রোহিত শর্মা। ছবি: এক্স (টুইটার)।
হায়দরাবাদে ইংল্যান্ডের কাছে চার দিনেই হেরে গেল রোহিত শর্মার ‘চোকার্স’ ভারত। সিরিজ় শুরুর আগে ‘বাজ়বল’ (ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলাচ্ছেন দলকে। যে হেতু তাঁর ডাকনাম ‘বাজ়’, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটকে বাজ়বল বলা হচ্ছে।) নিয়ে তোপ দাগা ভারতীয় দল নিজেদের পাতে স্পিনের ফাঁদেই আটকে গেল। ইংল্যান্ডের ‘বাজ়বল’ ক্রিকেট রুখে দিয়েও তাদের ‘অখ্যাত’ স্পিনারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করলেন ভারতীয় ব্যাটারেরা। সঙ্গে রোহিতের দলের একাধিক ক্রিকেটারের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং। স্টোকসদের জয় কিছু ক্ষণ ঠেকিয়ে রাখেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং শ্রীকর ভরত। সেই চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। ২৮ রানে হেরে সিরিজ় শুরু করলেন রোহিতেরা।
জয়ের লক্ষ্য বেশি ছিল না। ২৩১। হায়দরাবাদের ২২ গজও ব্যাট করার অনুপযুক্ত ছিল না। সকালেই প্রমাণ করে দিয়েছিলেন অলি পোপ। তবু জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করলেন রোহিতেরা। উইকেটে দাঁড়িয়ে টেস্টসুলভ ব্যাটিং করার মানসিকতা দেখা গেল না কারও মধ্যে। লাল বলের ক্রিকেটে শুভমন গিলকে (শূন্য) নিয়ে ভাবার সময় এসে গিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ তিন নম্বর জায়গায় ভরসা দিতে পারছেন না। তাঁর আগে ব্যর্থ হলেন আর এক তরুণ ব্যাটার যশস্বী জয়সওয়ালও (১৫)। ৪২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। সেই চাপ আরও বাড়ল অধিনায়ক রোহিতও (৩৯) দ্রুত আউট হওয়ায়। পরিস্থিতি সামলাতে নামিয়ে দেওয়া হয় অক্ষর পটেলকে। লোকেশ রাহুলের সঙ্গে ডানহাতি-বাঁহাতি জুটি তৈরি করার জন্যই রাহুল দ্রাবিড়েরা নামিয়েছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে। চা বিরতি পর্যন্ত দলের আস্থার মর্যাদা দেন অক্ষর (১৭)। বিরতির পর নেমে আর রান যোগ করতে পারলেন না। রাহুলের (২২) ব্যাটও ভরসা দিল না এ দিন। তাঁকে আউট করলেন জো রুট। ভারতের প্রথম পাঁচ ব্যাটারের চার জনকেই আউট করলেন ইংল্যান্ডের তরুণ স্পিনার টম হার্টলে। অভিষেক টেস্টেই ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন তিনি। ৬২ রানে ৭ উইকেট নিলেন তিনি।
হায়দরাবাদের পিচে চতুর্থ দিন সকাল থেকেই স্পিনারেরা সাহায্য পাচ্ছিলেন। স্টোকস তাই বোলিং আক্রমণ শুরুই করেছিলেন রুটকে দিয়ে। বলের পালিশ তোলার জন্য মার্ক উডকে অল্প বল করালেও তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে স্পিনের ফাঁদে ফেলা। সেই ফাঁদে পা আটকে ছটফট করলেন রোহিতেরা। শ্রেয়স (১৭) আবার ব্যর্থ। উইকেট ছুড়ে দিলেন রবীন্দ্র জাডেজা (২)। প্রথম ইনিংসে তাঁর জন্যই রান আউট হতে হয় রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। ১১৯ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ভারতের জয়ের আশা কার্যত শেষ হয়ে যায়। শেষ দিকে কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেন শ্রীকর ভরত এবং অশ্বিন। ভরত আউট হলেন ২৮ রান করে। তাঁদের অষ্টম উইকেটের জুটিতে উঠল ৫৭ রান। পর পরই অশ্বিনও আউট হলেন ২৮ রান করে। শেষে মহম্মদ সিরাজ আউট হলেন ১২ রান করে। যশপ্রীত বুমরা অপরাজিত থাকলেন ৬ রানে। হার্টলে ছাড়া ১টি করে উইকেট পেলেন রুট এবং জ্যাক লিচ।
এর আগে রবিবার মধ্যহ্নভোজের বিরতির আগে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ৪২০ রানে। অল্পের জন্য দ্বিশতরান হাতছাড়া করেন অলি পোপ। ২১ চারের সাহায্যে ১৯৬ রান করেন তিনি। মূলত তাঁর এই ইনিংসের সুবাদেই ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বেন স্টোকসেরা। ২৭৮ বলের ইনিংসে পোপ মেরেছেন ২১টি চার। দলের শেষ ব্যাটার হিসাবে বুমরার বলে আউট হন তিনি। ২৪৬ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। ভারত ৪৩৬ রান করায় ১৯০ রানে পিছিয়ে পড়েন স্টোকসেরা। লড়াইয়ে থাকতে অন্তত এক জন ইংরেজ ব্যাটারের বড় ইনিংস প্রয়োজন ছিল। দলের হয়ে সেই কাজটাই করলেন পোপ। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ২২ গজের এক দিন শুধু আগলেই রাখলেন না, দলের ইনিংসকে নেতৃত্বও দিলেন। উইকেটের অন্য প্রান্তে ধারাবাহিক ভাবে উইকেট পড়লেও লক্ষ্যে অবিচল থাকার পুরস্কার পেলেন তিনি। টেস্টে নিজের দ্বিতীয় দ্বিশতরান পূর্ণ করতে না পারলেও দলকে পৌঁছে দিলেন ভাল জায়গায়।
শনিবারের আর এক অপরাজিত ব্যাটার রেহান আহমেদ করলেন ২৮ রান। পোপকে সঙ্গ দিলেন অভিষেককারী হার্টলেও। তরুণ স্পিনারের ব্যাট থেকে এল গুরুত্বপূর্ণ ৩৪ রানের ইনিংস। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে সফলতম বুমরা। তিনি ৪১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। ১২৬ রান খরচ করে ৩ উইকেট অশ্বিনের। ১৩১ রান দিয়ে ২ উইকেট জাডেজার। ৭৪ রানের বিনিময়ে ১ উইকেট নিয়েছেন অক্ষর পটেল।