বাবর আজ়ম। —ফাইল চিত্র।
একটা জয় আর একটা হার হঠাৎ করে বিশ্বকাপের শেষ চারের অঙ্কটা আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জয় আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নিউ জ়িল্যান্ডের হারে হিসাব কিছুটা বদলে গিয়েছে। শনিবার বেঙ্গালুরুতে পাকিস্তান যদি নিউ জ়িল্যান্ডকে হারাতে পারে, তা হলে বাবর আজ়মরা রয়ে যাবেন শেষ চারে ওঠার দৌড়ে। না হলে প্রায় বিদায় ঘটে যাবে পাকিস্তানের।
বিশ্বকাপের শুরুতে পর পর দু’টো ম্যাচ জেতার পরে টানা চারটি ম্যাচে হেরে যায় পাকিস্তান। তার পরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জেতেন বাবররা। পাকিস্তানের ডিরেক্টর অব ক্রিকেট মিকি আর্থার আবার খারাপ খেলার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলেছেন। এ দিন বেঙ্গালুরুতে সাংবাদিক বৈঠকে এসে আর্থার বলেন, ‘‘আমরা খুবই কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছি। যা আমাদের কাজটা আরও কঠিন করে দিয়েছে। যেন মনে হচ্ছে, আমরা সেই কোভিডের যুগে ফিরে গিয়েছি। যেখানে ক্রিকেটারদের হোটেলের একটা নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হত না।’’ যোগ করেন, ‘‘নিরাপত্তার এতটাই কড়াকড়ি যে, আমাদের ক্রিকেটারদের প্রাতরাশও করতে হচ্ছে আলাদা ঘরে।’’ কিন্তু কথা হল, অনেক জায়গাতেই এত কড়াকড়ি কিছু দেখা যায়নি। এর আগে কলকাতায় এসে যেমন বাবর আজ়ম এবং ইমাম উল হক সন্ধ্যায় হাঁটতে গিয়েছিলেন ইকো পার্কে।
আর্থার আরও বলেছেন, ‘‘আমাদের ছেলেরা ঘোরাঘুরিতে অভ্যস্ত। অতীতে দীর্ঘসময় সফর করলেও ক্রিকেটাররা নিজেদের মর্জিমতো বাইরে খেতে পারত, ঘুরতে পারত। কিন্তু এ বার সেটা হচ্ছে না। যার ফলে একটা দমবন্ধকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। যা সামলানো কঠিন।’’ তবে অনেকেই মনে করেন, ভারতের মাটিতে যে এই ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে, সেটা অবশ্য প্রত্যাশিতই। তার মধ্যে বাড়াবাড়ির কিছু দেখছেন না অনেকে।
একই সঙ্গে পাকিস্তানের খারাপ খেলার নেপথ্যে আরও একটা কারণের কথা বলেছেন মিকি আর্থার। তাঁর ধারণা, ভারতের মাটিতে আইপিএল না খেলাটা কিছুটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের ক্রিকেটারদের কাছে। তবে আর্থার পাশাপাশি এও জানিয়েছেন, সেটাকে কোনও অজুহাত হিসেবে দেখাতে চান না।
সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন করা হয়, আইপিএল না খেলাটা কি পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের কাছে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে? আর্থার জবাব দেন, ‘‘আমি কোনও অজুহাত দিতে চাই না। কিন্তু ব্যাপারটা হল, আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা না থাকার ফলে আমাদের কিছুটা ভুগতে তো হয়েইছে। আর একটা ব্যাপার হল, সব মাঠই আমাদের কাছে নতুন মাঠ। সেটা এক দিক দিয়ে চ্যালেঞ্জের। তবে ক্রিকেটাররা এই চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছে।’’
আর্থার আরও বলেন, ‘‘আমাদের ক্রিকেটাররা টিভি-তে আইপিএল দেখেছে। তা ছাড়া কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদের মতো মাঠে টেস্ট ক্রিকেটও দেখেছে। তাই এই সব মাঠে খেলার জন্য ওরা উৎসাহী হয়েছিল।’’ যোগ করেন, ‘‘এই প্রথম ওরা এই সব মাঠে খেলছে। তাই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে।’’
আর্থার পরিষ্কার জানাচ্ছেন, পাকিস্তান এখনও নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী খেলতে পারছে না। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রতিটা ম্যাচই আমরা জেতার জন্য খেলতে নামি। সত্যিটা হল নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী খেলতেই পারিনি। একমাত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রায় নিখুঁত একটা ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিলাম। আমরা দারুণ ব্যাট করেছি, বল করেছি, ফিল্ডিংও করেছি। তিন বিভাগেই আমরা এর আগে এক সঙ্গে ভাল খেলতে পারছিলাম না।’’ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয়ের থেকে মনোবল খুঁজে চলেছেন আর্থার। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আশা করব, আমরা ঠিক সময় ছন্দে ফিরতে পেরেছি।’’
পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ নিউ জ়িল্যান্ড প্রথম চারটে ম্যাচ জেতার পরে শেষ তিনটে ম্যাচ হেরে চাপের মধ্যে রয়েছে। তার উপরে তাদের শিবির ছোটখাটো হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। ছন্দে থাকা পেসার ম্যাট হেনরি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছেন। তাঁর জায়গায় এসেছেন কাইল জেমিসন। কেন উইলিয়ামসন এবং জিমি নিশামেরও চোট। যদিও এ দিন তাঁরা অনুশীলন করেন। আগের ম্যাচে চোটের জন্য খেলতে পারেননি লকি ফার্গুসন। তবে জানা গিয়েছে, তিনি এখন সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতেও নিউ জ়িল্যান্ডের মাঝের সারির ব্যাটসম্যান ড্যারিল মিচেল মনে করেন, নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলে এই ম্যাচে শেষ হাসি হাসবেন তাঁরাই। সাংবাদিক বৈঠকে মিচেল বলেছেন, ‘‘যে ক্রিকেট খেলে আমরা এত দিন সাফল্য পেয়েছি, সেটাই
আমাদের খেলতে হবে। ছোট ছোট ব্যাপারগুলো যদি আমরা দীর্ঘসময় ধরে ঠিক মতো করতে পারি, তা হলে সফল না হওয়ার কোনও কারণ নেই। দলে চোট থাকলেও আমরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসব। সেই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।’’ নিউ জ়িল্যান্ড জিতলে পৌঁছে যাবে ১০ পয়েন্টে। তাদের নেট রানরেটও ভাল। সে ক্ষেত্রে শেষ চার নিশ্চিত হয়ে যাবে কেন উইলিয়ামসনদের।
আজ বিশ্বকাপে: পাকিস্তান বনাম নিউ জ়িল্যান্ড (সকাল ১০.৩০ থেকে। স্টার
স্পোর্টস নেটওয়ার্কে)।