আলোচনায়: আজ রেহানের দিকে তাকিয়ে ইংল্যান্ড। ছবি: টুইটার।
ছেলেটার বয়স তখন কত হবে। বছর চোদ্দো মতো। ওই বয়সেই হঠাৎ করে ইংল্যান্ডের নেটে বল করার সুযোগ এসে গিয়েছিল তার সামনে। স্পিনের বিরুদ্ধে অনুশীলন করার জন্য এই খুদে ক্রিকেটারকে বেছে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। যে কারণে ২০১৬ সালে, লর্ডসে ইংল্যান্ডের নেটে বল করতে নেমেছিল লেগস্পিনার রেহান আহমেদ।
‘‘তার পরে কী হয়েছিল জানেন?’’ রেহানের সেই কাহিনি বলতে বলতে প্রশ্নটা করে বসলেন খুদে ক্রিকেটারের ছোটবেলার কোচ তথা মেন্টর রহিম আলি। রহিমের মুখ থেকেই এর পরে জানা গেল রেহানের কীর্তির কথা। সে দিন ইংল্যান্ডের নেটে তিন ব্যাটারকে আউট করেছিল রেহান। সেই তিন ব্যাটারের নাম— বেন স্টোকস, অ্যালিস্টেয়ার কুক এবং জো রুট!
তখন থেকেই ইংল্যান্ডের ক্রিকেট কর্তাদের নজরে পড়ে গিয়েছিল রেহান। ফলে নটিংহ্যামশায়ার, লেস্টারশায়ারের দ্বিতীয় দলে খেলে সোজা ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে। এই সাড়ে সতেরো বছরের তরুণ ক্রিকেটারের নির্বাচন যে ভুল ছিল না, তা বোঝা গিয়েছে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে। শেষ ওভারের আগের ওভারে রেহানের হাতে বল তুলে দেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক টম প্রেস্ট। পরের ছ’বলে তিন উইকেট নিয়ে ২৪ বছর পরে ইংল্যান্ডকে ফাইনালে তুলে দেন রেহান।
কিন্তু ম্যাচ ঘোরানো ওভার করেও খুশি হতে পারেননি তরুণ লেগস্পিনার। লন্ডন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে রহিম বলছিলেন, ‘‘ম্যাচের পরে আমাকে ফোন করেছিল রেহান। সেমিফাইনালে প্রথম পাঁচটা ওভার কিন্তু ও সে রকম নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। যে কারণে ম্যাচ জেতালেও নিজের বোলিং নিয়ে একেবারে খুশি নয় রেহান।’’ আরও একটা কথা জানাচ্ছেন মেন্টর। ‘‘ভাল বল না করতে পারলেও ওই ওভারটা কিন্তু নিজেই চেয়ে নিয়েছিল রেহান। জানত, ওর ক্ষমতা আছে ওখান থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার,’’ বলছিলেন রহিম। যোগ করেন, ‘‘ওর সবচেয়ে বড় অস্ত্র কী জানেন? মানসিক দৃঢ়তা। কখনও ঘাবড়ে যায় না। না হলে অত অল্প বয়সে ইংল্যান্ডের নেটে বল করতে নেমে কেউ স্টোক, কুক আর রুটের মতো ব্যাটারকে ফিরিয়ে দিতে পারে?’’
এ বার সামনে ভারত। যে দলের ব্যাটাররা স্পিন খেলতে পটু। ভারতের বিরুদ্ধে কি চাপে থাকবে রেহান? ছাত্রের উপরে সম্পূর্ণ ভরসা আছে রহিমের। বলছিলেন, ‘‘উপমহাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে ওর ভাল ধারণা আছে। রেহানের বাবা পাকিস্তানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছে। আমি ওকে বলেছি, উল্টো দিকে কে আছে না ভেবে নিজের বোলিংটা করে যাও। ফাইনালে কিন্তু ইংল্যান্ডের বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে রেহান।’’ কোচের কথা থেকে পরিষ্কার, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এক তরুণ স্পিনারই এখন ইংল্যান্ডের স্বপ্নের কান্ডারি।