যোদ্ধা: মুখাবরণ পরে যোগিন্দর সচেতন করছেন সকলকে। টুইটার
প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ ওভার বল করতে এসেছিলেন তিনি। ছয় বলে ১৩ রান প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানের। ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল এক উইকেটের। সেই সময়ের তরুণ অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ভাবছিলেন, কার হাতে শেষ ওভারের দায়িত্ব তুলে দেবেন? উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া পাক অধিনায়ক মিসবা উল হক তখন বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন। হরিয়ানার তরুণ মিডিয়াম পেসার যোগিন্দর শর্মার হাতে বিশ্বকাপ জেতার সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেন ধোনি। প্রথম দুই বলে সাত রান দিয়ে বসেন তিনি। চার বলে দরকার ছিল ছয় রানের। যোগিন্দরের বল স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে বসেন মিসবা। যা তালুবন্দি করেন শ্রীসন্থ। উৎসব শুরু হয়ে যায় ওয়ান্ডারার্সে।
প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানোর সেই নায়ক এখন খেলতে নেমেছেন নতুন ম্যাচে। দেশকে করোনভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কাজে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। বিশ্বকাপে সাফল্যের পরেই হরিয়ানা পুলিশে চাকরি পেয়েছিলে যোগিন্দর। এখনও সেখানেই কর্মরত। পুলিশের ভূমিকায় দেশকে করোনার থারা থেকে বাঁচানোর তাগিদে সকাল ছ’টা থেকে কাজ শুরু করছেন তিনি। রাস্তায় মানুষ দেখলে তাঁদের আবার বাড়িতে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। কোনও ধরনের সমস্যা দেখলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এমনকি মাস্ক ও স্যানিটাইজারও বিতরণ করছেন কখনও-সখনও। অতিরিক্ত জটলা দেখলে সেই ভিড় সরানোর চেষ্টা করছেন ডানহাতি মিডিয়াম পেসার।
ক্রিকেটার হিসেবে দেশকে সম্মান এনে দেওয়ার পরে এই চ্যালেঞ্জটা কতটা কঠিন? শুক্রবার আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যোগিন্দর বললেন, “২০০৭ থেকেই পুলিশে চাকরি করছি। ডিএসপি হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা অন্য রকম। করোনা-আতঙ্কের মধ্যে এই চ্যালেঞ্জটা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।” যোগ করলেন, “পুলিশ হিসেবে প্রচুর দায়িত্ব সামলাতে হয়। সাধারণ মানুষকে লকডাউনের অর্থ বোঝাতেই বেশির ভাগ সময় চলে যাচ্ছে। অনেকেই বাজারে ভিড় করছেন পণ্যসামগ্রী কেনার জন্য। রাস্তায় যে কোনও ভাবেই ভিড় করা উচিত নয় এই সময়ে, সেটা অনেকেই বুঝতে পারছেন না।”
তবে যোগিন্দর এ-ও জানালেন, লকডাউনের জন্য অপরাধের মাত্রা অনেক কমে গিয়েছে। বলছিলেন, “অপরাধের মাত্রা অনেক কম। সবাই আসলে এই পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে গিয়েছে। যারা এই ধরনের অসামাজিক কাজকর্ম করেন, তারাও বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে না। কিন্তু সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ এই জরুরি ব্যবস্থার গুরুত্ব এখনও বুঝতে পারছেন না।” যোগ করলেন, “অনেক বাড়িতেই বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি। সেই বাড়িতে পণ্যসামগ্রী ও ওষুধ আমরাই পৌঁছে দিচ্ছি। এমনিতে ওষুধ অথবা খাদ্যদ্রব্য কিনতে বেরোলে আমরা ছাড় দিচ্ছি। কিন্তু যাঁরা ঘুরতে বেরোবে, তাঁদের কোনও ভাবেই ছাড়া যাবে না। আমরাও ক্ষতিপূরণ চাইছি তাঁদের থেকে।”
যোগিন্দর এখনও ২০০৭ সালের সেই ঐতিহাসিক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রসঙ্গ উঠলেই স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন। তাঁর কথায়, “সেই স্মৃতি কি কখনও ভোলা যায়? যত দিন বেঁচে থাকব, সেই মুহূর্তই আমার জীবনের সেরা হয়ে থাকবে। সেই ওভারের আগে পর্যন্ত ভারতের হয়ে খেললেও সমর্থকদের মনে জায়গা করতে পারিনি। কিন্তু মিসবাকে আউট করার পরে বুঝতে পেরেছিলাম, ক্রিকেট সমর্থকেরা এর পরে আমাকে চিনতে আর ভুল করবেন না।”
কোন পরিস্থিতি আপনার জীবনের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ? বিশ্বকাপের শেষ ওভার, নাকি করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াই। যোগিন্দরের উত্তর, “যত বড়ই ম্যাচ হোক, সেখানে তো প্রাণ হারানোর কোনও আশঙ্কা ছিল না। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা নিয়ে তো তেমন স্পষ্ট ধারণা নেই। এই রোগের প্রতিষেধকও এখনও বেরোয়নি। তাই এই পরিস্থিতিটা দেশবাসীর কাছে কঠিনতম চ্যালেঞ্জ। তাই সকলের কাছে একটাই অনুরোধ বারবার করে চলেছি, বাড়িতে থাকুন। দয়া করে বেরোবেন না। এ ভাবেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে।”