(বাঁদিক থেকে) রাহুল দ্রাবিড় এবং রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।
এক দিনের বিশ্বকাপের জন্য ১৫ জনের দল ঘোষণা করল ভারত। কেমন হল সেই দল? চারটি প্রশ্ন তুলে দিল আনন্দবাজার অনলাইন।
দলে কেন নেই চহাল?
দলে রয়েছেন তিন স্পিনার কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাডেজা এবং অক্ষর পটেল। তিন জনেই বাঁহাতি স্পিনার। এর মধ্যে জাডেজা এবং অক্ষর একই ধাঁচের বোলার। যেহেতু ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ, সেই কারণে দলে এক জন লেগ স্পিনার থাকলে ভাল হত বলে মনে করা হচ্ছে। যুজবেন্দ্র চহাল দলে থাকলে বোলিংয়ে বৈচিত্র বাড়ত।
এশিয়া কাপের দলে অক্ষর রয়েছেন। কিন্তু তাঁকে খেলানো হয়নি। জাডেজা প্রথম একাদশে থাকবেনই। তাই একই ধরনের আরও এক জন বোলার শেষ পর্যন্ত ক’টি ম্যাচে খেলার সুযোগ পাবেন, তা বলা মুশকিল। সেই জায়গায় চহাল কার্যকরী হতেন।
যুজবেন্দ্র চহাল। —ফাইল চিত্র।
এক মত সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক বললেন, “ভারতীয় দলে চহালকে দরকার ছিল। প্রথম একাদশে তিন জন স্পিনার খেলাবে না তিন জন পেসার, সেটা অধিনায়কের সিদ্ধান্ত। কিন্তু ভারতের মাটিতে খেলা, সেখানে এক জন লেগ স্পিনারকে রাখা খুবই প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়। অক্ষরের জায়গায় চহালকে নেওয়া যেত বলে মনে হয় আমার।” তবে অন্য মতও রয়েছে। বাংলার সহকারী কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী দীর্ঘ দিন বাংলার স্পিন বিভাগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বললেন, “চাহাল অবশ্যই ভাল স্পিনার। সেটা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠতেই পারে না। কিন্তু ওর ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং ভাল নয়। দল নির্বাচনের সময় সেটা ওর বিপক্ষে গিয়েছে বলে মনে হয়।”
কেন বাদ অশ্বিন?
প্রশ্ন উঠছে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে দলে না নেওয়া নিয়েও। তাঁর মতো অভিজ্ঞ স্পিনারকে ঘরের মাঠে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে নামা কতটা ঠিক হবে? তিন বাঁহাতি স্পিনারের জায়গায় অশ্বিনের মতো একজন ডানহাতি থাকলে দলে ভারসাম্য থাকত বলেই মনে করা হচ্ছে। সৌরাশিস বললেন, “ভারতের সর্বকালের সেরা বোলারদের তালিকায় বেশ উপরের দিকে থাকবে অশ্বিন। ওর বোলিং নিয়ে তো প্রশ্ন উঠতেই পারে না। অশ্বিনকে অবশ্যই দলে রাখা উচিত ছিল। বিপক্ষে যদি বাঁহাতি ব্যাটার বেশি হয়, তখন কিন্তু তিন জন বাঁহাতি স্পিনার নিয়ে বিপদে পড়তে পারে ভারত। অশ্বিন থাকলে সেই সমস্যা হত না।”
আইসিসির ক্রমতালিকায় টেস্টে বিশ্বের এক নম্বর বোলার অশ্বিন। কিন্তু ঘটনা হল লাল বলের ক্রিকেটেও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাদ পড়তে হয় তাঁকে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যেমন নেওয়া হয়নি তাঁকে। যেখানে টেস্ট দলেই বাদ পড়তে হয় এক নম্বর বোলারকে, সেখানে বিশ্বকাপের দলে অশ্বিন কী করে থাকবেন! প্রশ্ন উঠছে, ক্রিকেটীয় যুক্তিতে কি বাদ পড়তে হল অশ্বিনকে? না কি তাঁর দলে জায়গা না পাওয়ার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে? অশ্বিন কিছু দিন আগে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভারতীয় দলে তাঁর কোনও বন্ধু নেই, সবাই সতীর্থ। পেশাদার ক্রিকেটে কেউ কারও বন্ধু হতে পারে না। অশ্বিনের এই মন্তব্য নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি তখন। পরে অশ্বিনকে আবার নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হয়েছিল। এই ঘটনার জেরেই কি বিশ্বকাপ দলে জায়গা হল না তাঁর?
