ধাক্কা: করোনা-অতিমারির জেরে বাতিল ঐতিহ্যশালী উইম্বলডনও। দেখা যাবে না অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাবের কোর্টে উন্মাদনার এই দৃশ্য। ফাইল চিত্র
পঁচাত্তর বছরে যা হয়নি এ বার তাই হল। করোনাভাইরাসের জন্য এ মরসুমের উইম্বলডন বাতিল হয়ে গেল। বুধবার সরকারি ভাবে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রথম বার বাতিল হয়ে গেল ঐতিহ্যশালী এই প্রতিযোগিতা।
উইম্বলডন শুরু হওয়ার কথা ছিল ২৯ জুন। কিন্তু করোনা-অতিমারির জেরে প্রতিযোগিতা বাতিল করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না আয়োজক অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাবের। ‘‘এই সিদ্ধান্তটা আমরা হাল্কা ভাবে নিইনি। আমরা জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্বযুদ্ধ ছাড়া যে উইম্বলডন আয়োজনে কখনও ব্যাঘাত ঘটেনি, সেটা আমাদের মাথায় ছিল। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমাদের মনে হয়েছে প্রতিযোগিতা বাতিল করাটাই ঠিক সিদ্ধান্ত,’’ বলেছেন অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাবের চেয়ারম্যান ইয়ান হিউইট। তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমরা এখন চেষ্টা করব আমাদের সাধ্যমতো স্থানীয় মানুষদের এই বিপদে সাহায্য করতে।’’ উইম্বলডনই শুধু নয়, ঘাসের কোর্টের মরসুমই বাতিল হয়ে গেল। ১৩ জুলাইয়ের আগে বিশ্বের কোথাও পেশাদার টেনিস হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
উইম্বলডন বাতিল হওয়ার অর্থ আট বারের চ্যাম্পিয়ন রজার ফেডেরার এবং সাত বারের সেরা সেরিনা উইলিয়ামসকে হয়তো আর ঘাসের কোর্টের এই গ্র্যান্ড স্ল্যামে দেখা যাবে না। কারণ, ২০২১ সালে ফেডেরার এবং সেরিনার বয়স প্রায় ৪০ বছরের কাছাকাছি হয়ে যাবে। সেরিনা গত বার ফাইনালে সিমোনা হালেপের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক সেরিনা আর একটি জিতলেই মার্গারেট কোর্টের নজির স্পর্শ করবেন। এ বার অন্তত বিশ্বখ্যাত সেন্টার কোর্টে সেই রেকর্ড গড়ার সুযোগ তিনি পাবেন না।
উইম্বলডন বাতিল হয়ে যাওয়ার খবর শুনে দুই তারকাই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। ফেডেরার টুইটারে লিখেছেন, ‘‘বিধ্বস্ত লাগছে।’’ সেরিনার টুইট, ‘‘খবরটা শুনে সন্ত্রস্ত।’’ গত বারের চ্যাম্পিয়ন হালেপের প্রতিক্রিয়া, ‘‘উইম্বলডন এ বার আয়োজিত হবে না শুনে খুব খারাপ লাগছে। গত বারের ফাইনালটা আমার জীবনের অন্যতম আনন্দের মুহূর্ত হয়ে থাকবে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা টেনিসের থেকেও আরও বড় একটা লড়াই করছি। উইম্বলডন ফিরবে। আমাকে খেতাব রক্ষার লড়াইয়ে নামার জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।’’ ছ’বারের চ্যাম্পিয়ন মার্কিন কিংবদন্তি বিলি জিন কিং আয়োজকদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘‘কমিটির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছি। এই মুহূর্তে করোনা-অতিমারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর উপরে আমাদের জোর দিতে হবে। ১৯৬১ থেকে প্রতি বার উইম্বলডনে যাচ্ছি। এ বারের প্রতিযোগিতা না-হওয়ার অভাব বোধ করব।’’ ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জাও টুইটারে জানিয়েছেন, তাঁর খারাপ লাগছে প্রতিযোগিতা বাতিল হয়ে যাওয়ায়।
উইম্বলডন যে পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়দের কতটা প্রিয় সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন পেত্রা কিতোভাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, ‘‘নিশ্চিত ভাবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নেওয়া সহজ ছিল না। উইম্বলডন আমার কাছে শুধু বিশেষ একটা প্রতিযোগিতাই নয়, ইতিহাসের অংশও। এ বার উইম্বলডন বাতিল হয়ে যাওয়া মানে এ মরসুমের টেনিস সূচিতে বিরাট একটা ফাঁক তৈরি হওয়া। সাদা পোশাকে ঘাসের কোর্টে নামার আনন্দটা এ বার পাব না। সবাই, বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন।’’ গত বার এই উইম্বলডনেই টেনিস বিশ্বকে দুরন্ত পারফরম্যান্সে চমকে দেওয়া মার্কিন তরুণী কোকো গফের টুইট, ‘‘খুব অভাব বোধ করব এ বার উইম্বলডনে না খেলতে পারার। সবাই খুব সাবধানে থাকুন।’’