যুদ্ধজয়ের হাসি।
পিঙ্কি প্রামাণিক পুরুষ নন, কার্যত জানিয়ে দিল হাইকোর্ট।
দেশের অন্যতম নামী অ্যাথলিট পিঙ্কি পুরুষ না মেয়ে, না কি উভলিঙ্গ, তা নিয়ে গত সাতাশ মাস ধরে চলছিল বিতর্ক। তারই অবসান হয়ে গেল শুক্রবার। এশিয়াডে সোনাজয়ী মেয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ খারিজ করে দিল আদালত। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার শুক্রবার যে রায় দিয়েছেন তার কপি এখনও হাতে পাননি পিঙ্কির অন্যতম আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত। তবে তিনি বললেন, “ধর্ষণ করার জন্য শরীরের যা থাকা দরকার, তা পিঙ্কির নেই। ডাক্তাররা সেটা পরীক্ষা করে রায় দিয়েছেন। তার ভিত্তিতেই ‘পিঙ্কি পুরুষ নন’ রায় দিয়েছে আদালত।” তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ খারিজ হয়ে যাওয়ার পর উচ্ছ্বসিত রেলের টিকিট পরীক্ষক পিঙ্কি বললেন, “যারা আমার বিরুদ্ধে এত বড় চক্রান্ত করেছিল তাদের শাস্তির জন্য এ বার আদালতে যাব। ওরা শাস্তি পেলেই আমি শান্তি পাব। সব বোঝা নামবে।”
তেঘরিয়ার বিদিশাপল্লির যে বাড়িতে পিঙ্কি থাকেন, সেখানেই তাঁর সঙ্গে থাকতেন অনামিকা আচার্য। পিঙ্কিই তাঁকে বাড়িতে কাজকর্মের জন্য এনেছিলেন। বেশ কয়েক বছর এক সঙ্গে থাকার পর ২০১২ সালের জুনে অনামিকা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পিঙ্কির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান থানায়। অনামিকা দাবি করেন, “পিঙ্কি মেয়ে নয়, পুরুষ। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত আমাকে ধর্ষণ করেছে ও। শারীরিক নির্যাতনও করেছে। এখন সব কিছু করার পর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।” এই অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ পিঙ্কিকে পুরুষ ধরে নিয়ে
গ্রেফতার করে। তাঁকে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে লিঙ্গ পরীক্ষাও করা হয়। পিঙ্কি পুরুষ-- জানায় ওই নার্সিংহোম। ফলে জেলে যেতে হয় পিঙ্কিকে। মেয়েদের সেলে নয়, এশীয় পর্যায়ে মেয়েদের ইভেন্টে ৩৫টি সোনার পদক জেতা অ্যাথলিটকে রাখা হয় পুরুষদের সেলে। তা নিয়ে তখন বিতর্কে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। কেন নিয়ম মেনে সরকারি হাসপাতালে পিঙ্কিকে পরীক্ষা করা হয়নি, সেই অভিযোগও ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। ডাকাবুকো পিঙ্কি এ দিন বাড়ি থেকে বলছিলেন, “ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে আদালতে যাব ঠিক করেছি। যে ভাবে আমাকে হেনস্থা করা হয়েছিল তখন, কোনও দিন ভুলব না। কত দিন যে আদালতে গিয়ে বসে থাকতে হয়েছে।”
মানভূমের বাঘমুন্ডি গ্রামের মেয়ে পিঙ্কি বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। একবার ব্যাগে অস্ত্র রাখার দায়ে তিনি সমস্যায় পড়েছিলেন। জোরে বাইক চালানো নিয়ে পাড়ায় সমস্যা হয়েছিল তাঁর। ভারতীয় শিবিরে থাকার সময়ও তাঁকে নিয়ে বারবার নানা অভিযোগ করেছেন সতীর্থরা। পিঙ্কি পুরুষ, এই অভিযোগ ওঠার পর তাঁর এশিয়াড, কমনওয়েলথ-সহ সব আন্তর্জাতিক পদক কেড়ে নেওয়ার দাবি তুলেছিল বিভিন্ন মহল। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে সব বিতর্কেরই অবসান হচ্ছে বলে মনে করেন পিঙ্কি। বললেন, “মুক্তির আনন্দ হচ্ছে। তবে এখনও আমার আরও অনেক কিছু প্রমাণ করা বাকি আছে।”