, প্রত্যেক ইনিংসে পাঁচটা নিতে হবে। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে একটা বা দু’টো উইকেট নিলেও খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে। আমাদের উচিত এমন কোনও স্পিনারের উপরে লগ্নি করা, যে কি না এই ধরনের পরিবেশে বল করতে শিখবে। রাহুল দ্রাবিড় এখন ভারতীয় দলের কোচ। লক্ষ্মণও সাহায্য করছে। আমি আশাবাদী, ওরা ঠিক উপযুক্ত কাউকে খুঁজে বার করবে।
প্র: কেমন স্পিনার খুঁজে বার করা দরকার?
হরভজন: এমন কেউ যে বিদেশের মাঠে একার হাতে ম্যাচ জিতিয়ে না দিতে পারুক, অন্তত বড় অবদান রাখতে পারবে। ভারতের মাটিতে তো যে কোনও স্পিনারই উইকেট নিতে পারে। দেশের মাঠে তো এমন ভাবে উইকেট তৈরি হয় যে, তিন-সাড়ে তিন দিনের মধ্যে খেলা শেষ করে দেবে স্পিনাররা। যে কেউ উইকেট পেয়ে যায় ভারতে এসে। জো রুটও পাঁচ উইকেট নিয়ে গিয়েছে ভারতে এসে। মাইকেল ক্লার্ক ছয় উইকেট নিয়েছে। দেশের বাইরে কে পারবে, সেটাই খুঁজে বার করতে হবে।
প্র: বলা হচ্ছে কি না, অশ্বিন বিশ্বের সেরা স্পিনার। অথচ, বিদেশে তাঁকে খেলানো হয় না। একটা-দু’টো নয়, ইংল্যান্ডে পাঁচটা টেস্টের একটিতেও সুযোগ হয়নি অশ্বিনের। অধিনায়ক-কোচ বদল হয়েছে, তাতেও ভাগ্য ফেরেনি তাঁর! কী বলবেন?
হরভজন: আমি সত্যি জানি না, এর কী ব্যাখ্যা। চারশো উইকেট নেওয়া বোলার বিদেশে খেলার সুযোগই পাচ্ছে না। এটা হজম করা একটু কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যদি তোমার হাতে বিশ্বসেরা স্পিনার থাকে, তা হলে খেলাও তাকে। না হলে শুধু শুধু বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছ কেন? একটা ম্যাচও খেলাচ্ছ না মানে তো তোমরা মানছই না ওই পরিবেশে খেলার যোগ্য অশ্বিন। তা হলে তো অন্য কাউকে চেষ্টা করে দেখতে হবে।
প্র: কাকে চেষ্টা করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
হরভজন: কুলদীপ যাদব। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্টে পাঁচ উইকেট নিয়ে বসে আছে। আমার কথা হচ্ছে, যদি অশ্বিনের উপরে আস্থাই না থাকে, ওকে কোনও টেস্টেই খেলানো না হয়, তা হলে নতুন স্পিনার খুঁজে বার করো। তবে আমি টিম ম্যানেজমেন্টে থাকলে অশ্বিনকে খেলাতাম, ওর পাশে থাকতাম। তার পর ও যদি ভাল না করত, বিকল্প ভাবতাম। স্কোয়াডে নিয়ে যাচ্ছ, অথচ খেলাচ্ছ না— এটা অশ্বিনের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের সম্মানের জন্যও তো ভাল নয়। (চলবে)