Football

প্যাড পরে পরীক্ষার প্রস্তুতি

চুনীদা খুব ভাল সুইং বোলার ছিলেন এটা অনেকেই জানেন। কতটা ভাল ছিল, একটা উদাহরণ দিই।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২০ ০৪:৩৬
Share:

সাধনা: খেলার মতো কর্মজীবনেও সফল ছিলেন চুনী। ফাইল চিত্র

খুব সম্ভবত ষাট দশকের মাঝামাঝি হবে। আমার বাড়ি থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ঢিল ছোড়া দূরত্বে। যাদবপুরের মাঠে তখন কলকাতার অনেক ক্লাব খেলতে আসত। ওখানে আমি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে রাম বাহাদুরকে ক্রিকেট খেলতে দেখি। সেটা অবশ্য শখের। ওখানেই প্রথম দেখেছিলাম সুবিমল গোস্বামীকে। যাঁকে সবাই চেনে চুনী গোস্বামী বলে।

Advertisement

চুনীদা খুব ভাল সুইং বোলার ছিলেন এটা অনেকেই জানেন। কতটা ভাল ছিল, একটা উদাহরণ দিই। সত্তর দশকের শুরুর দিকে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে মোহনবাগানে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি। যাদবপুরের একটা ম্যাচে ব্যাটসম্যানকে পরপর তিনটে আউটসুইং করলেন চুনীদা। ব্যাটসম্যান বলগুলো ছেড়ে দিল। চতুর্থ বলটাও ছাড়ল। কিন্তু সেটা ছিল ইনসুইং। ঢুকে এসে স্টাম্প ছিটকে দিল ব্যাটসম্যানের। এ রকমই নিয়ন্ত্রণ ছিল চুনীদার।

তখন মোহনবাগানের সচিব অশোক ঘোষ। আমি, শ্যামসুন্দর মিত্র, চুনীদা তখন মোহনবাগানে। চুনীদার সতীর্থ হলেও ওঁর মুখ থেকে নিজের খেলার কাহিনি প্রায় শুনিনি বললেই চলে। যা শুনতাম, চুনীদার দাদা মানিক গোস্বামীর মুখ থেকে। এক বার চুনীদা মোহনবাগানের হয়ে রোভার্স খেলে কলকাতায় ফিরেছেন। হাওড়া স্টেশনে চলে যান মানিকদা। সেখানে চুনীদার কাছ থেকে ফুটবল শু-টা নিয়ে ক্রিকেট শু হাতে তুলে দেন। স্টেশন থেকেই ফুটবলার থেকে ক্রিকেটার হয়ে চুনী গোস্বামী আর একটা ট্রেন চেপে ওড়িশার বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফি খেলতে চলে যান! কর্মজীবনে সফল ছিলেন চুনীদা। তার কারণ অধ্যবসায় এবং সেখানেও নিজের সেরাটা দেওয়া। একটা ঘটনার কথা বলছি। মোহনবাগান-বিএনআর ম্যাচ চলছে ইডেনে। আমি পাঁচ নম্বরে নামব, চুনীদা ছ’নম্বরে। হঠাৎ দেখলাম, প্যাড পরা চুনীদা একটা খাতা পড়তে পড়তে পায়চারি করছেন। আমি প্রশ্ন করাতে বললেন, ‘‘ব্যাঙ্কিং পরীক্ষা আছে, তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’ আমি তো অবাক। ক্রিকেট ম্যাচ চলছে, আর তার মাঝে পড়াশোনা? চুনীদা বলেছিলেন, ‘‘কিছু ভাবিস না। আমি এটাও সামলে দেব, ওটাও সামলে দেব।’’ দিয়েওছিলেন।

Advertisement

খেলোয়াড় হিসেবে চুনীদা কতটা দক্ষ ছিলেন, তা ওঁর নেট প্র্যাক্টিস দেখে আঁচ পেয়েছিলাম। বরুণ বর্মণ তখন দুরন্ত বল করছে। স্পিডোমিটার ছিল না ঠিকই, কিন্তু বুঝতে পারতাম ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে বল করত বরুণ। সেই বরুণকে নেটে খেলার সময় চুনীদা বলত, ‘বাউন্সার মার আমাকে।’ বরুণ একটার পর একটা বাউন্সার করলেও কিন্তু চুনীদাকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারেনি। চুনীদার নেতৃত্বে বাংলা রঞ্জি ফাইনাল খেলেছিল ১৯৭১-’৭২ মরসুমে। ফাইনালে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জিততে পারেনি বাংলা। কিন্তু হেরে যাননি চুনীদাও।

আরও পড়ুন: ন’টার সময় ধাবা, এই প্রথম কিছু খোলা পেলাম...

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement