বন্ধুত্ব: মাঠে দেখা যেতে পারে মুকেশ-আকাশ জুটিকে। —ফাইল চিত্র।
ভারতীয় টেস্ট দলে যে দিন মুকেশ কুমারের অভিষেক হয়েছিল, সমাজমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে একটি ‘গল্প’ দিয়েছিলেন আকাশ দীপ। শনিবার প্রথম বারের মতো ভারতীয় টেস্ট দলে নাম ওঠে আকাশ দীপের। তাঁর সঙ্গে একটি ছবি সমাজমাধ্যমে তুলে ধরে মুকেশ লেখেন, ‘‘ভারতীয় দলে তোমাকে স্বাগত।’’
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ তিনটি টেস্টের দলে বাংলার দুই পেসার। মহম্মদ শামি চোট সারিয়ে ফিরে এলে প্রথম বারের মতো ভারতীয় টেস্ট দলের হয়ে খেলতেন বাংলার তিন পেসার।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ভারতীয় দলের হয়ে মুকেশকে সাফল্য পেতে দেখে চোখের কোণ ভিজে এসেছিল আকাশের। মুকেশ শুধুমাত্র তাঁর সতীর্থ নন। নিজের দাদার মতো আগলে রাখেন আকাশকে। কোনও সমস্যা হলে আকাশ প্রথম ফোনটি করেন মুকেশকেই। দু’জনের দাপটে শেষ তিন বছরে দু’বার ফাইনাল ও এক বার সেমিফাইনাল খেলেছিল বাংলা। চলতি মরসুমে মুকেশ ভারতীয় দলে। আকাশও খেলছিলেন ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে। তাই বাংলা শিবিরের পরবর্তী পর্বে যাওয়ার আশাও কমতে শুরু করেছে।
ভারতীয় দলে যখন আকাশের নাম প্রকাশিত হয়, তখন তিনি বাংলার হয়ে ম্যাচ খেলছিলেন তিরুঅনন্তপুরমে। লাঞ্চ বিরতির সময় তাঁকে এই সুখবর দেন কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল ও সৌরাশিস লাহিড়ী। দলের ভরাডুবির মাঝে এমন একটি খবর শুনে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারেননি। তবে মুকেশের সঙ্গে টেস্ট দলে থাকতে পেরে তিনি আপ্লুত। বলছিলেন, ‘‘এত দিন মুকেশ ভাইকে দেখতাম ভারতের জার্সিতে টেস্ট খেলতে। এ বার আমিও একই ড্রেসিংরুমে যোগ দেব। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখেছি টেস্ট খেলার। তবে শুধুমাত্র দলে সুযোগ পেয়ে উৎসবে মেতে উঠতে চাই না। ভারতীয় দলের হয়ে সাফল্য না পেলে খুশি হওয়ার কিছুই থাকবে না।’’
বাংলার হয়ে খেলার সময়ও মুকেশের কাছে প্রচুর পরামর্শ পেতেন। এ বার দেশের জার্সিতে দু’জনে একসঙ্গে খেলবেন। বলছিলেন, ‘‘ভিশন ২০২০-র দিনগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। তখন আমি আর মুকেশ ভাই বাংলা দলে সুযোগ পাব কি না, চিন্তা করতাম। মুকেশ ভাই বলত, নিজের কাজ করে যা। সুযোগ আসবেই। সেখান থেকে একসঙ্গে বাংলাকে সাফল্য এনে দেওয়া, দু’বার রানার্স হওয়া। এ বার দেশের জার্সিতে আরও উন্নতি করতে চাই। মুকেশ ভাই আমার পথপ্রদর্শক। টেস্টেও ওর সঙ্গে বোলিং ওপেন করতে চাই।’’
ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিরুদ্ধে তিনটি টেস্টে ১৩টি উইকেট পেয়েছেন আকাশ। পেসার হিসেবে তাঁরই সর্বোচ্চ উইকেট সেই সিরিজ়ে। বলছিলেন, ‘‘ভারতীয় পিচে প্রথাগত সুইংয়ে খুব একটা বেশি উইকেট আসে না। রিভার্স সুইংয়ে ধার বাড়াতে হয়েছে। তবে নতুন বলে দু’দিকে সুইং করাতে পারি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পেলে নিজের দক্ষতাকে মেলে ধরতে চাই।’’
বাংলার প্রাক্তন কোচ অরুণ লাল আকাশকে প্রথম সুযোগ দিয়েছিলেন বাংলা দলে। অশোক ডিন্ডাকে সরিয়ে তরুণ পেসারকে দলে এনেছিলেন। অরুণ কিন্তু বরাবরই মুকেশের চেয়ে বেশি এগিয়ে রাখেন আকাশকে। ২৭ বছরের এই পেসার গতির সঙ্গে সুইং করাতে পারেন। টানা ১৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় বল করার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। ভবিষ্যতে যা মুকেশের চেয়ে তাঁকে এগিয়ে দিতেই পারে।
উল্লসিত অরুণ সেই খবর শুনে বলছিলেন, ‘‘আকাশ নিজেও জানে না ওর মধ্যে কতটা প্রতিভা লুকিয়ে আছে। এখনও নিজের দক্ষতা সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল নয়। ওকে বুঝতে হবে, ও কতটা শক্তিশালী পেসার। ভারতীয় দলে ওর সুযোগ পাওয়ার খবর পেয়ে আমি মুগ্ধ।’’
রাজকোট টেস্টে যশপ্রীত বুমরা হয়তো বিশ্রাম নেবেন না। কিন্তু রাঁচী টেস্টে বিশ্রাম দেওয়া হতেও পারে অভিজ্ঞ পেসারকে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহরেই আকাশের টেস্ট অভিষেক হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।