যে সমস্ত বৈদ্যুতিক গাড়ি শীঘ্রই বাজারে আসার কথা, সেগুলিরও দাম ১৫-২০ লক্ষ টাকা। —প্রতীকী চিত্র।
ছ’মাসের মধ্যে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম পেট্রল-ডিজ়েল গাড়ির সমান হবে বলে সম্প্রতি দাবি করেছেন সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। কিন্তু তা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বাজারে যে চার চাকার বৈদ্যুতিক গাড়িগুলি রয়েছে, তার মধ্যে দু’টি বাদে ১০ লক্ষ টাকার নীচে এই গাড়ি পাওয়া দুষ্কর। এমনকি যে সমস্ত বৈদ্যুতিক গাড়ি শীঘ্রই বাজারে আসার কথা, সেগুলিরও দাম ১৫-২০ লক্ষ টাকা। সেখানে এখনও ৬-৭ লক্ষে বহু পেট্রল-ডিজ়েল গাড়ি মেলে। গাড়ি সংস্থাগুলিও ডিলারদের দাম কমার কোনও তথ্য দেয়নি বলে জানাচ্ছেন কলকাতার একাধিক বিক্রেতা। তাঁদের বক্তব্য, দু’রকম গাড়ির দাম সমান হতে গেলে বৈদ্যুতিকের দাম ৫-৭ লক্ষ টাকা কমাতে হবে। যা বাস্তবোচিত নয়।
পূর্ব ভারতের টাটা মোটরসের অন্যতম ডিলার সংস্থার কর্ণধার রোহিত চৌধুরী বলছেন, এখন বিক্রি হওয়া প্রতি ১০-১২টি গাড়ির একটি বৈদ্যুতিক। দামই তার চাহিদা বৃদ্ধির পথে অন্যতম বাধা। ফাডার তথ্য বলছে, দেশে বিক্রি হওয়া গাড়ির ১২%-১৩% বৈদ্যুতিক। এ রাজ্যে তা ৩.০২%। কলকাতায় অন্য এক টাটা ডিলারের কর্ণধার জানান, বৈদ্যুতিকে জিএসটি কম। কিন্তু তার পরেও তার যা দাম, তাতে পথকর ইত্যাদি ধরে ক্রেতার খরচ অনেকটাই বেশি।
একটি গাড়ি সংস্থার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, “মূলত প্রযুক্তি ও ব্যাটারি খরচ যতদিন না কমছে, ততদিন দাম কমানো সম্ভব নয়। আশা, দু’বছরে কিছুটা উন্নতি হবে। দাম কমতে পারে ২০%-২৫%।’’ গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়াম আগেই বলেছে, বৈদ্যুতিকের বিক্রি বেড়েছে, কমেছে দামও। ২০২২ সালে বাজারে ১৯টি মডেলের চার চাকা ছিল। ২০২৪-এ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৭টি। যদিও দু’ধরনের গাড়ির দাম নিয়ে মন্তব্য করেনি তারা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি গত পাঁচ বছরে বহুগুণ বেড়েছে। কিন্তু এখনও পেট্রল-ডিজ়েলের মতো প্রথাগত জ্বালানির গাড়ির তুলনায় তা পিছিয়ে। দেশে গত মাসে প্রায় ৯০০০টি বৈদ্যুতিক চার চাকা বিক্রি হয়েছে। পেট্রল-ডিজেলের ক্ষেত্রে তা প্রায় ৩.০৪ লক্ষ। বৈদ্যুতিকের চাহিদা দেশে ধীরে ধীরে বাড়ছে ঠিকই। কিন্তু মন্ত্রীর দাবি মতো ছ’মাসেই দাম প্রথাগত জ্বালানির গাড়ির সমান হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
গডকড়ীর আরও দাবি, তেল আমদানি কমানো, দূষণহীন ও দেশীয় গাড়ি উৎপাদন বাড়াতে পরিকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তি নির্ভর পরিবেশবান্ধব গণপরিবহণ গড়ায় জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। যদিও বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম ক্রমশ কমছে মেনেও গাড়ি ডিলারদের সংগঠন ফাডা-র সভাপতি সিএস বিজ্ঞেশ্বর জানিয়েছেন, সম্প্রতি নানা কারণে ভারত-সহ বিশ্বজুড়ে তার বিক্রি ক’মাস ধরে কমেছে। তাই প্রসার বাড়াতে হলে আগে ব্যাটারির দাম, চার্জিং স্টেশন-সহ সামগ্রিক পরিকাঠামোর আরও উন্নতি প্রয়োজন।