সুযোগ: বিশ্বকাপে সেরাটা দিতে মরিয়া আরশদীপ। ফাইল চিত্র
এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সহজ ক্যাচ ফস্কে গণমাধ্যমে বিদ্রুপের শিকার হয়েছিলেন আরশদীপ সিংহ। এমনকি তাঁর উইকিপিডিয়া পেজ পর্যন্ত বিকৃত করে অসম্মান করার চেষ্টাও হয়। পরের ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শেষ ওভারে দলকে প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিলেন বাঁ-হাতি পেসার। ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে কী ভাবে এতটা মানসিক শক্তি পেলেন আরশদীপ? গণমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে একাধিক অপমানজনক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়াই বা কি ছিল? ভারতের তরুণ পেসারের কোচ এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাসি মুখেই সেই প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন তিনি। দেশের জার্সি গায়ে দিলে নাকি অন্য কিছুই আর মাথায় থাকে না এই তরুণের।
শেষ দু’বছরে আরশদীপের সুইংয়ের উন্নতির নেপথ্যে ছিলেন পঞ্জাব রঞ্জি দলের কোচ সুরেন্দ্র ভাবে। তাঁর প্রশিক্ষণেই দু’দিকে সুইং করাতে শুরু করেন আরশদীপ। অনুশীলন শেষে একটি স্টাম্প রেখে ক্রমাগত ইয়র্কার-প্রস্তুতি চলত তাঁর। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের হারের রাতেই আরশদীপের সঙ্গে ফোনে কথা হয় কোচ সুরেন্দ্রর। কী পরামর্শ দিয়েছিলেন? আনন্দবাজারকে সুরেন্দ্র বলছিলেন, ‘‘ওকে ভিডিয়ো কল করার পরেই বুঝেছিলাম, মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। ওকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, এ ধরনের পরিস্থিতি সকলের জীবনে আসে। আমি নিজে স্লিপে ফিল্ডিং করতাম। একাধিক ভাল ক্যাচও যেমন নিয়েছি, সহজ ক্যাচও ফেলেছি। এটা ক্রিকেটের অঙ্গ।’’ পরের দিনই আরশদীপের উইকি পেজ বিকৃত করার খবর পান কোচ। তখনও ছাত্রের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। সুরেন্দ্রর কথায়, ‘‘আরশদীপ বিষয়টি খুবই হাল্কা ভাবে নিয়েছিল। বলেছিলাম, তোকে নিয়ে অনেকে ভাল টুইটও করেছে। সেগুলো পড়। ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত সকলে ওর পাশে দাঁড়িয়েছে। হরভজন, যুবরাজরা ওকে নিয়ে টুইট করেছে। সেগুলো পাঠিয়েছিলাম। ও তখনই বলেছিল, গণমাধ্যমে কারও মুখ বন্ধ করা যায় না।” যোগ করেন, “আমি তখন বলেছিলাম, শুধুমাত্র পারফরম্যান্স দিয়ে এটা বন্ধ করতে হয়। সামনেই রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দলে সুযোগ পেয়েই ফোন করেছিল। ওর গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর শুনতে পেয়েছি। আমি নিশ্চিত, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আরশদীপ সকলকে গর্বিত করবে। ওর হাতে বাউন্সার আছে। যা এশিয়া কাপে খুব একটা দেখা যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার পিচে সেটাও অস্ত্র হতে পারে।’’
আরশদীপের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার খবরে মোহিত তাঁর প্রথম অধিনায়ক মনদীপ সিংহও। বলছিলেন, ‘‘ওকে ছোট ভাইয়ের মতো দেখি। পঞ্জাব কিংস দলে কে এল রাহুল ও অনিল কুম্বলে স্যর ওকে দেখেই বুঝেছিল, ছেলেটির মধ্যে সাহস প্রচুর। চাপের মধ্যে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে। কিন্তু পাক ম্যাচে হারের পরে যে ঘৃণ্য মন্তব্য ওকে শুনতে হয়েছে, তা মানা যায় না। ওর সঙ্গে প্রায় রোজই আমার কথা হয়। এই ঘটনার পরের দিন খুব ভেঙে পড়েছিল। মানসিক ভাবে শক্তিশালী না হলে এ ধরনের ঘটনা একজন ক্রিকেটারের জীবন শেষ করে দিতে পারে। আরশদীপ মানসিক ভাবে ভীষণ শক্তিশালী। বলেছিল, একটা ভাল পারফরম্যান্স করে সব সমস্যা মিটিয়ে দেবে। আমি নিশ্চিত, বিশ্বকাপে ও জ্বলে উঠবে।’’
আরশদীপের মা বলজিৎ কৌর তাঁর ছেলের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট। গণমাধ্যমে ছেলেকে নিয়ে এত কটূ মন্তব্যের পরেও তাঁর মুখে হাসি রয়েছে অমলিন। ফোনে বলছিলেন, ‘‘ক্যাচও যেমন ফেলেছে, তেমনই ক্রিকেটবিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছে, শেষ ওভারে সাত রান হাতে নিয়েও ম্যাচ টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। ও বরাবরই ইতিবাচক থাকতে পছন্দ করে। গণমাধ্যমে তো আর জনে জনে গিয়ে বলা সম্ভব নয়, আপনারা এই মন্তব্য করা বন্ধ করুন। যা করার ওকেই করতে হবে। আমি নিশ্চিত ও পারবে। বলই হবে ওর অস্ত্র।’’