রবিচন্দ্রন অশ্বিন। —ফাইল চিত্র।
অশ্বিন অবশ্য দল ঘোষণা হওয়ার পরে রোহিতদের শুভেচ্ছাই জানিয়েছেন। তিনি টুইট (এখন এক্স) করে লেখেন, “জমিয়ে খেল সকলে। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ সব সময় স্পেশাল। আমরা সকলে মিলে ওদের জন্য গলা ফাটাব। বিশ্বকাপ ঘরে নিয়ে আসবে ওরা।”
দলে কেন সূর্যকুমার?
এক দিনের ক্রিকেটে সূর্যকুমার যাদব এখনও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। কিন্তু বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আইসিসির ক্রমতালিকায় শীর্ষে রয়েছেন সূর্যকুমার। সেই যুক্তিতেই কি এক দিনের দলে জায়গা পেলেন তিনি? প্রাক্তন নির্বাচক সম্বরণ তেমনটাই মনে করছেন। তিনি বললেন, “সূর্যকুমার টি-টোয়েন্টিতে ভাল খেলছে। এটা ঠিক এক দিনের ক্রিকেটে ও এখনও সে ভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি। কিন্তু সাদা বলে খেলার অভিজ্ঞতা ওর রয়েছে। তাই সূর্যকে সুযোগ দিয়ে কোনও ভুল হয়নি।”
সূর্যকুমার যাদব। —ফাইল চিত্র।
রাহুল কেন সুযোগ পেলেন?
বিশ্বকাপের দলে রয়েছেন লোকেশ রাহুল। অথচ ভারতীয় দল এখন এশিয়া কাপে খেললেও রাহুল দলে ফিরতে পারেননি। তাঁর চোট রয়েছে। প্রথমে এশিয়া কাপের দলে তাঁকে রাখা হলেও হঠাৎ জানানো হয়, রাহুল গ্রুপ পর্বের ম্যাচে খেলতে পারবেন না। তাঁকে শুধু মাত্র সুপার ফোর পর্ব থেকে পাওয়া যাবে। সুপার ফোরে ভারতের প্রথম ম্যাচ রবিবার (১০ জুলাই) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ রাহুল আদৌ ম্যাচ ফিট কিনা, সেটা না দেখেই তাঁকে বিশ্বকাপের দলে নেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন নির্বাচক প্রণব রায় যদিও রাহুলকে দলে নেওয়ায় কোনও ভুল দেখছেন না। তিনি বললেন, “রাহুল অভিজ্ঞ। চোট সারিয়ে ফিরে কয়েকটা ম্যাচ খেললেই ফর্মে এসে যাবে। আমরা বিশ্বকাপের (২০০৩) দল বেছে নেওয়ার সময় এমন ক্রিকেটারদেরই প্রাধান্য দিয়েছিলাম, যারা ৬০-৭০টা ম্যাচ খেলেছে। বিশ্বকাপে ক্রিকেটারদের উপর বিরাট চাপ তৈরি হয়। অভিজ্ঞতা না থাকলে সেটা সামলানো মুশকিল।”
অন্য মতও রয়েছে। সৌরাশিস বললেন, “মানছি রাহুল অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, বড় নাম। কিন্তু চোট সারিয়ে ফেরার পর ও যদি রান না পায়, তখন বিশ্বকাপের দলে তাঁকে রাখা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠবে। এক জন ক্রিকেটার চোট সারিয়ে ফেরার পর তাঁকে সোজা বিশ্বকাপের দলে নিয়ে নেওয়া কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত, তা বলা কঠিন। তবে আশা করব ভারত যে দল নির্বাচন করেছে, তারা সকলেই ভাল খেলবে এবং বিশ্বকাপ জিতবে।”
লোকেশ রাহুল। —ফাইল চিত্র।
মঙ্গলবারই ছিল বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করার শেষ দিন। ফলে এরকম হতে পারে, রাহুল ফিট কিনা, তা দেখে নেওয়ার সময় পায়নি বোর্ড। আপাতত তাঁকে দলে নেওয়া হয়েছে। যদি ফিটনেস পরীক্ষায় পাস করতে না পারেন, তা হলে হয়তো তাঁকে বাদ পড়তে হবে।
যে ১৫ জনের দল বিশ্বকাপের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, তা প্রাথমিক দল। ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই দলে বদল করা যাবে। চূড়ান্ত দল ঘোষণা হবে সেই দিন। এর মাঝে ভারত এশিয়া কাপ খেলছে। এর পর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি এক দিনের ম্যাচ খেলবে। এশিয়া কাপের দলে যে ১৭ জন রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই বিশ্বকাপের ১৫ জনের দল বেছে নেওয়া হয়েছে।
ভারতের ১৫ সদস্যের দল: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, শুভমন গিল, শ্রেয়স আয়ার, সূর্যকুমার যাদব, লোকেশ রাহুল, ঈশান কিশন, হার্দিক পাণ্ড্য (সহ-অধিনায়ক), রবীন্দ্র জাডেজা, অক্ষর পটেল, শার্দূল ঠাকুর, যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সামি, মহম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদব।