শাকিব আল হাসান। —ফাইল চিত্র।
নিজের দেশে ফিরতে পারছেন না। বাংলাদেশে ফিরলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে। তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সব কিছু হয়েছে রাজনীতির কারণেই। আওয়ামী লীগের হয়ে ভোটে জিতেছিলেন। সেই সাংসদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা হয়েছে। শাকিব আল হাসান তবুও রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ভুল বলতে নারাজ।
‘ডেইলি সান’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাকিব জানিয়েছেন তাঁর রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়া যদি ভুল হয়ে থাকে, তা হলে ভবিষ্যতে যারা রাজনীতিতে যোগ দেবে, তাদের সিদ্ধান্তটাও ভুল হবে। কোনও চিকিৎসক, উকিল, ব্যবসায়ী যদি রাজনীতিতে যোগ দেয়, তা হলে সেই সিদ্ধান্তটাও ভুল বলে ধরতে হবে। কিন্তু যে কোনও ব্যক্তি রাজনীতিতে যোগ দিতে পারে। সেটা তার অধিকার। মানুষ তাকে ভোট দেবে কি না সেটা তার সিদ্ধান্ত।”
শাকিবের সংযুক্তি, “রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল। যখন যোগ দিয়েছিলাম, তখনও সঠিক ছিল, এখনও সঠিক। আমি মাগুরার হয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম। সেখানকার মানুষ আমাকে চেয়েছিল। আমার মনে হয়, এখনও যদি ভোটে দাঁড়াই তাহলেও আমিই জিতব। এটা নিয়ে কারও কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না। ভোটে লড়েছিলাম মাগুরার মানুষদের জন্য কাজ করব বলে। মানুষ সেই সুযোগ আমাকে দিয়েছিল। দুর্ভাগ্য, আমি যে ভাবে চেয়েছিলাম, সেই ভাবে কাজ করতে পারিনি।”
মাত্র ছ’মাস রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরেছিলেন শাকিব। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাজনীতি করেছি মাত্র ছ’মাস। ভোটের পর মাত্র তিন দিন মাগুরা যেতে পেরেছিলাম। চার থেকে পাঁচ মাস ক্রিকেট খেলেছি। দেশের বাইরে ছিলাম। রাজনীতির সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হওয়ার সময় কোথায় ছিল? প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আমাকে বলেছিলেন রাজনীতি করতে হবে না। ক্রিকেটে মন দিতে। আমি তাঁর পরামর্শ মেনেছি। তিনি মনে করেন, আমি যত দিন ক্রিকেট খেলছি, তত দিন সেটাই আমার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ক্রিকেট ছেড়ে আমি সহজেই পুরোপুরি রাজনীতি করতে পারতাম। কিন্তু তেমন ভাবে ভাবিনি। ভেবেছিলাম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলব। আমি রাজনীতিতে হঠাৎ করে ঢুকে পড়তে চাইনি। সময় নিয়ে বুঝে বুঝে এগোতে চেয়েছিলাম। পরিবর্তনটাই নিয়ম। ১০ বছর হোক বা ২০ বছর, কেউ এক জায়গায় থেকে যায় না। এখন যে দল ক্ষমতায় আসবে, এক দিন তাদেরও সরে যেতে হবে। এই ভাবেই চলে। শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা আগে থেকে বলা যায় না।”
রাজনীতি যোগ দেওয়ার পর শাকিবের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। যদিও তা নিয়ে এখনও কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর। ওই সাক্ষাৎকারে শাকিব বলেন, “আমি উকিলের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, মামলাগুলো স্বাভাবিক নিয়মে এগোচ্ছে না। অনেক বেশি তাড়াতাড়ি কাজ হচ্ছে। ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে আমি কখনও ভাবিনি। ব্যবসা, লাভ, ক্ষতি এ সব দেখিনি। আমার মনে হয় না আমি কোনও অপরাধ করেছি। যে ভাবে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, আমি তেমন কোনও কিছুই করিনি। একটা ছবির জন্য আমাকে শাস্তি দেওয়া উচিত নয়। আমার কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। প্রত্যেকের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা আছে। আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই। অনেকেই চায় আমি দেশের হয়ে খেলে অবসর নিই। আরও এক দু’বছর খেলতে পারব আমি। এটা হলে ভাল হয়।”
দেশে ফিরতে চান শাকিব। তার জন্য প্রয়োজন নিরাপত্তা। শাকিব বলেন, “নিরাপত্তা পেলে আমি বাংলাদেশে যেতে চাই। আমার বিরুদ্ধে খুনের মামলা হওয়ায় হতাশ। পরে জানতে পারি, যিনি মামলা করেছিলেন, তিনি নিজেও জানেন না কী করে আমার নাম এই মামলায় জড়িয়েছে। আমার কাছে প্রমাণ আছে যে, আমি নির্দোষ। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল হয়ে গিয়েছে। অনেক ধরনের মানুষ দেখছি, চিনছি।”