বিরাট কোহলীকে আউট করে মদুশঙ্কের উচ্ছ্বাস। ছবি: রয়টার্স
মাত্র চার ম্যাচ আগে শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে তাঁর। ঝুলিতে অভিজ্ঞতা বলতে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিলিয়ে মাত্র ১১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সেই দিলশান মদুশঙ্ক নাচিয়ে ছাড়লেন বিরাট কোহলীকে। এশিয়া কাপের ম্যাচে মদুশঙ্কের ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বলের লাইন মিস করে বোল্ড হলেন কোহলী। পরে ঋষভ পন্থ ও দীপক হুডার উইকেটও নিলেন তিনি। অথচ মদুশঙ্কের বাবা চাইতেন না ছেলে ক্রিকেট খেলুক। লুকিয়ে খেলতে যেতেন তিনি। এমনকি, খেলার জন্য লেখাপড়াও ছেড়ে দেন এই বাঁ হাতি জোরে বোলার।
শ্রীলঙ্কার দক্ষিণে হাঙ্গামা নামের একটি জেলায় জন্ম মদুশঙ্কের। ছোট থেকেই ক্রিকেট ভালবাসতেন। তাঁর বাবা ক্রিকেট পছন্দ করতেন না। চাইতেন না ছেলে ক্রিকেট খেলুক। মদুশঙ্ক খেলতে গেলে বকাবকি করতেন। কিন্তু মায়ের প্রশ্রয় ছিল। মায়ের সাহায্যে বাবাকে লুকিয়ে খেলে বেড়াতেন কিশোর মদুশঙ্ক।
সারা দিন খেলে বেড়ানোর প্রভাব পড়েছিল লেখাপড়ায়। একাদশ শ্রেণিতে ওঠার পরে আর লেখাপড়া চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই লেখাপড়া বিসর্জন দেন তিনি। বাবা মেনে নিতে পারেননি। তিনি নিজে মাছ ধরে উপার্জন করেন। ভেবেছিলেন ছেলে লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কিন্তু কোথায় কী? ক্রিকেট ছাড়া কিছুই বোঝেন না তিনি। তাই হাজার বাধা সত্ত্বেও খেলা চালিয়ে যান মদুশঙ্ক।
২০২০ সালে শ্রীলঙ্কার হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সুযোগ পান মদুশঙ্ক। নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেন তিনি। সেই বছরই সুযোগ পান লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে। ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন মদুশঙ্ক। ২০২০ সালেই শ্রীলঙ্কার টেস্ট দলে সুযোগ পান এই বাঁ হাতি বোলার। তার পর থেকে বেশ কয়েকটি টেস্ট সিরিজে দলে থেকেছেন তিনি। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত অভিষেক হয়নি তাঁর।
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা এ দলের হয়ে লিস্ট-এ ক্রিকেটে অভিষেক হয় মদুশঙ্কের। এই বছর এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পান তিনি। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে অভিষেক হয় তাঁর। প্রথম ম্যাচেই ৩৬ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন তিনি। সেই ম্যাচ আট উইকেটে জেতে আফগানিস্তান। অর্থাৎ, মদুশঙ্ক ছাড়া শ্রীলঙ্কার আর কোনও বোলার উইকেট পাননি। পরের ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২৬ রান দিয়ে এক উইকেট নেন তিনি। সুপার ফোর-এর প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে উইকেট পাননি মদুশঙ্ক।
সুপার ফোর-এর দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠলেন মদুশঙ্ক। প্রথম ওভার থেকেই দেখে মনে হচ্ছিল তাঁর বল খেলতে সমস্যা হচ্ছে ভারতীয় ব্যাটারদের। পিচ থেকে দু’দিকে বল সুইং করাতে পারেন মদুশঙ্ক। সেটাই করছিলেন। ম্যাচের তৃতীয় ওভারে মদুশঙ্কের ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বল বুঝতে পারেননি কোহলী। মিড উইকেটের দিকে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। নিজের শেষ ওভারে জোড়া উইকেট নেন মদুশঙ্ক। প্রথমে হুডা, তার পর পন্থকে সাজঘরে ফেরান তিনি। শেষ পর্যন্ত চার ওভারে ২৪ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন তিনি।
মদুশঙ্কের বাবা এখন তাঁকে আর বকাবকি করেন না। ছেলে দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়ার পর থেকে তিনিও ক্রিকেটের ভক্ত হয়ে গিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার প্রতিটি ম্যাচ টেলিভিশনে দেখেন। মঙ্গলবার দেশের বাড়িতে বসে কোহলীর আউট হওয়াও নিশ্চয় দেখেছেন তিনি। দেখেছেন কী ভাবে মাত্র চার ম্যাচেই দলের সেরা বোলার হয়ে উঠেছেন তাঁর ছেলে।